রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : করিডোর ছাড়াই অবৈধভাবে ১৮টি ভারতীয় গরু আটক রাখার অভিযোগ উঠেছে এক আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। গত ১১ নভেম্বর থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার সীমান্তবর্তী পদ্মশাখরা গ্রামে শহীদুল ইসলামের খাটালে এসব গরু আটক রাখা হয়েছে।

ভোমরা বন্দরের হ্যাণ্ডেলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৯ এর সভাপতি পদ্মশাখরা গ্রামের কওছার আলী, একই গ্রামের মুদি ব্যবসায়ি শাজাহান কবীর, ভোমরা ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুকুল হোসেন ও শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ নভেম্বর দিবাগত রাত ১২টার দিকে সীমান্ত নদী ইছামতী পেরিয়ে ছোট-বড় ১৮টি ভারতীয় গরু হাড়দ্দহ ১নং পিলারের বাংলাদেশের পারে আসে। ওইসব গরু সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শহীদুল ইসলাম পদ্মশাখরা গ্রামে তার খাটালে নিয়ে আসেন।

উচ্চ আদালতে খাটাল পরিচালনা করার জন্য শহীদুল ইসলামের পক্ষে অনুমতি না থাকায় তিনি ওই গরু বিধি মোতাবেক কুলিয়া শুল্ক অফিস থেকে করিডোর করতে পারেননি। এমনকি উচ্চ আদালতের নির্দেশে খাটাল পরিচালনার বৈধ মালিকনা থাকার পরও পানিরতরচক গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজীর কাছে হস্তান্তর করেননি। বিষয়টি নিয়ে গত ১১ নভেম্বর সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট স্বজল মোল্লা স্বাক্ষরিত নুর আলী গাজীর পক্ষে খাটাল পরিচালনার নির্দেশনা সম্পর্কিত একটি চিঠি বিজিবি’র সাতক্ষীরার ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাতক্ষীরা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের রাজস্ব কর্মকর্তা বরাবর পাঠালেও গত ২২ নভেম্বর দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভারতীয় গরুগুলোর করিডোর হয়নি।

পানিরতর চক গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা নুর আলী গাজী জানান, পদ্মশাখরা গ্রামে ভারতীয় গরুর খাটাল পরিচালনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন তাকে বাংলা ১৪২৩ সালের জন্য অনুমতি দিলেও উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন করে আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল ইসলাম খাটাল পরিচালনা করেন। ১৪২৪ সালে তারা কেউ অনুমতি না পেলেও শহীদুল ইসলামের রিট পিটিশনের শুনানী চলমান থাকায় তিনি খাটাল পরিচালনা করেন।

চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি মোঃ আসফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলী পদ্মশাখরা বিওপি’র আওতাধীন খাটাল পরিচালনার জন্য তার পক্ষে তিন মাসের জন্য অনুমতি দেন। এরপরও গত ১১ নভেম্বর থেকে প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে শহীদুল ইসলাম তার খাটালে ভারতীয় ১৮টি গরু অবৈধভাবে আটকে রেখেছেন।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগ নেতা শহীদুল ইসলাম জানান, ২৯ অক্টোবরের নুর আলী গাজীর পক্ষের আদেশটি গত মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ স্থগিত করেছে। দু’ এক দিনের মধ্যে আদেশটি হাতে পেলেই ১৮টি গরু করিডোর করাসহ সকল সমস্যা সমাধান হবে। তবে নুরুল গাজীর পক্ষে উচ্চ আদালতের আদেশ থানার পরও ১২দিন ধরে গায়ের জোরে গরুগুলো তার খাটালে আটক রাখা বেআইনি কিনা এ প্রশ্নের জবা তিনি এড়িয়ে যান।

ভোমরা বিজিবি ক্যাম্পের কোম্পানী কমান্ডার সামছুল আলম জানান, ভারতীয় গরু করিডোরের বিষয়টি তাদের কিছু করার নেই। এটা কাস্টমস এর ব্যাপার।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান জানান বিষয়টি নিয়ে তার কিছু জানা নেই বা তিনি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোন চিঠি পাননি।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তহমিনা খাতুন জানান, জুলাই মাসে শহীদুল ইসলামের পক্ষে ও ২৯ অক্টোবর নুর আলী গাজীর পক্ষে উচ্চ আদালতের দু’টি আদেশ এক সপ্তাহ আগে সংশ্লিষ্ট সকলকে পাঠানো হয়েছে। তবে সে অনুযায়ি শহীদুল ইসলামের খাটালে থাকা গরুগুলো নিয়ে সমস্যার বিষয়টি তিনি সমাধানের উদ্যোগ নেবেন।

কাস্টসম, ভ্যাট ও এক্সাইজ সাতক্ষীরা সার্কেলের রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদ হাসান জানান, সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে তিনি খোঁজ নিয়ে জানাবেন।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০১৮)