বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও শুরু হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদেও ৩ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক রাস উৎসব। বুধবার ভোরে  হাজার-হাজার পূণ্যার্থী ও পর্যটকরা সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলের যেতে লোকালয় থেকে যাত্রা শুরু করেছে। আগামী ২৩ নভেম্বর ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে-সাথে দিনের প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে  রাস উৎসব। এই রাস উৎসবকে ঘিরে পূণ্যার্থী ও পর্যটদের নিরাপত্তাসহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের নিরাপত্তায় নৌবাহিনী, র‌্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড ও বন বিভাগ নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছে।  

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বলছে, বুধবার সকাল থেকে রাস উৎসবকে ঘিরে আগাত পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠবে সাগরদ্বীপ আলোরকোল। আলোরকোলে রাস উৎসবে আগতদের যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করছে। এর মধ্যে শরণখোলা রেঞ্জের বগী স্টেশন-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে আলোরকোল এবং শরণখোলা স্টেশসন-সুপতি স্টেশন ও শেলারচর হয়ে আলোরকোলে পৌঁছতে পারবেন পূণ্যার্থীরা। প্রত্যেক পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর ৩ দিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য ৫০টাকা, নিবন্ধিক ট্রলার ২ শত টাকা এবং অনিবন্ধিত ট্রলারে ৮ শত টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং বন ও বন্যপ্রাণি রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি নৌবাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরক্ষীরাও নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া, কন্ট্রোল রুমে স্বার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকির দায়িত্বে থাকবেন। এবার রাস উৎসবের নিয়মাবলীতে একটু ভিন্নতা আনা হয়েছে।

অন্যান্য বছরগুলোতে পূণ্যার্থীরা রাতের বেলায় রওনা হতো। কিন্তু এবার নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন কারণে ২১ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকেই যাত্রা শুরু হবে। তাছাড়া আলোরকোলে নারী পূণ্যার্র্থীদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা শেড ও পর্যাপ্ত টয়লেট তৈরী করা হয়েছে। ৩ দিনের এ রাস মেলায় প্রশাসন, বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অংশগ্রহনের কথা রয়েছে।

বঙ্গোপসাগরের কোলঘেসে গড়ে ওঠা দ্বীপ দুবলরা চর আলোরকোলে আড়াই শত বছরের অধীক সময় ধরে নভেম্বর মাসের রাস পূর্ণিমায় সনাতন হিন্দু ধর্মের লোকেরা এই রাস উৎসব পালন করে আসছে। প্রথম দিকে এই উৎসবের কোনো নিয়ন্ত্রন বা আইনী নিয়মনীতি মানা হতোনা।

পরবর্তীতে বন বিভাগের তত্বাবধানে এবং দুবলার মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে, জিয়াউদ্দিনের মৃত্যুর পর গত দুই বছর ধরে বন বিভাগের মাধ্যমেই এই উৎসব পালিত হচ্ছে। রাস উৎসবকে ঘিরে প্রতিবছর এখানে ঘটে দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক লোকের এক মিলনমেলা।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০১৮)