স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর পল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষের ঘটনার ভিডিও ও ছবি থেকে সনাক্ত করে ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, মামলার তদন্ত-গোয়েন্দা তথ্য ও আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে- যারা এই হামলার পরিকল্পনা করেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল পুলিশকে উসকানি দিয়ে পুলিশকে অ্যাকশনে যেতে বাধ্য করা। যেন তারা নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের অ্যাকশনের ও লাটিচার্জের ভিডিও দেখিয়ে বিভিন্ন মহলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে মনিরুল ইসলাম দাবি করেন, সোমবার রাজধানীর সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা হলেন- মো. এইচ কে হোসেন আলী, সোহাগ ভূঁইয়া, মো. আব্বাস আলী, মো. আশরাফুল ইসলাম রবিন, জাকির হোসেন উজ্জ্বল ও মাহবুবুল আলম।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আসামিদের মধ্যে হোসেন আলী হেলমেট পরে শার্ট খুলে পুলিশের গাড়ির ওপর উঠে লাফিয়েছিল, সোহাগ শার্ট খুলে লাঠি হাতে পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে, আব্বাস আলী গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে, আশরাফুল ইসলাম পুলিশের পিকআপ ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর হামলা করেছে। এ ছাড়াও উজ্জ্বল ও মাহবুবুল পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও সড়ক অবরোধ করেছে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, বড় নেতারা তাদের হেলমেট পরে যেতে বলে যাতে নাশকতার সময় কেউ তাদের সনাক্ত করতে না পারে। এ ছাড়া সেখানে আগে থেকেই লাঠিসোটা রাখা ছিল।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পুলিশ নির্বাচন কমিশনের আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে বাধ্য। সেদিন বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশ কি নির্বাচন কমিশনের ছিল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুলিশ সেদিন কোনো অ্যাকশনে যায়নি। এটা ঠিক যে পুলিশ বিভিন্ন কাজে নির্বাচন কমিশনের আদেশ নির্দেশ পালনে ন্যস্ত। কিন্তু সেদিন ঘটনাস্থলের আশপাশে অনেক পুলিশ আহত ছিল, তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কয়েকজন অবরুদ্ধ ছিল, তাৎক্ষণিকভাবে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ কোনো অ্যাকশনে যায়নি। ডিএমপির ৫-৭ মিনিটের মধ্যে সহস্রাধিক লোককে সরানোর সক্ষমতা আছে। পুলিশের অ্যাকশনের ইচ্ছা থাকলে তাদের হটিয়ে দেয়া সম্ভব ছিল। আমরা অসীম ধৈর্য ধরে কাজ করেছি।

ইকোনমিস্টের একটি রিপোর্টের লেখা হয়েছে- সংসদ নির্বাচনে বিএনপি জামায়াত নাশকতা করবে। তাদের ব্যাকআপ দেবে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কি তথ্য আছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মনিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বিশ্বাস ও প্রত্যাশা সব রাজনৈতিক দলের শুভবুদ্ধি উদয় হোক। কিন্তু কেউ যদি নাশকতা করার চেষ্টা করে, সে যেই হোক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। পল্টনের ঘটনায় আসামিরা ফেসবুকের অ্যাকাউন্টে ডিঅ্যাকটিভেটেড করেছিল, তবুও তারা পালাতে পারেনি। অপরাধ করে কেউ পালাতে পারবে না।

উল্লেখ্য, দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহের মধ্যেই বুধবার ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি ভাঙচুর করে জ্বালিয়ে দেয়া হয়।

এর আগে বুধবার রাতেই বিস্ফোরক ও বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, বিশেষ আইনে এবং বাংলাদেশ দণ্ডবিধি আইনে পল্টন থানায় মামলা তিনটি দায়ের করে পুলিশ। ২১ নম্বর মামলার বাদী হলেন পল্টন থানার এসআই সোমেন কুমার বড়ুয়া, ২২ নম্বর মামলার বাদী এসআই আল আমিন এবং ২৩ নম্বর মামলার বাদী এসআই শাহীন বাদশা। তিনটি মামলার এজহারে মোট ৪৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও সহস্রাধিক জনকে আসামি করা হয়েছে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০১৮)