শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে আগামীকাল (শুক্রবার) ভোরে সূর্যোদয়ের পর প্রথম জোয়ারে বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের ৩ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক রাস উৎসব। 

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বলছে, বুধবার সকাল থেকে রাস উৎসবকে ঘিরে আগাত পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখর হয়ে উঠেছে সাগরদ্বীপ আলোরকোল। আলোরকোলে রাস উৎসবে আগতদের যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করে দিয়। এর মধ্যে শরণখোলা রেঞ্জের বগী স্টেশন-বলেশ্বর-সুপতি স্টেশন-কচিখালী-শেলারচর হয়ে আলোরকোল এবং শরণখোলা স্টেশসন-সুপতি স্টেশন ও শেলারচর হয়ে আলোরকোলে পৌছায় পূণ্যার্থী ও পর্যটকরা। প্রত্যেক পূণ্যার্থী ও পর্যটকদের ৩ দিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য ৫০টাকা, নিবন্ধিক ট্রলার ২ শত টাকা এবং অনিবন্ধিত ট্রলারে ৮ শত টাকা রাজস্ব ধরা হয়েছে।

বাগেরহাটের পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা এবং বন ও বন্যপ্রাণি রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি নৌবাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরক্ষীরাও নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া, কন্ট্রোল রুমে স্বার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকির দায়িত্বে পালন করেন। এবার আলোরকোলে নারী পূণ্যার্র্থীদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা শেড ও পর্যাপ্ত টয়লেট তৈরী করা হয়।

বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দ্বীপ দুবলরা চর আলোরকোলে আড়াই শত বছরের অধীক সময় ধরে নভেম্বর মাসের রাস পূর্ণিমায় সনাতন হিন্দুরা এই রাস উৎসব পালন করে আসছে। প্রথম দিকে এই উৎসবের কোনো নিয়ন্ত্রন বা আইনী নিয়মনীতি মানা হতোনা। ৭৫ সালের পর বন বিভাগের তত্বাবধানে এবং সুন্দরবনে মৎস্যজীবীদের সংগঠন দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধের ৯ নম্বর সেক্টরের সাবসেক্টর কমান্ডার অবসরপ্রাপ্ত মেজর (অব:) জিয়াউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

তবে, জিয়াউদ্দিনের মৃত্যুর পর গত দুই বছর ধরে বন বিভাগের মাধ্যমেই এই উৎসব পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর এখানে দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক লোকের মিলনমেলায় পরিনত হয় সুন্দরবনের ৩ দিনের রাস উৎসব।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০১৮)