সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বেহাল দশা বিরাজ করছে দীর্ঘ দিন ধরে। জনবল সংকটের কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে দারুন ভাবে। ফলে এখানকার জনগণ সরকারের গৃহীত কর্মসূচির সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তা ছাড়া স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহ’র কর্মস্থলে গড় হাজিরার কারণে সমস্ত কাজ কর্ম চলছে কচ্ছপ গতিতে। এতে জনগণের ভোগান্তি দিন দিনই বাড়ছে। 

উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২২ জন মেডিকেল অফিসার এবং ১৩ টি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১৩ জন মেডিকেল অফিসার থাকার কথা। কিন্তু সে ক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহ, মেডিকেল অফিসার ডা. রজত কান্তি সরকার সহ আছেন মাত্র ২ জন। সান্দিকোনা উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুজ্জামান এবং বলাইশিমুল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. আলী মুহাম্মদ হোসাইন বিশেষ ব্যবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করছেন।

এদিকে ১৩ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে ৯টিতেই মেডিকেল অফিসার নেই। যে চারজন আছেন তাদের মধ্যে সান্দিকোনা ও বলাইশিমুল উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করেন। বাকিদের মধ্যে নওপাড়া উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের শিক্ষানবিস মেডিকেল অফিসার ডা. জুবায়ের হোসেন আছেন প্রশিক্ষনে এবং চিরাং উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. জিনাত ইশীতা আনসারী মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আছেন। ইউওসি ভূক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকটের কারণে কোন সিজারিং কার্যক্রম হয়না।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহ ঢাকায় স্বামীর সঙ্গে অবস্থান করেন। স্বামীও চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে তিনি ঢাকা থেকে মাসে গড়ে ৪-৫ দিন কর্মস্থলে থাকেন। গত ২০১৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ডা. জীনাত সাবাহ এখানে কর্মে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই নানা অজুহাতে তিনি এক মাসে গড়ে ৪-৫ দিন কর্মস্থলে থাকেন। স্বাস্থ্য বিভাগের প্রশাসকের এরকম উদাসীন দায়িত্বহীনতার ফলে এখানকার সকল কর্মকান্ড চলছে ধীর গতিতে। বঞ্চিত হচ্ছেন সুষ্ঠু সেবা থেকে সাধারন জনগণ। তার কর্তব্য পালনের অবহেলার অভিযোগ ওঠলেও এ ব্যাপারে প্রতিকারমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছেনা।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহর কাছে গড় হাজিরা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি মহিলা মানুষ, ঢাকা থেকে এসে এখানে দায়িত্ব পালন করতে হয়। তা ছাড়া আমার ছোট ছোট বাচ্চা আছে। তাদেরকে অযত্ন অবহেলায় রেখে এরচেয়ে বেশি সময় দেয়া আমার জন্য খুবই কষ্ট হয়।তিনি বলেন, আমি ঢাকায় বদলি হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে নেত্রকোনা সিভিল সার্জন ডা. তাজুল ইসলাম খানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য বিভাগের বেহাল দশা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জীনাত সাবাহ অফিসে নিয়মিত আসেননা এ কথা ঠিক, আমি তাকে লিখিত ও মৌখিক ভাবে বার বার সতর্ক করা হলেও এর কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। তাছাড়া ভালো কোন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এখানে আসতেও চাচ্ছেনা। দায়িত্বশীল কোন কর্মকর্তা পেলেই তিনি এখান থেকে অন্যত্র বদলি হতে বলব।

(এসবি/এসপি/ডিসেম্বর ১০, ২০১৮)