শরীয়তপুর প্রতিনিধি : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন লড়াইয়ে এগিয়ে রয়েছে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন অপু। গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং দলীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা যাচ্ছে অপুর মনোনয়ন প্রাপ্তি প্রায় চুড়ান্ত। আর এমন সংবাদ শরীয়তপুরের পালং-জাজিরায় পৌছলে আনন্দের বাধ ভাঙ্গা জোয়ারে উদ্বেলিত হয়ে উঠেছে অপুর লাখো ভক্ত।

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের জন্ম ইতিহাসে শরীয়তপুর সদর উপজেলা তথা পালং থেকে প্রথম বারের মত কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছিলেন ইকবাল হোসেন অপু। এর আগে পালং এর কোন লোক আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয কমিটিতে ঠাঁই করে নিতে পারেননি। অপুকে কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানীত সদস্য পদ প্রদান করায় ওই সময়ে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন শরীয়তপুরের অগনিত মানুষ। শুধু আওয়ামীলীগের রাজনীতি করেন এমন মানুষের বাইরেও ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শীরাও অপুর এই নেতা নির্বাচিত হওয়াকে দেখেছিলেন ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে। এখন আবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে পালং-জাজিরা নির্বাচনী এলাকা থেকে অপুকে নৌকা প্রতীতে মনোনয়ন দিতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা, এমন একটি খুশির সংবাদও এ অঞ্চলের অবহেলিত-উন্নয়ন বঞ্চিত মানুষের মধ্যে নতুন করে এক আশার আলো প্রজ্জলিত করছে।

এ বছর শরীয়তপুর-১ আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন অন্তত এক ডজন লোক। তাদের মধ্যে মূল আলোচনায় ছিলেন বর্তমান সাংসদ এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি,এম মোজাম্মেল হক ও কেন্দ্রীয় সদস্য ইকবাল হোসেন অপু। বি, এম মোজাম্মেল নবম ও দশম সংসদে টানা দুইবার সাংসদ নির্বাচিত হয়ে দশ বছরে তিনি সাধারণ ভোটার ও দলীয় ত্যাগী নেতা-কমীদের কাছ থেকে অনেক দুরে সড়ে যান। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই পরিবেষ্টিত হয়ে যান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী এবং সুবিধাবাদীদের দ্বারা। এমপি হওয়ার পর তিনি ২০০৯ সালের ১১ জানুয়ারী সাবেক শিবির নেতা ইউছুব আলীর প্যারাডো গাড়িতে চরে প্রথম বারের মত শরীয়তপুর এসে চরম বিতর্কের জন্ম দেন। মোজাম্মেল দ্বিতীয় বার ফেব্রুয়ারী মাসের ৭ তারিখে শরীয়তপুরে আসেন।

এবারও তিনি ইউছুব আলীর আমন্ত্রনে পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ গ্রহন করে। ১লা ফেব্রুয়ারী ২০০৯ তারিখ থেকে শরীয়তপুরের সাবেক এই শিবির নেতার হাত ধরে বি,এম মোজাম্মেল বিএনপি-জামাতের মালিকানাধীন পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোং লিমিটেড এর উপদেষ্টা পদে মোটা বেতনে চাকুরী গ্রহন করেন। এরপর থেকেই নির্বাচনী এলাকার সর্বত্র জামাত-বিএনপির লোকদের লালন করতে থাকেন তিনি। ক্রমশই দলের দীর্ঘ দিনের ত্যাগী ও পরীক্ষিত লোকেরা নিগৃহিত হতে থাকেন সাংসদ কর্তৃক।

২০০৮ সালের পর থেকে তার নিজ ইউনিয়ন বিলাশপুর একটি সন্ত্রাসের জনপদে রূপান্তরিত হয়। গত ১০ বছরে নির্বাচনী এলাকার জাজিরা তার নিজ উপজেলায় দলীয় হানাহানিতে নিহত হন অন্তত ৮/১০ ব্যক্তি। সাংসদের এক স্বজন অভিযোগ করেন, তার নিজ গ্রামের পাশে কলেজ প্রতিষ্ঠার নামে অন্তত ৪০ জন কৃষকের কাছ থেকে স্বল্প মূল্যে তাদের ফসলী জমি ক্রয় করে মোজাম্মেল নিজে ও তার স্ত্রীর নামে দলিল করে নেন। কিন্তু গত ৭/৮ বছরেও সেখানে কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়নি। গত ইউপি নির্বাচনের আগে বিভিন্ন ইউনিয়নের সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের কাছ থেকে জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের বহুতল অফিস ভবন নির্মানের কথা বলে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে তা আত্মসাৎ করেছেন এম,পি মোজাম্মেল।

বি,এম মোজাম্মেল জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করিয়ে নেন বিতর্কিতদের নিয়ে। যারা গত ৩০ বছর ধরে আ‘লীগকে টিকিয়ে রেখেছেন এমন লোকদের বাদ দিয়ে তার অনুগত ও জনবিচ্ছিন্নদের হাতে দলীয় নেতৃত্ব তুলে দেন। জেলা আওয়ামীলীগের কমিটিতেও আওয়ামী বিরোধীদের গুরুত্বপূর্ন পদ পাইয়ে দেন মোজাম্মেল। জেলা আ‘লীগের সাবেক সভাপতি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সাবেক দলীয় সংসদ সদস্য, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এমন অনেক নেতা-কর্মীকে কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত না করতে ভূমিকা রাখেন বলে অভিযোগ মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে। গত ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে তার নির্বাচনী এলাকায় অন্তত ১৫টি ইউনিয়নে দলীয় ত্যাগী লোকদের বাদ দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চিহ্নিত বিএনপি-জামাতের লোকদের দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে এমপি মোজাম্মেল এর বিরুদ্ধে। শুধু তাই নয়, অনেক ইউনিয়নে নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলীয় প্রার্থীদের পরাজিত করতে সহায়তা করেন তিনি। গত ১০ বছরে সরকারি বরাদ্দের টি,আর/কাবিখার শত শত প্রকল্পের কোন কাজ না করে কোটি কোটি টাকা তুলে দেন তার অনুসারীদের হাতে।

ক্ষমতার দাপট খাটিয়ে এমপি মোজাম্মেলের ভাগ্নে-ভাতিজারা নৌ চাঁদাবাজি ও বিদ্যুৎ খাত থেকে চাঁদা তুলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় (এসব বিষয়ে ইতিপূর্বে গণমাধ্যমে ব্যাপক সংবাদ প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে এমনকি মামলাও হয়েছে)। ২০১৫সালের পৌরসভা নির্বাচনে শরীয়তপুর সদর পৌরসভায় নৌকার প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গোপনে কাজ করেন সাংসদ মোজাম্মেল ও তার অনুসারীরা (এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগের সভায় রেজুলেশন করে তার বিবরনি দলীয় প্রধানের কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল)।

২০১৩ সালে জাতীয় শোক দিবসের একটি সভায় সাবেক এক শিবির নেতাসহ অর্ধ শতাধিক জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মীকে আওয়ামীলীগে যোগদান করিয়ে তোপের মুখে পরেন মোজাম্মেল হক। গত স্বাধীনতা দিবসের একটি সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধাদের অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। শত শত মুক্তিযোদ্ধার মাঝে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে অমার্জণীয় ভাষায় গালি দেন এম,পি মোজাম্মেল (এ নিয়ে শরীয়তপুর ও ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ-মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয় ও গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের একাংশ তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করেন)। অতি সম্প্রতি শরীয়তপুরের একজন প্রতিষ্ঠিত সংবাদ কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে মুঠোফোনে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি প্রদান করেন মোজাম্মেল হক।

বি, এম মোজাম্মেল হকের এতসব সংগঠন বিরোধী কর্মকান্ডের তথ্য দলীয় হাই কমান্ডের কাছে পৌছে যাওয়ায় এবছর তার মনোনয়ন না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রকট হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে দলীয় একাধিক সূত্র থেকে। ফলে ইকবাল হোসেন অপুই মনোয়ন দৌড়ে এগিয়ে গেছেন বলে জানা যাচ্ছে।

এদিকে, ইকবাল হোসনে অপু এক সময় ছাত্রলীগের সারা জাগানো নেতা ছিলেন। শেখ হাসিনা কর্তৃক প্রদত্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি বার বার মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন। ৮০’র দশকের শেষ ভাগ থেকে কখনো আন্ত-দলীয় কোন্দলের শিকার হয়ে, কখনো বিএনপি-জামাতের টার্গেটে পরে আবার কখনো এরশাদ-খালেদার লেলিয়ে দেয়া আইন শৃংখলা বাহিনীর অস্ত্রের নিশানা থেকে বেঁচে এসেছেন অপু। অপু এক মৃত্যুঞ্জয়ী সাবেক ছাত্রনেতার নাম। অপু ছাত্রলীগের সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসের এক জীবন্ত কিংবদন্তী।

তৃণমূল থেকেই রাজনৈতিক উত্থান হয়েছে ইকবাল হোসেন অপুর। অপুর জন্মস্থান শরীয়তপুর সদর উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের রনখোলা গ্রামের ঐতিহ্যবাহি মিয়া পরিবারে। তার বাবা এ্যাডভোকেট সুলতান হোসেন মিয়া আইন পেশার কারনে ৫০ এর দশক থেকে মাদারীপুরে স্যাটেল্ট ছিলেন। সেখানেই অপুর বেড়ে উঠা। অপুর শৈশব, কৈশরের সকল স্মৃতিই জরিয়ে আছে আড়িঁয়াল খাঁ নদের বাঁকে বাঁকে। ৫৪ সাল থেকেই হক-ভাসানী-মুজিবের হাত ধরে অপুর বাবা সুলতান হোসেন মিয়ার আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে হাতেখড়ি। এক সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর এতদাঞ্চলের হাতে গোনা কয়েকজন সহচরের মধ্যে ছিলেন একজন। পিতার পদাঙ্ক অনুসরন করে অপু পারিবারিকভাবেই অর্থাৎ জন্মগত উত্তরাধিকার নিয়েই আওয়ামী রাজনীতির দীক্ষা গ্রহণ করেন। স্কুল জীবনেই ছাত্রলীগের সকল মিছিল, শোভাযাত্রা, সভা , সমাবেশে অংশ গ্রহন করতে থাকেন।

১৯৮৪ সালে প্রথম বারের মত তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মাদারীপুর জেলা শাখার প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এরপর ১৯৮৭ সালে মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ইকবাল হোসেন অপু। মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি থাকাবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মাষ্টার্স শ্রেনীতে ভর্তি হন তিনি। তখন স্বৈরাচারি এরশাদ বিরোধী আন্দলোন তুঙ্গে। ছাত্র সমাজের ঐতিহাসিক দশ দফার সংগ্রাম আর এরশাদ হটাও আন্দোলনে সুদুর মাদারীপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত যুগান্তকারি ভূমিকা পালন করেন অপু। আশির দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে অপুদের পরিবার মাদারীপুর থেকে শরীয়তপুর শহরে স্থানান্তরিত হয়। তার বাবা সুলতান হোসেন মিয়াও শরীয়তপুরেই শুরু করেন তার আইন ব্যবসা। ওই সময় শরীয়তপুরে গোটা আওয়ামী

পরিবার ছিল ভয়ংকর স্বৈর শাসনের দাপটে ভীত সন্ত্রস্ত। অপুর শরীয়তপুরে আবির্ভাব এবং আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখায় ঝিমিয়ে পরা সংগঠনে প্রান সঞ্চারিত হতে থাকে।

৭৫ ট্রাজেডির পর থেকেই শরীয়তপুরে আওয়ামীলীগের চরম দূর্দিন অতিবাহিত হচ্ছিল। ১৯৮৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার পর দল আরো অধিকতরভাবে ঝিমিয়ে পরে। একদিকে দলীয় একটি বৃহৎ অংশ আওয়ামীলীগ থেকে বেড়িয়ে গিয়ে বাকশাল গঠন যেভাবে সংগঠনকে দুর্বল করে তোলে, অপর দিকে এরশাদ সরকারের পেটুয়া বাহিনীর নির্মম অত্যাচারে আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মীরা যারপরনেই হতবিহবল হয়ে পরে। এমনি একটি ক্রান্তি লগ্নে ১৯৮৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ইকবাল হোসেন অপু শরীয়তপুর জেলা শহরে তার রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে করেন। তখন তিনি সর্ব প্রথম সরোয়ার হোসেন বাবুল তালুকদার ও মাহবুবুর রহমান চুন্নু মাঝিকে তার একান্ত সহচর হিসেবে বেছে নেন।

এরপর বাবুল খান, মন্টু খানসহ শহরের অনেক যুবক তরুন অপুর সাহচার্য্যে এসে জাতীয় পার্টির রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে ধীরে ধীরে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে থাকেন। তখন থেকে বাবুল তালুকদার ছাত্রলীগ এবং চুন্নু মাঝি ও বাবুল খান যুবলীগের রাজনীতিতে স্বক্রীয় হয়ে উঠেন। ফলে, ইকবাল হোসেন অপুর শরীয়তপুরের রাজনীতি অনেকটা গতিশীলতা পায়।

স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের মাঝেই ১৯৮৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী অনুষ্ঠিত হয় ডাকসুর নির্বাচন। সেই নির্বাচনে ডাকসু প্যানেলে সুলতান-মোশতাক পরিষদ ও হল সংসদ নির্বাচনে বিশেষ করে জহুরুল হক হল সংসদে চুন্ন-রাজা পরিষদের বিজয়ের পেছনে অনেক শ্রম ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করেন অপু। ৯০ সালে জহুরুল হক হলের ভিপি শহিদুল ইসলাম চুন্নুকে ছাত্রদল-পুলিশ মিলে হল গেইটের কাছাকাছি গুলি করে হত্যা করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিচক্ষণ ও সাহসী ছাত্রলীগ নেতা চুন্নু নিহত হবার পরে গোটা ক্যাম্পাস জুরে ভীতি নেমে আসে ছাত্রলীগ শিবিরে। তখন থেকেই ঢাবি ক্যাম্পাসে সময়ের এক সাহসী যোদ্ধা হিসেবে আবির্ভাব ঘটে ইকবাল হোসেন অপু নামের ছিপ ছিপে এক তরুনের। অপু তার কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতার কারনে ক্রমশই নৈকট্য লাভ করতে থাকেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী শেখ হাসিনার।

নব্বই দশকের শেষ প্রহরে এরশাদের পতন হলে ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে সারা দেশে শুরু হয় ছাত্রলীগের উপর কঠিন দমন-পীড়ন। সরকারি মদদে ছাত্রলীগকে বিভিন্ন অংশে ভাগ করার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কখনো মন্টু গ্রুপ, কখনো বরিশাল গ্রুপ আবার থার্ড ওয়ার্ল্ড নামে বিভিন্ন গোত্রে বিভক্ত হতে থাকে ছাত্রলীগ। কিন্তু তখন মূল ধারার ছাত্রলীগ বা শেখ হাসিনার অস্তিত্ব রক্ষার সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহন করেন ইকবাল হোসেন অপু।

১৯৯২ সালের ২ আগষ্ট তৎকালিন বিএনপি সরকার ছাত্রলীগ নির্মূলের নামে “অপারেশন দূর্বার-৯২” শিরোনামে আইন শৃংখলা বাহিনীর সমন্বয়ে একটি শক্তিশালি টিম মাঠে নামান। এ সময়কার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ঢাকা ইউনিভারসিটি কেন্দ্রীক রাজনীতিতে অভিভাবকের দায়িত্ব পালনে অনেকাংশেই ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। শত প্রতিকুলতা মোকাবেলা করে অপু তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে হলে শামীম আহমেদ, বাবুল তালুকদার, রতন, তমি সহ শরীয়তপুর-মাদারীপুরের বেশ কিছু সাহসী ছাত্রলীগের কর্মীদের সমন্বয়ে একটি প্রতিরক্ষা ব্যুহ গড়ে তোলেন।

এরপর অপুর বিপুল সাহসীকতার ফল স্বরূপ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে (মাঈন-ইকবাল) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পরবর্তীতে (শামীম-পান্না) কমিটিতে সহ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০০৩ সাল থেকে টানা ২০১৬ সন পর্যন্ত আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। সর্বশেষ ২০১৬ সালে তুমুল আলোচিত-আলোরিত দলীয় কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিশ্ব নেত্রী শেখ হাসিনা লাখো মানুষের স্বপ্ন সারথী ইকবাল হোসেন অপুকে পার্টির সম্মানীত কার্য নির্বাহী সদস্য মনোনীত করেন।

শরীয়তপুর-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে পারেন বিষয়ে ইকবাল হোসেন অপুর অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জম্মই হয়েছে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করার জন্য। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা ও বঙ্গবন্ধু মুজিবের প্রানের সংগঠন আওয়ামীলীগের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি অনেক আগেই।এর আগে আমাকে আমাকে কেন্দ্রীয় সদস্য করায় আমার জীবনের চেয়েও প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। আমাকে নেত্রী দুই বার জাতিসংঘের অধিবশেনে যোগ দিতে তাঁর সফর সঙ্গী করেছেন।

আমি আমার মা বাবার একমাত্র পূত্র সন্তান। সংগঠনের যে কোন ঝুঁকিপূর্ন মুহুতে আমাকে আমি পিতা-মাতার একমাত্র ছেলে মনে করেনি। জীবন বাঁজি রেখে ঝাঁপিয়ে পরেছি সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়। অসংখ্য বার মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়েছি। ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেট হামলার সময়ও নেত্রীর খুব কাছিাকাছি ছিলাম। সেদিন দুঃসময়ের অনেক সাথীকে হারিয়েছি। আমিও মরে যেতে পারতাম। সেদির আঘাত বহন করে আজো বেঁচে রয়েছি। আমার জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে আমি আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসনিার পাশে থাকবো।

জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া প্রতিটি দায়িত্ব আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। আমি আমার এলাকার মানুষের জন্য কাজ করে, বঞ্চিত মানুষের প্রত্যাশা পূরনে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাদের পাশে থাকবো ইনশা আল্লাহ।

(কেএনআই/এসপি/নভেম্বর ২১, ২০১৮)