শেখ আসহানুল করিম, বাগেরহাট : পূর্ণস্নানের মধ্যদিয়ে শেষ হলো সুন্দরবনের দুবলার চরের রাস উৎসব। 

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরে শুক্রবার ভোরে সূর্যোদয়ের পর দিনের প্রথম জোয়ারের শুরুতে হাজার-হাজার পূর্ণার্থীদের বঙ্গোপসাগরের নোনা পানিতে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হিন্দু ধর্মাবলম্বিদের তিন দিনব্যাপী ঐতিহাসিক রাস উৎসব। রাস উৎসব উপলক্ষে এবারও বসেছিলো তিন দিনের মেলা। পূর্ণস্নান শেষ হবার পরপরই পূর্ণার্থী ও দেশী-বিদেশী পর্যটকসহ দোকানীরা সুন্দরবন থেকে আবার ফিরতে শুরু করেছেন লোকালয়ে।

বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের দ্বীপ দুবলরা চরের আলোরকোলে আড়াই শত বছরের অধীক সময় ধরে প্রতি বছর কার্ত্তিক মাসের শেষে বা অগ্রহায়ণের প্রথমে ভরা পূর্ণিমার তিথিতে এ রাস উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা রাস পূর্ণিমার জোয়ারের লোনা পানিতে পূণ্যস্নান করে তাদের পাপ মোচন হবে এমন ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়েই রাস উৎসবে যোগ দিয়ে থাকেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা মনে করেন তাদের দেবতা শ্রী কৃষ্ণ এ তীর্থ স্থানে এসে পূর্ণস্নান করেছেন। তাই শত-শত বছর ধরে তারাও পূর্ণস্নান করে আসছেন। সুন্দরবনের রাস উৎসবটি মুলত হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হলেও এটি এখন পরিণত হয়েছে সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলায়। এবারও সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে রাস উৎসব ঘিরে বসে ছিলো দেশি-বিদেশি লক্ষাধিক লোকের মিলন মেলা।

বাগেরহাটের পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন সংরক্ষক (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান জানান, নিছিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে তিন দিনের রাস উৎসব শেষে শুক্রবার সকাল থেকে পূণ্যার্থী ও পর্যটরা দুবলার চরের আলোরকোল ত্যাগ করেছেন। এবার রাস উৎসবে আগতদের বন বিভাগ তিন দিন সুন্দরবনে অবস্থানের জন্য নির্ধারিত হারে রাজস্ব আদায় ও যাতায়াতের জন্য সুন্দরবন বিভাগ ৮টি রুট নির্ধারণ করে দেয়া হয়।

নৌবাহিনী, র‌্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশের পাশাপাশি বনরক্ষীদের নিছিদ্র নিরাপত্ত্র পাশাপাশি কন্ট্রোল রুমে স্বার্বক্ষণিক একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তদারকির দায়িত্বে পালন করেন। এবার আলোরকোলে নারী পূণ্যার্র্থীদের পোষাক পরিবর্তনের জন্য আলাদা শেড ও পর্যাপ্ত টয়লেট তৈরী করা হয়। রাস উৎসবে এবার কঠোর হাতে হরিণসহ বণ্যপ্রাণি শিকার ও বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।

(এসএকে/এসপি/নভেম্বর ২৩, ২০১৮)