দীপক চক্রবর্তী, মাগুরা থেকে : বন্যা, অপরিকল্পিত বাঁধ, দখলদারদের দখল, ময়লা-আর্বজনা,কচুরিপানা জমাট এর ফলে নাব্যতা হারাতে চলেছে মাগুরা জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত ৭টি নদী।

মাগুরার এ নদী গুলো হলো নবগঙ্গা, গড়াই, মধুমতি, চিত্রা, ফটকী, বেগবতী ও কুমার নদী। সংস্কারের অভাবে এ নদী গুলি প্রায় মৃত হতে চলেছে। এর মধ্যে মৃতপ্রায় নবগঙ্গা নদী খননসহ প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য প্রায় ৪১ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাব একনেকের বৈঠকে অনুমোদন করা হয়েছে। নদীটি সংস্কার হলে কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাসহ রক্ষা পাবে ওই এলাকার জীববৈচিত্র। যা আর্থ-সমাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।

অনুমোদিত প্রকল্প অনুসারে শহরের ঢাকার রোডের নদী এলাকার রেগুলেটরের অংশ থেকে দু’পাশে মোট ১১ কিলোমিটার এলাকা খননসহ অন্যান্য কাজ দ্রুত শুরু হবে বলে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন । প্রকল্প এলাকা সার্ভে শুরু হয়েছে। দ্রুতই টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করে এ বছরেই কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি ।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, অনুমোদন হওয়া প্রকল্পের অর্থায়নে নদী খনন, বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় জনসাধারণের গোসলের জন্য ৮টি ঘাট নির্মাণ, পানি নিয়ন্ত্রণে শহরের ঢাকা রোডের নদীর উপর থাকা পুরাতন রেগুলেটর সংস্কার করা হবে। এ কাজ সম্পন্ন হলে নদীতে মাছ চাষ বৃদ্ধি, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের নিরাপদ জীবনযাত্রা নিশ্চিত হবে। পাশাপাশি নদী তীরবর্তী এলাকাবাসী কৃষি জমিতে সেচ সুবিধাসহ শুষ্ক মৌসুমে নানা কাজে নদীর পানি ব্যবহার করতে পারবে।

তাদের দেয়া তথ্য মতে, চুয়াডাঙ্গা জেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে নব গঙ্গার উৎপত্তি। মাগুরা শ্রীপুর উপজেলার কুমার নদ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মাগুরা পৌরসভার পারনান্দুয়ালী এলাকায় এসে নবগঙ্গা নাম ধারণ করেছে। ভারতের উজান থেকে পানি প্রবাহ কমে যাওয়া, নদীর বিভিন্ন অংশে অপরিকল্পিত বাঁধ ও ব্রিজ নির্মাণ, পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে শুকিয়ে যাচ্ছে নদীটি। যে কারনে নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে চর। নদীর এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় ‘জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে’ নদীটির ১১ কিলোমিটার এলাকা খননে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়। যা সম্প্রতি অনুমোদন হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নদীর তলদেশে পলি জমে উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় মাগুরা জেলার সদর উপজেলাধীন বড়বিলা বিল, কৈবিলা বিল, পুটুলিয়া বিল, রূপদাহ বিল এলাকার জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণের লক্ষ্যে নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন করা অত্যন্ত জরুরী ছিল। বর্তমানে প্রকল্পটি অনুমোদন পাওয়ার পর এ বছরেই নদী সংস্কারের কাজ দ্রুতই শুরু হতে যাচ্ছে। এটি বাস্তবায়িত হলে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি, বন্যার পানি নিষ্কাশন, ফসল রক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বন্যাকালীন সময়ে এলাকাবাসীর নিজ ঘরে অবস্থান এবং দারিদ্র্য বিমোচন কর্মসূচি সফল হওয়ার পাশপাশি প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ হাজার মেট্রিক টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য উৎপাদন সম্ভব হবে। এতে এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে।

মাগুরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ বলেন, নবগঙ্গা নদী সংস্কারের প্রস্তাবটি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর পরিকল্পনা মন্ত্রনালয় একনেকের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। অনুমোদনের ফলে ১১ কিলোমিটার নদী খননসহ অন্যান্য সংস্কার কাজ বাস্তবায়িত হলে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক ভারসাম্য এবং পরিবেশ রক্ষা পাবে। পাশাপাশি কৃষি জমিতে সেচ কার্যক্রম চালানোসহ নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে অবদান রাখবে।

অন্যদিকে গড়াই, ফটকী, চিত্রা,বেগবতী ও কুমার নদীর সংস্কারের অভাবে বর্ষা মৌসূমে প্লাবিত হয়ে দুই পাড় ভেসে হাজার-হাজার একর ফসলী জমি ও ঘর-বাড়ি তলিয়ে যায়। ফলে প্রতি বছরই নদী পাড়ের মানু দের পোহাতে হয় চরম র্দূভোগ। আবার শুস্কো মৌসূমে নদী গুলি শুকিয়ে যায়। ফলে নৌযান চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমান সরকার নবগঙ্গা খননের জন্য ৪১ কোটি টাকার একনেকে প্রকল্প বরাদ্ধ করলেও অন্য নদী গুলো খননের কোন ব্যবস্থা এখনও নেওয়া হয়নি।

(ডিসি/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮)