স্টাফ রিপোর্টার : সারাদেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘গায়েবি’ মামলার তদন্ত বন্ধ, মামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তীতে এ ধরনের মামলা না দেয়ার বৈধতা নিয়ে করা রিট আবেদন সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এ সংক্রান্ত আবেদনের শুনানি নিয়ে রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের একক বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট মো. মাসুদ রানা। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।

এর আগে আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ‘গায়েবি’ মামলার তদন্ত বন্ধ, ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পরবর্তীতে এ ধরনের মামলা না দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানি নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্টের অন্য একটি বেঞ্চ। ফলে নিয়ম অনুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে যায়। পরে প্রধান বিচারপতি মামলাটি শুনানির জন্য নতুন বেঞ্চ গঠন করে দেন।

গত ৯ অক্টোবর বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দেন।

উভয়পক্ষের শুনানি শেষে দ্বৈত বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী তার আদেশে ‘গায়েবি’ মামলা হিসেবে অভিযোগকারীসহ অন্যান্য ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে করা মামলা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। একই সঙ্গে ঢাকায় দায়ের হওয়া মামলাগুলো তদন্ত করে আগামী ৬০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলে পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার পরবর্তী তারিখ ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারণ করেন।

এরপর আদালতের কনিষ্ঠ বিচারপতি আশরাফুল কামাল তার আদেশে বলেন, রিটটি সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে গ্রহণযোগ্য নয়। তাই রিটটি আমি প্রত্যাখ্যান (খারিজ) করলাম।

পরে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, গত ৮ অক্টোবর রুল পাওয়ার আশায় আদালতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। ড. কামাল হোসেন ৮ অক্টোবর শুনানি করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, পরের দিন (৯ অক্টোবর) তার আর আসার দরকার হবে না। অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করলেন। তিনি শুনানিতে আদালতকে বললেন, এসব ফৌজদারি মামলা রিটের আওতায় আসবে না, এগুলো কোয়াশিংয়ে (বাতিল) যাবে। জবাবে আমি আদালতকে বললাম, সারাদেশের আট লাখ লোক এ মামলায় আসামি। তাই একটি রিট করে আমরা এ ধরনের ঘটনা (গায়েবি মামলা) ঘটেছে কিনা- তা জানতে চাই। পরে আদালত দ্বিধাবিভক্ত আদেশ দিলেন। ফলে, মামলাটি এখন প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। এরপর তিনি মামলাটি শুনানির জন্য অন্য একটি বেঞ্চ গঠন করে দেবেন।

যার ধারাবাহিকতায় মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন একক হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলাটির শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন।

প্রসঙ্গত, গত ২৩ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট এ কে খান। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ্ মিয়ার পক্ষে এ রিট দায়ের করা হয়।

গত ২২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটের আবেদন করা হয়। রিটে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সারাদেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে করা চার হাজার মামলা এবং তিন লাখেরও বেশি লোককে আসামি করার কারণ জানতে চাওয়া হয়। একই সঙ্গে, এ বিষয়ে অনুসন্ধানের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

এছাড়া, আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য দলের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যত গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে, সেগুলোর তদন্ত বন্ধ এবং এ গায়েবি মামলাগুলোর বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে কমিটি গঠন করে ঘটনার তদন্ত এবং তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে যেন এ ধরনের মামলা দেয়া না হয়, তার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

পাশাপাশি আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অগণিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে পুলিশি ক্ষমতা অপব্যবহার করে গায়েবি বা আজগুবি মামলা দায়ের করা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, রিটে সে বিষয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের আইজি, ডিএমপি কমিশনার, ডিএমপি রমনা জোনের ডেপুটি ও অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার, রমনা, পল্টন ও শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট নয়জনকে রিটে বিবাদী করা হয়।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৫, ২০১৮)