খুলনা প্রতিনিধি : খুলনার ব্যক্তি মালিকানাধীন ৯টি পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারিরা ঈদের আগে মজুরি-বেতন ও বোনাস পাবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এসব মিলে প্রায় ১৫ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারি রয়েছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার ৪টি পাটকলের মালিক, শ্রমিকদের নিয়ে জেলা প্রশাসনের আহ্বানে বৈঠক হয়। বৈঠকে মিলের মালিকরা বকেয়া প্রদানসহ ঈদ বোনাস দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শ্রমিক নেতারা আশ্বাসের বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত চলমান আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুলনা অঞ্চলে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাটকল রয়েছে ১৯টি। এর মধ্যে বর্তমানে ৩টি বন্ধ রয়েছে। এগুলো হচ্ছে মহসেন, অ্যাজাক্স ও সোনালী জুটমিল। আরও ৬টি পাটকলে রয়েছে নানা সংকট। ওহাব জুটমিল আংশিকভাবে চালু রয়েছে। আফিল জুটমিলে শ্রমিক ছাঁটাই করা হয়েছে। অন্য মিলগুলোতে ঘোষিত মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন নেই।

এজাক্স জুটমিলটি ২০১৩ সালের শেষ ভাগে ৪ মাস লে-অফ ছিল। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ মিলটি বন্ধ করা হয়। এখানে স্থায়ী ১ হাজার ৬’শ শ্রমিক-কর্মচারির পাশাপাশি আরও দেড় হাজার অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। সোনালী জুটমিলটিও গত ১২ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে। এখানে ৩ হাজার স্থায়ী শ্রমিক-কর্মচারীর সঙ্গে আরও ৩ হাজার অস্থায়ী শ্রমিক রয়েছে। ওহাব জুটমিলটি আংশিকভাবে চালু রয়েছে। তবে এ মিলে এখানে ৪ দফা দাবিতে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেছে।

গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকরা মিলটিতে ব্যাপক হামলা ও ভাংচুর করায় প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ মিলে প্রায় এক হাজার ২শ’ শ্রমিক নো ওয়ার্ক, নো পে ভিত্তিতে কাজ করছে।

আফিল জুটমিল কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে ৪শ’ শ্রমিককে বাদ দিয়েছে। এখানে বর্তমানে দেড় হাজার শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। ঈদের আগে বেতন-মজুরি ও বোনাস পাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। বিভিন্ন দাবিতে সাগর জুটমিলের প্যাকিং বিভাগের শ্রমিকরাও ক্ষুব্ধ রয়েছে। মিলটিতে বর্তমানে পাট সংকট রয়েছে। জুট স্পিনার্সও পাট সংকটে আছে। আয়ান ও সুপার জুটমিল কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের মজুরি কমিশন বাস্তবায়ন করেনি এখনও। এ নিয়ে শ্রমিক-কর্মচারিরা ক্ষুব্ধ রয়েছে। মহসেন জুটমিলটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণায় মিলটির প্রায় ৭০০ স্থায়ী শ্রমিকসহ দুই হাজার শ্রমিকের ভাগ্য অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ১৩ মাস লে-অফ থাকার পর পাট সংকট ও চলতি মূলধনের অভাব দেখিয়ে মিলটি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থায়ী ৬৬৭ শ্রমিককে ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করতে গত শুক্রবার জেলা প্রশাসনের আহ্বানে ৪টি বেসরকারি পাটকলের মালিক, প্রতিনিধি ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জেলা প্রশাসক আনিস মাহমুদ সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে মহসেন জুটমিলের বকেয়া পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে পরিশোধ, সোনালী জুটমিল কর্তৃপক্ষও মিলটি অবিলম্বে চালু ও শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ এবং আফিল জুটমিল কর্তৃপক্ষ ঈদের আগেই শ্রমিকদের বোনাস প্রদান করার আশ্বাস দেন।

দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন পাট, সুতা, বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের আহ্বানে শনিবার সন্ধ্যায় মশাল মিছিল হওয়ার কথা রয়েছে। কাল রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর ৩টি স্থানে রাজপথ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হবে বলে জনা গেছে।

(ওএস/এটিআর/জুলাই ১৯, ২০১৪)