চৌধুরী আবদুল হান্নান


খেলাপি ঋণের কারণে নির্বাচন কমিশন অনেক প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছে। বাতিলকৃতদের মধ্যে বড় বড় বাঘা বাঘা ক্ষমতাবানরাও রয়েছেন। খেলাপি ঋণের বিপরীতে নির্বাচন কমিশনের দৃঢ় অবস্থান এবং বাংলাদেশের ব্যাংকসহ সকল ব্যাংকের আন্তরিকতায় জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট এ কাজটি সম্ভব হয়েছে।

নানা কারণে দীর্ঘদিন থেকে দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণের বোঝা আর বহন করতে পারছে না। এবার খেলাপিরা কিছুটা হলেও একটা ধাক্কা খেয়েছে। এরা ক্ষমতাশালী, এদের ধরা সহজ নয়।

যাদের নিকট থেকে তারা ঋণ নিয়েছে, সে ব্যাংকগুলো বলতে গেলে তাদের কাছে অসহায়। ঋণ দেওয়া যত সহজ আদায় করা ততই কঠিন। যদি বলা হয়, ঋণ খেলাপিরা ব্যাংকখাত নিয়ন্ত্রণ করছে, তা হলেও মনে হয় অত্যুক্তি হবে না।

খেলাপি রাঘব-বোয়ালদের অভিনব আরও একটি আবদার থাকে, যাকে মামাবাড়ির আবদার বলা যায়। তা হল- ঋণ খেলাপি থাকা সত্ত্বেও তাদের খেলাপি বলা যাবে না। এক্ষেত্রে তারা রিট আবেদন করে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ প্রাপ্ত হয়, সাময়িকভাবে সিআইবি ক্লিন হয়ে যায়। ফুরফুরা মেজাজে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, অন্যান্য সুবিধা নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করে থাকে। তবে অবশ্য এবার নির্বাচনে এমন ঘটনার খবর শুনা যায়নি।

নানা কৌশলে ব্যাংক থেকে লুটে নেওয়া অর্থ এবং খেলাপি ঋণ কালো টাকা হিসেবে মুদ্রা বাজার ও পুঁজি বাজারে প্রবেশ করে বাজার অস্থিরতা সৃষ্টি করে চলেছে। দ্রব্য মূল্যে চাপ পড়ছে, জঙ্গি তৎপরতা, অস্ত্র, মাদক ইত্যাদি অবৈধ ব্যবসা গতিশীল হচ্ছে। সামাজিক অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এ জ্বালা ভোগ করে চলেছে প্রতিটি নাগরিক।

নির্বাচন কমিশন এবার অর্থনৈতিক সন্ত্রাসী ঋণ খেলাপিদের গায়ে আঁচড় দিতে সক্ষম হয়েছে। তাদের পাকড়াও করতে হবে এখনই। সমাজের কাছে তাদের চিহ্নিত করে দিতে হবে, মুখোশ খুলে দিতে হবে। তারা যে বিলাশবহুল রাজকীয় জীবনযাপন করে, তা তাদের নিজের অর্থে নয়, জনগণের অর্থে। গত বছর জুলাই মাসে দেশের ১০০ জন ঋণ খেলাপি প্রতিষ্ঠানের নামের তালিকা জাতীয় সংসদে প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা সকলের দীর্ঘদিনের এক প্রত্যাশা ছিল।

এখন পর্যায়ক্রমে সকল ঋণ খেলাপি বিশেষ করে সম্পদশালী বড় ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের নাম দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। জনগণের নিকট উন্মোচিত হোক যে এরা ঋণ নিয়েছে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তা পরিশোধ করেনি।

এরা সমাজের উঁচু স্তরে চলাফেরা করে কিন্তু তারা ওয়াদা খেলাপকারী, ভালো মানুষ নয়।

আরও কিছু সামাজিক চাপ প্রয়োগ করা যায়:

১. জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে যেমন গণভবন, বঙ্গভবন বা অন্য কোথাও তাদের আমন্ত্রন না জানানো।

২. বাড়ি করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেতে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার শর্তারোপ করা।

৩. ঘন ঘন বিদেশ ভ্রমন নিয়ন্ত্রণ করা

৪. পাসপোর্ট ইস্যু/নবায়ন করার ক্ষেত্রে, নতুন গাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করা ইত্যাদি।

ব্যাংকিং খাত ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে আরও অগ্রসর হওয়ার আগেই এ সকল উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে, তা নাহলে ধীরে ধীরে রাষ্ট্রের অর্থ ভাণ্ডার অসৎ, লোভী লোকদের দখলে চলে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

এ উদ্যোগ ব্যাংকিং খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিতে হবে, সাফল্য নির্ভর করবে বিষয়টি সরকারের কাছে উপস্থাপনার দক্ষতা ও সক্ষমতার উপর।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার।