রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে বর্তমান সাংসদ কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক তিনবার সাংসদ নির্বাচিত হন। মন্ত্রিত্বও পেয়েছেন একবার।

নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নও করেছেন চোখে পড়ার মতো। এবার তার সামনে নবীন প্রতিদ্বন্দ্বী শহিদুল ইসলাম সরকার ‘সরকার শহীদ’। তিনি আগে কখনো সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। তবে মধুপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিন বার। একজন তিনবারের সংসদ সদস্য বয়সে প্রবীণ। আরেকজন তিন বারের মেয়র বয়সে নবীন। এই আসনের ভোটারদের মধ্যে নবীন-প্রবীণের এ লড়াই বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।

আ’লীগ প্রার্থী ড. আব্দুর রাজ্জাক ২০০১ সালে অষ্টম সংসদ নির্বাচনে প্রথম বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তিনি নির্বাচনে অংশ নেন। এই নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ছিলেন ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তবে তিনি তৃতীয় হয়েছিলেন। দ্বিতীয় হয়েছিলেন বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী খন্দকার আব্দুল গফুর মন্টু।

নির্বাচনে জয়লাভের পর ড. আব্দুর রাজ্জাক দলের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। এখন তিনি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী ফকির মাহবুব আনাম স্বপনকে ৮২ হাজার ৫৬১ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো নির্বাচিত হন ড. আব্দুর রাজ্জাক। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে তাকে খাদ্য, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

ড. আব্দুর রাজ্জাকের বাড়ি ধনবাড়ী উপজেলার মুশুদ্দি গ্রামে। দলের নেতা-কর্মীরা জানায়, বাড়ি ধনবাড়ীতে হলেও দুই উপজেলাতেই তিনি সমান জনপ্রিয়। বিশেষ করে মধুপুরের আদিবাসীরা অধিকাংশই তার অনুসারী।

এ আসনে বিএনপি’র নবীন প্রার্থী সরকার শহিদ ক্লিন ইমেজের কারণে সবার কাছেই জনপ্রিয়। সরকার শহীদ মধুপুরের বিখ্যাত সরকার পরিবারের সন্তান। বাবা মরহুম ময়েজ উদ্দীন সরকার টানা চারবার মধুপুর উপজেলার আলোকদিয়া ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট (চেয়ারম্যান) ছিলেন।

বিএনপির ‘পরীক্ষিত নেতা’ হিসাবে সরকার শহিদের দলের তৃণমূলেও রয়েছে শক্ত অবস্থান। জেল-জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন কিছুই তাকে জাতীয়তাবাদী আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। রাজপথের লড়াকু সৈনিক এবার দলের মনোনয়ন পাওয়ায় আসনটি ফিরে পাবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিএনপি ঘরনার ভোটাররা।

মধুপুর-ধনবাড়ী আসনের রাজনৈতিক বোদ্ধাদের ধারণা আগামী নির্বাচনে সাংসদ ড. রাজ্জাকের আতœীয়-স্বজনদের স্বেচ্ছাচারিতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তারের কারণে জনমনে কিছুটা ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষোভ নির্বাচনে প্রভাব ফেললে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী সরকার শহিদের জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই প্রকট। বিএনপি নেতাকর্মীরা নুতন প্রার্থী পেয়ে নিশ্চিত জয়ের আশা নিয়ে মাঠে নেমেছেন।

আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের মতে এ আসনটিতে বনাঞ্চলে বসবাস রত আদিবাসীরা আওয়ামীলীগের বিশেষ ভোট ব্যাংক হিসেবে পরিচিত। এ কারণে এ আসনটিতে বিএনপি প্রার্থীর জয়লাভের কোন সম্ভাবনা নেই।
এখন নেতা-কর্মীদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী মাঠে নামলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে মোকাবেলা করা যাবে বলে বিএনপির তৃণমূল নেতা-কর্মীরা মনে করেন।

(আরকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৮)