শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : বাগেরহাট জেলার সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ও সুন্দরবন সংলগ্ন শরনখোলা ও মোরেলগজ্ঞ উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট - ৪ সংসদীয় আসন। জেলার অন্যন্য এলাকা থেকে এই সংসদীয় আসনটি উন্নয়নে পিছিয়ে থাকলেও রাজনীতিতে বরাবরই এগিয়ে। তারই ধারাবাহিকতায় দক্ষিণের এজনপদে অনেক আগে থেকেই বিরাজ করছে নির্বাচনী আমেজ। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা অনেকটা আগেভাগেই রাজনৈতিক মাঠ নিজেদের অনুকূলে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। 

ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের মধ্যকার দীর্ঘদিনের বিরোধ এখনো মেটেনি। দলের অভ্যন্তরিন বিরোধে গত ১ অক্টোবর হত্যা করা হয়েছে আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতাকে। এই অবস্থায় আওয়ামী লীগের তৃর্ণমূলের নেতাকর্মীরা চায় নতুন মুখ। এছাড়া আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে নিজস্ব স্টাইলে মাঠে রয়েছেন জামায়াত। এই আসনে ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ- জামায়াতের সাথে এবার বিএনপিও জয়ী হতে তৎপর রয়েছে।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাগেরহাট -৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন শেখ আব্দুল আজিজ। ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন আব্দুল লতিফ খান। ৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এমপি হন ড. মিয়া আব্বাস। ৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে জামায়ত প্রাথী মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার আকন।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারীর নির্বাচনে এমপি হন বিএনপি আরশাদুজ্জামান। এই বছরের ১২ জুনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে এমপি নির্বাচিত হন ডা. মোজাম্মেল হোসেন। ২০০১ সালের ৩০ অক্টোবরের নির্বাচনে বিএনপি জোটের জামায়ত প্রাথী মুফতি মাওলানা আব্দুস সাত্তার আকন দ্বিতীয় বার এমপি হন।

২০০৮ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী আওয়ামী লীগ থেকে আবারো এমপি নির্বাচিত হন ডা. মোজাম্মেল হোসেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর ভোটারবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ডা. মোজাম্মেল হোসেন দলের দুই বিদ্রোহী নেতার সাথে তিব্র প্রতিদ্বন্দ্বীতার পর সামান্য ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন।

এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রবীণ নেতা বর্তমান এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেন, জনসর্মথনে এগিয়ে থাকা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিরুল আলম মিলন, মোরেলগজ্ঞ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান প্রবীর রঞ্চন হালদার, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক জামিল হোসাইন।

বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম ও বাগেরহাট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপন। জামায়াত থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রশিবির নেতা ও বাগেরহাট কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল আলিম ও জাতীয় পর্টি থেকে মোরেলগজ্ঞ উপজেলা সভাপতি সোমনাথ দে। বিভিন্ন দলের এসব মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা এলাকায় গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এই আসনে এবার জামায়াতকে ছাড় দিতে নারাজ বিএনপি। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের পর্দাথ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী ছাড়া এ আসন থেকে বিএনপির কেউ এমপি হতে পারেনি। অত্যন্ত অবহেলিত আমাদের এই জনপদে এখন অনেক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বিএনপি।

অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী কাজী খায়রুজ্জামান শিপন বলেন, মামলা-হামলার শিকার হয়ে এলাকায় আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আসছি। সুখে-দুখে নেতাকর্মীসহ এলাকাবাসির পাশে থেকে তাদের সহযোগিতা করছি। তাই আগামী নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে আমি শতভাগ আশাবাদী। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসনটি পূর্নরুদ্ধার করতে বিএনপি পরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই মাঠে রয়েছে। তবে, জোটগত ভাবে নির্বাচন হলে জামায়াত প্রার্থী আব্দুল আলিম মনোনয়ন পাবেন বলে তিনি দাবি করেন। জামায়াত নিজস্ব স্টাইলে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে।

আাওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, বর্তমান এমপি ডা. মোজাম্মেল হোসেনের বিরোধীতা করে মাঠে তৎপর রয়েছেন এই আসনের দুটি উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন কমিটির প্রায় সব নেতাকর্মীরা। এই এমপির ডানহাত হিসেবে পরিচিত দৈবঞ্জহাটী ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরের হাতে গত ১ অক্টোবর খুন হন আাওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামানের সর্মথক দুই প্রভাবশালী নেতা।

দৈবঞ্জহাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আনসার আলী দিহিদার ও উপজেলা যুবলীগ নেতা শেখ শুকুর আলীকে বাড়ী ও বাজার থেকে ধরে এনে ইউনিয়ন পরিষদ র্ক্যালয়ে বসে কুপিয়ে এবং গুলি করে হত্যা করা হয়। আওয়ামী লীগ দলীয় কোন্দলে বিভক্ত এই আসনটিতে সর্বশেষ দুই নেতাকে হত্যা ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রসহ ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ফকিরসহ ১১ ঘাতককে পুলিশ আটক করার পর গনবিক্ষোভে লাঞ্ছিত হন এমপি ডা. মোজ্জম্মেল। তলানীতে এসে ঠেকে এমপি’র ইমেজ। এই আসনটি ধরে রাখতে হলে প্রার্থী হিসেবে বদিউজ্জামান সোহাগের কোন বিকল্প নেই বলে দাবী করেন র্তর্ণমূলের নেতারা। তবে নেতাদের সাথে বিরোধের কথা স্বীকার করে বয়সের ভারে নূহ্য এমপি ডা. মোজাম্মেল বলেন, আমি এই আসনে ৩ বার এমপি হয়েছি। এখনো আমার জনসর্মথন রয়েছে। আরেকবার এমপি হিসেবে আমি অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চাই।

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিটি অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকমীর সাথে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে।

নির্বাচন করার চূড়ান্ত প্রস্তুতি রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, দল- এলাকার সাধারন মানুষের জন্য গত ৮ বছর ধরে কাজ করছি। তরুন প্রজন্মের জন্য আমার নিজস্ব চিন্তা ভাবনা রয়েছে। আসনটি ধরে রাখতে হলে দলীয় নেতকর্মীসহ ভোটারদের চাহিদা ও জনসর্মথনের বিষয়টি দল গুরুত্বের সাথে নেবে এমন প্রত্যাশা আমার রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ২২, ২০১৮)