ভোলা, প্রতিনিধি : পূর্ণিমায় সৃষ্ট অতিরিক্ত জোয়ারের চাপে বেড়ি বাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে ভোলা জেলার সদর, দৌলতখান, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলাসহ জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে ভোলা শহর রক্ষা বাঁধ। যেকোনো মুহূর্তে বাঁধটি ধসে বিস্তীর্ণ জনপদ তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীপাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। অনেকে বসত-ভিটা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন।

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের বেতুয়া ও সামরাজ মৎস্য ঘাট এলাকায় দেখা যায়, মেঘনার ভাঙ্গনে প্রতিদিন গৃহহারা হচ্ছে শত শত মানুষ। অনেকে এখন নৌকা ও ঘরের মাচায় বসবাস এবং রান্না করছে। শুকনা খাবার এখন তাদের প্রধান ভরসা। অধিকাংশ টিউবয়েল পানিতে ডুবে থাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। চর মাদ্রাজ ইউনিয়নের ৪০ হাজার মানুষ রয়েছে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে। ওই এলাকার ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ এক সপ্তাহে জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে জেলার বৃহৎ সামরাজ মাছঘাটসহ ১০টি বরফ কল ও শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়ে গেছে। ওই ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্রবল বেগে মেঘনার জোয়ারের পানি ঢুকে চরফ্যাশনের অর্ধেক এলাকা এখন পানির নিচে। ডুবে আছে ফসলি ক্ষেত। মৎস্য খামার ও পুকুরের কোটি কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে জোয়ারের পানিতে।

চরফ্যাশন উপজেলা চেয়াম্যান মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, মে মাসে সাড়ে চার কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের টেন্ডার ও জুন মাসে কার্যাদেশ দেয়ার পরও বাঁধ নির্মাণের কোন উদ্যোগ নেই। তিনি বাঁধ নির্মাণের গড়িমসির জন্য সরাসরি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করেন। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল হেকিম জানান, বর্ষার জন্য কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ভোলা শহরসহ সদরের ১৩টি ইউনিয়নকে রক্ষার জন্য মেঘনার চারদিকে ১৪ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে ওই বাঁধের সাড়ে ৩ কিলোমিটার এলাকা বিধ্বস্ত হয়। চলতি বছরে ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হলেও শেষ হয়নি। এখনো ওই কাজ চলছে। হঠাৎ করেই মেঘনার পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে শহর রক্ষা বাঁধ।

বাঁধের অধিকাংশ এলাকায় বড় বড় ফাটল ধরে মাটি ধসে পড়ছে। কোথাও আবার গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন নদীর তীরের ধনিয়া, কাচিয়া ও ইলিশা ইউনিয়নের মানুষ। বাঁধের এ জীর্ণদশা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। গত ১৪ জুলাই ভোলা শহর রক্ষা বাঁধের নাছির মাঝি পয়েন্ট দিয়ে বাঁধ ভেঙে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার পর রাতভর চেষ্টা চালিয়ে বাঁধ মেরামত করলেও ঝূঁকি রয়ে গেছে।

ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হেকিম বলেন, শুধু সাড়ে তিন কিলোমিটার নয়, সদরের ১৪ কিলোমিটার বাঁধকেই আমরা ঝুঁকিপূর্ণ মনে করছি। পানি বৃদ্ধির কারণে এসব বাঁধ আরো বেশি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এসব বাঁধ সংরক্ষণে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

ভোলা জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা জানান, চলতি পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জনারণ্যে পানি প্রবেশ করে এবং বেড়িবাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চলে অতিরিক্ত জোয়ারের পানিতে ভোলা জেলার সদর, দৌলতখান, চরফ্যাশন ও মনপুরা উপজেলাসহ জেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য এক হাজার চারশত মে. টন টিআর এর চাল জেলার ৭ উপজেলা প্রশাসনের হাতে রয়েছে এ ছাড়া জেলা প্রশাসন থেকে দু’লাখ নগদ টাকা সকল উপজেলায় ভাগ করে দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার প্রতি বিশ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে। যারা আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে তাদের মোমবাতি ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক আরো জানান, জোয়ারের পানি প্রবেশ করার পর অনেক স্থানে জনগণ রাস্তা কোথাও বাঁধ কাটতে না দেয়ায় সেখানে পানি নামানো যাচ্ছে না। জেলার সার্বিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করতে আরো সপ্তাহ খানিক সময় লাগবে। ভোলার চরফ্যাশন ও মনপুরার অনেক স্থান এখন জোয়ারে ডুবে যায় এবং ভাটায় ভেসে উঠে। সেখানে রাস্তাঘাট ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

(ওএস/এস/জুলাই ১৯, ২০১৪)