রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল জেলার ১২ টি উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

গ্রামগঞ্জের মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত ফসলের মাঠ। জেলার প্রতিটি মাঠে এখন শুধু সরিষা ফুলের হলুদ রঙের চোখ ধাঁধাঁনো বর্ণিল সমারোহ। মৌমাছির গুনগুন শব্দে ফুলের রেণু থেকে মধু সংগ্রহ আর প্রজাপতির এক ফুল থেকে আরেক ফুলে পদার্পন এ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই যেন মনোমুগ্ধকর এক মূহুর্ত। ভোরের বিন্দু বিন্দু শিশির আর সকালের মিষ্টি রোদ ছুঁয়ে যায় সেই ফুলগুলোকে। ভালো ফলনের আশায় জেলার কৃষকরা অবিরত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। কৃষকের পাশাপাশি বসে নেই কৃষি কর্মকর্তারাও।

এবার বন্যার পানি মাঠ থেকে দ্রুত নেমে যাওয়ায় আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রবি শস্যের উপযোগী হওয়ায় উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, বারি- ১৭ এবং ট্ররি(মাঘী) জাতের সরিষা বপণ করা সম্ভব হয়েছে। এ এলাকায় সরিষার বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছে কৃষকরা।

এদিকে কিছু কিছু জমিতে সরিষা চাষের উপযোগী না হওয়ায় কিছু কৃষকরা ঠিক সময়ে সরিষা বপণ করতে পাড়েনি। ফলে তারা অন্যান্য রবি শস্য চাষের দিকে ঝুকেছেন। কৃষকরা এই সরিষা যথা সময়ে ঘরে তুলতে পারলে এবং বিক্রয় মূল্য ভাল পেলে বন্যার কারণে রোপা-আমন ধানের ক্ষতি পুষিয়ে ইরি-বোরো ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে বর্তমানে হালকা কুয়াশা থাকার কারনে কেউ কেউ মনে করছে সরিষার কিছুটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা কৃষি অফিস থেকে ১২ টি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের হাতেগোনা কয়েকজন কৃষককে কৃষি উপকরণ, উচ্চ ফলনশীল জাতের সরিষা ও রাসায়নিক সার দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে জেলার সব কৃষককে কৃষি উপকরণ দেয়ার দাবী জানিয়েছেন তারা।

জানা গেছে, এ বছর চলতি মৌসুমে জেলার ১২টি উপজেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। শুরুতেই সরিষা ক্ষেতে পোকা-মাকড়ের আনাগোনা দেখা দিলেও মাঠ পর্যায়ে সরিষা চাষীদেরকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যথাযথ পরামর্শ ও প্রত্যক্ষ কারিগরি সহযোগিতার কারণে সরিষা ক্ষেত অনেকটা রোগ-বালাই মুক্ত হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা।

জেলার বাসাইল উপজেলার সৈদামপুর গ্রামের কৃষক হাকিম মিয়া বলেন, আমি ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। হালকা কুয়াশার কারণে সরিষার কিছুটা ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কৃষি অফিস থেকে তাকে কোন প্রকার কৃষি উপকরণ, সরিষার বীজ, রাসায়নিক সার দেয়া হয়নি।

কালিহাতী উপজেলার পারখী ইউনিয়নের দেলোয়ার হোসেন জানান, আমি এ বছর প্রায় ৪ বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। সরিষা গাছে প্রচুর পরিমান ফুল ধরায় মনে হচ্ছে এবার সরিষার আশানুরূপ ফলন পাব।

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার কুইজবাড়ী গ্রামের কৃষক লুৎফর রহমান জানান, আমি চলতি মৌসুমে ১ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করেছি। কোন প্রকার দূর্যোগ ও রোগবালাই না থাকায় এ বছর সরিষার বাম্পার ফলন পাব বলে আমি আশা করছি।

এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক জানান, এ বছর জেলার ১২টি উপজেলায় সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৮ হাজার হেক্টর কিন্তু এ বছর সরিষা চাষ হয়েছে ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে।

তিনি বলেন, এ বছর জেলায় ৪০ হাজার মেট্রিকটন সরিষা উৎপাদন হবে বলে আমরা আশা করছি। যথাসময়ে জমি চাষযোগ্য হওয়ায় এলাকার কৃষকরা সুযোগ বুঝে সরিষা চাষ করেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাদেরকে যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে কোন প্রকার ক্ষতি না হলে উপজেলায় সরিষা আবাদের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৮)