মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : দক্ষিণাঞ্চলের হিন্দু সম্প্রদায়ের সর্ববৃহৎ রাস পূর্ণিমা উৎসব ও গঙ্গাস্নান উপলক্ষে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের ঢল নেমেছে। সৈকতের সর্বত্রই উৎসবের আমেজ। দেশ-বিদেশের হাজার হাজার পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড় ও কোলাহলে সৈকতের কোথাও তিল ধারনের জায়গা নেই। রাসপূর্নিমা উৎসব ও পূণ্যস্নান অপরদিকে পিকনিক পার্টি ও দর্শনার্থীদের ভীড়ে কুয়াকাটা সৈকত যেন ফিরে পেয়েছে তার হারাণো জৌলুস।

আগামীকাল শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) সকালে বিশাল সাগরের নীলজলে পূন্যস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হচ্ছে কুয়াকাটার প্রায় দুইশ বছরের প্রাচীন এ উৎসব।

বৃহস্পতিবার সন্ধায় কুয়াকাটার তিনদিন ও কলাপাড়ার পাঁচদিন ব্যাপী রাস পূর্নিমা উৎসবের উদ্ভোধন করবেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাস।

কলাপাড়া ও কুয়াকাটার ঐতিহ্যবাহী রাস মেলা গত বুধবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছে। কুয়াকাটায় তিনদিন ও কলাপাড়ায় পাঁচদিন ব্যাপী মেলা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান। হিন্দু সম্প্রদায়ের রাস উৎসবকে ঘিরে বিকেল থেকেই জড়ো হতে শুরু করেছেন হাজার হাজার রাসভক্ত নর-নারী। ইতিমধ্যে মন্দিরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে রাধাকৃষ্ণের ১৭ জোড়া যুগল প্রতিমা। প্রতিমা দর্শন শেষে রাতভর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ভক্তরা সাগরে পুণ্য স্নান শেষে কলাপাড়া পৌরশহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে পাঁচ দিনের রাস মেলা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মিলিত হবেন। সারা বছরের পঙ্কিলতা দুর করার মানষে হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারীরা কার্তিক মাসের ভরা পুর্ণিমার এ তিঁথিতে কুয়াকাটায় সাগরে পুণ্য স্নান করেণ।

কুয়াকাটার রাস উৎসব দুইশ বছরের প্রাচীন হলেও কলাপাড়া পৌরশহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে ১৯২৩ সাল থেকে এ রাস মেলা চলে আসছে বলে সেবাশ্রম কমিটিসুত্রে জানা গেছে। এ রাস মেলা ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান নির্বিঘ্নে করতে প্রশাসন কয়েক স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। আগত পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীর নিরাপত্তায় গুরুত্বপুর্ণ এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কলাপাড়ায় মন্দির এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হয়েছে।

ভক্তদের নিরাপদ পানি সরবরাহ, স্যানিটেশণ ব্যবস্থা, পুণ্য স্নান শেষে কাপড় বদলাতে অস্থায়ী গোসল খানা, নলকুপ বসানোসহ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ ব্যবস্থা থাকছে। থাকছে বিশেষ মেডিকেল ক্যাম্প, তথ্য সেবাসহ নেয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ।

মন্দিরের পুরোহিত শিশির মহারাজ ব্রহ্মচারী জানান, বুধবার সন্ধায় সন্ধা আরতি, নাম কীর্তন, ভোগ প্রসাদের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে রাস পুজা। বৃহস্পতিবার ভোরে ভগবাত পাঠ, নাম কীর্তণ, সন্ধা আরতি, উদ্বোধণী অনুষ্ঠান, ধর্মীয় আলোচনা , বিশেষ সংগীতানুষ্ঠান। মধ্যরাত থেকে শুরু হবে পুণ্য স্নান চলবে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত। এরপরে কলাপাড়া পৌরশহরের মদন মোহন শেবাশ্রমের পাঁচ দিনের মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রাসভক্তরা।

কুয়াকাটা সৈকত ঘুরে দেখা যায়, বুধবার থেকে সর্বত্রই পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়। কুয়াকাটার অর্ধ শতাধিক মোটেল, হোটেল, ডাকবাংলো প্রায় ১৫দিন আগে আগাম বুকিং হয়ে গেছে। তারপরও বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শতশত মাইক্রোবাস, বাস, মোটরসাইকেলের বহর ছুটছে কুয়াকাটার দিকে। আজ শুক্রবার পূণ্যস্নানে কুয়াকাটার লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম হবে বলে রাস উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ আশা করছেন।

কুমিল্লা থেকে কুয়াকাটায় সস্ত্রীক পূন্যস্নানে এসেছেন অমল মজুমদার ও মেীমিতা। তারা জানান, বিয়ের পর এই প্রথম কুয়াকাটায় এসেছেন তারা। তাদের মানত ছিল রাস পূর্ণিমা তিথিতে সাগরে গঙ্গাস্নান করবেন। তাই বৃহস্পতিবার সকালে এখানে এসেছেন একদিন আগেই। কুয়াকাটার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ এ দম্পতি জানালেন, সাগরের জলরাশি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই উপভোগ্য। এ দম্পতির মতো হাজার হাজার হিন্দু নর-নারৗ কুয়াকাটায় এসেছেন সাগরে পূন্যস্নান করতে।

কুয়াকাটার হোটেল বীচ হ্যাভেন এর ম্যানেজার মো.রঞ্জু জানান, তাদের হোটেলের অধিকাংশ সিট বুকিং হয়ে গেছে। একই অবস্থা অধিকাংশ হোটেলের।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান জানান, নির্বিঘেœ রাস উৎসব উদযাপনের সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে।

(এমকেআর/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০১৮)