মাঈনুল ইসলাম নাসিম : মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতির প্রত্যাশায় আজ দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী ইমরান হোসাইন (৩৫)। ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় প্যারালাইজড হয়ে সিউলের হাসপাতালে শুয়ে শুয়েই তার জীবন থেকে ঝরে গেছে দু’দু’টি মূল্যবান বছর। স্পাইনাল কর্ডে ড্যামেজ নিশ্চিত হওয়ায় ইমরান কোনদিনই আর দাঁড়াতে পারবেন না। পা থেকে কোমর পর্যন্ত বোধশক্তি হারিয়েছেন অনেক আগেই। হাতও প্রায় অবশ, অনেক কষ্ট হয় কথা বলতে। বকেয়া হয়ে আছে হাসপাতালের ১ বছরের বিল।

সরকারি ইনস্যুরেন্সের আওতায় না থাকার পরিণতিতে অর্থের অভাবে ব্যহত হচ্ছে এই হতভাগ্য বাংলাদেশি যুবকের সুচিকিৎসা। শুধু তাই নয়, এভাবে চলতে থাকলে ইমরানের পুরো শরীর প্যারালাইজড হওয়া এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরের এই প্রাণচঞ্চল মেধাবী যুবক একসময় মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন গাজীপুরের একটি গার্মেন্টসে। বিদেশ যাবার ছোটবেলার স্বপ্নপূরণ করতে গিয়ে গাজীপুরের সম্মানজনক চাকরি ছেড়ে ২০১১ সালে পাড়ি জমান কোরিয়াতে। কাজ শুরু করেন একটি ফ্যাক্টরিতে।

১ বছর না পেরুতেই কর্মস্থলে ওজন উঠাতে গিয়ে পিঠে আঘাতপ্রাপ্ত হন ইমরান। ব্যথা সারাতে ডাক্তারের পরামর্শে যেতে হয় সুপরিচিত সংমো হাসপাতালের অপারেশন টেবিলে। ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১২ রাতভর তিন তিনবার অপরারেশন হয় তার। ব্যথা কমা বা সুস্থ হওয়া দূরে থাক, সেই থেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়ে আজ অবধি হসপিটালের বেডে শয্যাশায়ী ইমরান। এর আগে অপারেশনের ৪ মাসের মাথায় ইমরানেকে সংমো হাসপাতাল থেকে স্থানান্তর করা হয় সিউলের অন্য হাসপাতালে, যেখানে ডাক্তার তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত হন আগেকার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসার বিষয়টি।

অফিসিয়াল রিপোর্টে জানানো হয় ইমরান ‘রং ট্রিটম্যান্ট’-এর শিকার। সংমো হাসপাতালের ডাক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় ভুল চিকিৎসার অভিযোগে। মামলার রায় ইমরানের অনুকুলে এলে সংশ্লিষ্ট ডাক্তারের সার্টিফিকেট বাতিল সহ বড় অংকের জরিমানা ও ক্ষতিপূরণ গুণতে হবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, গীর্জার অধীনে পরিচালিত সংমো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোরিয়াতে অনেক প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে এবং ইমেজ ক্ষুন্নের আশংকা থেকে বিবাদী পক্ষ জোরেশোরে মাঠে আছে আদালতের রায় নিজেদের পক্ষে নিতে। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে, হতভাগা বিদেশী নাগরিক ইমরান সুচিকিৎসার পাশাপাশি বঞ্চিত হতে চলেছে ন্যায়বিচার থেকেও।

মামলার রায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ঝুলে থাকা বা ইমরানের প্রতিকুলে যাওয়ার বিষয়টি এখন অনেকটাই নিশ্চিত। তাছাড়া বেশকিছু মেইনস্ট্রিম মিডিয়া ইমরানের পক্ষে কাভারেজ করতে এসে বিগত দিনে এক পা এগিয়ে দু’ পা পিছিয়েছে। বিচারের বানী নীরবে নিভৃতে কাঁদার বিষয়টি তাই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে কোরিয়ান মিডিয়ার এই নেক্কারজনক ভূমিকায়। রহস্যজনকভাবে নিরব সিউলের বাংলাদেশ দূতাবাসও। স্টাফরা চাঁদা তুলে সামান্য কিছু অর্থ ইমরানকে পৌঁছে দিয়েই যেন খালাস।

মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি রীতিমতো দুর্ভাগ্যজনক। রাষ্ট্রদূত এনামুল কবিরের সৌভাগ্য হয়নি হতভাগা বাংলাদেশি ইমরানকে এক নজর দেখতে যাবার। তবে বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া (বিসিকে)’র সভাপতি এবি সিদ্দিক রানা, সাধারণ সম্পাদক এমএন ইসলাম এবং আনসান মসজিদ কর্তৃপক্ষের হয়ে ছোটন আহমেদ সহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সময়ে সময়ে পাশে এসে দাড়িয়েছেন অসহায় এই যুবকের। নিয়মিত তাঁরা হাসপাতালে সশরীরে এসে ইমরানের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

উল্লেখ্য, কোরিয়া আসার পর এক বছরে যা আয় করেছিলেন তার সবটাই ইমরান ব্যয় করেছেন চিকিৎসায়। আইবিকে ব্যাংক কর্তৃক দেয়া ১ কোটি উওনের আর্থিক সহায়তার পুরোটা দিয়ে পরিশোধ করা হয়েছে আগেকার হাসপাতালের বকেয়া। এখন যেখানে আছেন ইমরান, প্রতি মাসে বিভিন্ন থেরাপি সহ অন্যান্য আনুষাঙ্গিক চিকিৎসায় প্রায় ৪ হাজার ইউএস ডলারের সমপরিমাণ উওন যোগ হচ্ছে বকেয়ার খাতায়। প্রায় ১ বছর পার হতে চললো হাসপাতালের কোন বিল পরিশোধ ছাড়াই।

ডাক্তাররা বলছেন, প্রাইভেট ক্লিনিকে সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে হয়তোবা একদিন ইমরানের পক্ষে সম্ভব হবে হুইল চেয়ারে বসার। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন বড় অংকের অর্থের। বাংলাদেশে থাকতেই বাবা-মাকে হারানো এই অসহায় যুবকের আত্মীয়-স্বজন বলতেও তেমন কেউ নেই। তিন বোনের বিয়ে হয়েছে বাংলাদেশে, ছোট ভাই জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধি। দেশে ফিরে গেলে বোনদের সংসারে সমস্যা হতে পারে এমন আশংকায় তেমন কিছু চিন্তাই করতে পারেন না ইমরান।

দেশে-বিদেশের বহুবিধ বাস্তবতায় কোরিয়াতে থেকেই জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাবার সংকল্প তার। ডাক্তাররা যেমনটা আগেও বলেছেন এখনও বলছেন, একমাত্র মিরাকলই পারে তাকে এই করুণ পরিণতি থেকে মুক্তি দিতে। মহাপরাক্রমশালীর ওপর ভরসা রেখে সুস্থ হবার স্বপ্নে বিভোর আজ ইমরান। হাসপাতালে তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলতে চাইলে যে কেউ কোরিয় স্থানীয় সময় খেয়ালে রেখে ডায়াল করতে পারেন + 82 102 946 5047 এই নম্বরে।


ইমরানের ব্যাংক একাউন্ট সংক্রান্ত তথ্যাদি Bank Account : 351-0359-9590-13 Benficiary : IMRAN HOSSAIN, Bank Name : Nonghyup Bank (SWIFT CODE: NACFKRSE) Gyeonggi Do, Korea. পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আগ্রহী যে কেউ বাংলাদেশ কমিউনিটি ইন কোরিয়া (বিসিকে) প্রেসিডেন্ট এবি সিদ্দিক রানা (+82 108 770 7746) এবং সেক্রেটারি এমএন ইসলামের (+82 109 629 1477) সাথেও যোগাযোগ করতে পারেন যে কোন তথ্যের প্রয়োজনে, সর্বোপরি ইমরানের কষ্ট লাঘবে। বিদেশ বিভুঁইয়ে একজন অসহায় বাংলাদেশির সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে সামর্থের সাথে জাগ্রত হোক আজ আমাদের বিবেক।
(এএস/জুলাই ১৯, ২০১৪)