মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ : স্বচ্ছল জীবনের স্বপ্নে দেশ ছেড়ে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজে গিয়েছিলেন নবীগঞ্জ উপজেলায় রোশনা বেগম নামের এক গৃহবধূ। সেখানে গিয়ে অবর্ণনীয় নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে রূপ নেয়। শারিরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শুধু প্রাণটা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশে ফেরেন রোশনা বেগম। বর্তমানে তিনি নবীগঞ্জ হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন। এ ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন তার স্বজনরা। কিন্তু মামলা তুলে নেওয়ার জন্যও হুমকি ধামকি দিয়েছে দালাল চক্র। গতকাল বিকেলে এ প্রতিবেদকের কাছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নির্যাতনের শিকার নারী এমন নির্মম ঘটনার বর্ণনা দেন।

মামলার আরজি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোশনার বক্তব্যর প্রেক্ষিতে প্রকাশ- নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা ইউনিয়নের শান্তিপুর গ্রামের আশ্বব উদ্দিনের কন্যা স্বামী পরিত্যক্তা রোশনা বেগমকে ১ লক্ষ টাকার বিনিময়ে সৌদি পাঠাবে এমন প্রলোভন দেয় একই ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মৃত আব্দুল মহিদ মিয়ার পুত্র মোঃ কাউছার মিয়া। সেখানে গিয়ে মোটা অংকের টাকা কামাই করার স্বপ্ন দেখিয়ে ম্যানেজ করে রোশনা বেগমের পরিবারকে। দরিদ্র বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে এক লক্ষ টাকা দিয়ে গত ৬ ই জুলাই স্বপ্নের দেশ সৌদিতে পাড়ি জমায় রোশনা বেগম। সে দেশে যাওয়ার পর থেকেই তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয় বলে জানায় রোশনা বেগম।

নবীগঞ্জ হাসাপাতালে চিকিৎসাধীন রোশনা প্রতিনিধিকে জানায়, কাউছার নামের দালালের কথায় সে বিশ্বাস করে এক লক্ষ টাকা দিয়ে সৌৗদিতে যায়। সেখানের যাবার পর তাকে তালাবদ্ধ ঘরে রেখে কয়েকজন যুবক মিলে পাঁচ মাস শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেছে। তারা বলেছে, দালাল কাউছারের কাছ থেকে তাকে পাঁচ লক্ষ টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। তাদের কথা মানতেই হবে। স্বপ্নের দেশে সৌদিতে যাওয়ার পর পাঁচ মাস ধরে তাকে দেশে ফোন করতে দেয়নি দালাল চক্র।

এ ঘটনায় রোশনার স্বজনরা হবিগঞ্জ আদালতে একটি মানবপাচার মামলা দায়ের করেন। এ খবর শুনে দালালরা মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে সে দেশের পুলিশের কাছে তুলে দেয় রোশনাকে। এরপর গত বৃস্পতিবার রোশনাকে বাংলাদেশে পাঠায় পুলিশ। এখন দেশে আসার পর সে ঠিক মতো চলা-ফেরা ও করতে পারছে না। অবশেষে পরিবারের লোকদের সহযোগিতায় গত শুক্রবার বিকেলে নবীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভর্তি হয়েছে। সুস্থ হতে চিকিৎসকগণ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করছেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুর রহমান জানান, এ ঘটনায় একাধীকবার চেষ্টা করেও সামাজিকভাবে কোন সমাধান করতে পারেননি।

নির্যাতিতা রোশনার বোন শিফা বেগম জানান, তার বোনের কোন খোঁজ খবর না পাওয়ায় বিজ্ঞ আদালতে মানব পাচার আইনে দালালের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এরপর থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন দালাল চক্র। এ ঘটনার সুষ্ট বিচারের পাশাপাশি দালালদের শাস্তি দাবী করছেন তারা।

এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার আঃ সামাদ বলেন- রোশনাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করার কারণে সে অতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তার পর্যাপ্ত পরিমানের চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নবীগঞ্জ থানার ওসি অপারেশন নুরুল ইসলাম ভুঁইয়া জানান, মামলার ব্যাপারে নাকি তিনি অবগত নন ।

(এমআরএম/এসপি/ডিসেম্বর ০৮, ২০১৮)