রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ১৩৮ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার সকাল থেকে টাঙ্গাইলের মাভাবিপ্রবি এলাকায় মানুষের ঢল নামে। ফুল দিয়ে আচ্ছাদিত হয়ে যায় মাজার প্রাঙ্গন।

সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা প্রদক্ষিন করে মাজারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে মাওলানা ভাসানীর মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণের মধ্য দিয়ে দিনের কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আলাউদ্দিন।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার, ডিন, ও শিক্ষক কর্মকর্তাসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। পরে মাওলানা ভাসানীর পরিবারবর্গ, ভাসানী ফাউন্ডেশন সহ বিভিন্ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এদিকে বিকেলে এই মহান নেতার জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল, মোনাজাত ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন পৃথকভাবে নানা কর্মসূচির আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, ১৮৮০ সালের এই দিনে সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। সিরাজগঞ্জে তাঁর জন্ম হলেও জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি টাঙ্গাইলে অতিবাহিত করেন। টাঙ্গাইলের সন্তোষে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন তিনি। সন্তোষে তার নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছেÑ মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

মওলানা ভাসানীর পিতার নাম হাজী শারাফত আলী। তার ডাক নাম ছিল চেগা মিয়া। ১৮৯৭ সালে পীর সৈয়দ নাসিরুদ্দীনের সঙ্গে তিনি আসাম যান। ১৯০৩ সালে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন। ইসলামিক শিক্ষার উদ্দেশ্যে ১৯০৭ সালে দেওবন্দ যান। দুই বছর সেখানে অধ্যয়ন করে আসামে ফিরে আসেন।

১৯১৭ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ময়মনসিংহ সফরে গেলে তার ভাষণ শুনে ভাসানী অনুপ্রাণিত হন। ১৯১৯ সালে কংগ্রেসে যোগদান করে খেলাফত আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে ১০ মাস কারাভোগ করেন।

১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন স্বরাজ্য পার্টি গঠন করলে ভাসানী সেই দল সংগঠিত করার ব্যাপারে ভূমিকা পালন করেন। ১৯২৬ সালে আসামে প্রথম কৃষক-প্রজা আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান। ১৯২৯-এ আসামের ধুবড়ী জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাসানচরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করেন। এখান থেকে তার নামের সাথে যুক্ত হয় ‘ভাসানী’।

ভাসানী ছিলেন বিংশশতকী ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক, যিনি জীবদ্দশায় ১৯৪৭-এ সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসাবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই দেশবরেণ্য নেতা মৃত্যুবরণ করেন। তাকে টাঙ্গাইলের সন্তোষে দাফন করা হয়।

(আরকেপি/এসপি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৮)