আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশ মাতৃকার টানে পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে সন্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়া বরিশালের আগৈলঝাড়ার ১৬ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের কবর আজও উপেক্ষিত।

’৭১ রনাঙ্গন কাপানো ওই সকল শহীদ যোদ্ধাদের দরিদ্র পরিবার সদস্যদের আর্থিক সঙ্গতি না থাকায় পারিবারিক উদোগে বা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে তাদের কবরগুলো আজও সংরক্ষণ না করায় মুছে যেতে বসেছে শহীদদের শেষ স্মৃতি চিহ্ন কবরস্থান।

পরবর্তী প্রজন্ম জানবেও না দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা শহীদ হয়েছেন তারা কে কোথায় চির নিদ্রায় শুয়ে আছেন ? বছর ঘুরে বছর আসে, জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হয় মহান বিজয় দিবস। আর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবার সদস্যদের সংবর্ধনার নামে ভাগ্যে জোটে একটি রজনীগন্ধার ডাটা। বছর কয়েক হল তার সাথে যুক্ত হয়েছে সম্মাননার ৩শ টাকার প্রাইজবন্ড।

আর্থিক সঙ্গতি থাকা দু’একটি পরিবার তাদের প্রিয়জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবরটি সংরক্ষণ করতে পারলেও অধিকাংশ কবরগুলো এখনও সংরক্ষণ করা যায়নি। কারণ, দারিদ্রতার কষাঘাতে জর্জরিত ওই পরিবারগুলোর ভাগ্যে জোটেনি সরকারী বা রাজনৈতিক কোন পৃষ্ঠপোষকতা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের পতাকা ওড়া পর্যন্ত পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হওয়া আগৈলঝাড়া উপজেলার বীর যোদ্ধারা হলেন, গৈলা গ্রামের সিপাহী আলাউদ্দিন, শিহিপাশা গ্রামের মোস্তফা হাওলাদার, নুরুল ইসলাম হাওলাদার, মধ্য শিহিপাশা গ্রামের মান্নান মোল্লা, সেলার গ্রামের সিপাহী সিরাজুল ইসলাম, ভালুকশী গ্রামের আব্দুল মান্নান খান, বাশাইল গ্রামের গোলাম মাওলা, সেকেন্দার আলী, আব্দুল আজিজ শিকদার, রাজিহারের বসুন্ডা গ্রামের আব্দুল হক হাওলাদার, পয়সা গ্রামের শামসুল হক, ফুল্লশ্রী গ্রামের মনসুর আহম্মদ, চাঁদত্রিশিরা গ্রামের তৈয়ব আলী বখতিয়ার, বেলুহার গ্রামের আব্দুস ছালাম, বরিয়ালী গ্রামের মহসীন আলী ও রত্নপুর গ্রামের ফজলুল হক হাওলাদার।

সেলার গ্রামের সিপাহী সিরাজুল ইসলাম বরিশালের তালতলা যুদ্ধে শহীদ হন। ওই সময় তার কর্মস্থল বরিশালে কবর দেয়া হলে পরবর্তিতে স্বজনদের ঐকান্তিক ইচ্ছা থাকা সত্তেও অর্থ সংকটের কারণে আজও তার নিজ বাড়িতে প্রিয়জনের কবরটি স্থানান্তর করতে পারেনি স্বজনেরা।

এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বরিশাল জেলা ইউনিট কমান্ডের সহকারী কমান্ডার (প্রচার) আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী নির্দেশে বীর শহীদ সেনাদের কবরগুলো চিহ্নিত করা হলেও তা সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ আজও নেয়া হয়নি। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পেরিয়ে গেলেও শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষন না হওয়া আগৈলঝাড়াসহ গোটা জাতির জন্য লজ্জাজনক বলেও অভিহিত করেন তিনি। তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, উপজেলার বিভিন্ন উন্নয়ন খাত থেকে অন্তত শহীদদের কবরগুলো সংরক্ষণের মাধ্যমে পরবর্তি প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অম্লান রাখার জোর দাবি জানান।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিপুল চন্দ্র দাস বলেন, সরকারীভাবে কাঠিরা বধ্যভূমি সংরক্ষণের জন্য ১৪লাখ টাকা ব্যায়ে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। তবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরস্থানগুলো সংরক্ষনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এডিপি থেকে মন্দির, মসজিদ, কবরস্থান নির্মানের সুযোগ থাকলেও এতদিনে কেন উপজেলার ১৬ শহীদের কবর সংরক্ষন করা হয়নি তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। উপজেলা পরিষদের আগামী সভায় শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষনের প্রস্তাবনা রেখে তা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার কথাও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/ডিসেম্বর ০৯, ২০১৮)