কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : আজ ৫ শ্রাবণ (২০ জুলাই)। গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃত
কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের ১৮১তম জন্মবার্ষিকী। অগ্রণী সাংবাদিক হিসেবে কাঙাল হরিনাথ মজুমদারের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

তিনি ১২৪০ সালের ৫ শ্রাবণ কুষ্টিয়া কুমারখালি পৌর এলাকার কুন্ডুপাড়ায় জন্মগ্রহণ
করেন। তিনি কুমারখালি থেকে প্রকাশিত ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ পত্রিকার সম্পাদক।
পত্রিকাটি ১৮৬৩ সাল (বৈশাখ ১২৭০) থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে মোট প্রায় ২২ বছর প্রকাশিত হয়। গ্রামবার্ত্তা শুরুতে মাসিক হলেও পরে পাক্ষিক, সাপ্তাহিক এবং পুনরায় মাসিক রূপে প্রকাশ হয়। কাঙাল হরিনাথ গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা পত্রিকার মাধমে সৃষ্টি করেছেন ঐতিহাসিক
অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়, সুসাহিত্যিক রায় বাহাদুর জলধর সেন, দীনেন্দধ কুমার রায়, মীর
মশাররফ হোসেনের মতো সাহিত্যিকদের। তিনি ৪০টি গ্রন্থও রচনা করেন।

অবশ্য সব প্রকাশিত হয়নি। কাঙাল হরিনাথের সাহিত্য প্রীতির পরিচয় পাওয়া যায় ‘কবিতা কৌসদী’ এবং ‘বিজয় বসন্ত’ (১৮৬৯) শীর্ষক উপ্যোসে। শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর ‘রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালিন ‘ব১⁄২সমাজ’ গ্রন্থে কুমারখালির হরিনাথ মজুমদারের প্রণীত ‘বিজয় বসন্ত’ ও টেকচাঁদ ঠাকুরের ‘আলালের ঘরের দুলাল’ গ্রন্থকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম উপন্যাস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। শৈশবে বাবা-মা হারিয়ে চরম দারিদ্যের সাথে সংগ্রাম করে কাঙাল হরিনাথ লেখাপড়া শিখেছিলেন সামান্যই। বালক বয়সে কাঙাল হরিনাথ কুমারখালি বাজারের কাপড়ের দোকানে কাজ নিতে বাধ্য হন। বেতন পেতেন দৈনিক দুই পয়সা। এরপর ইংরেজদের কুঠির হেড অফিস কুমারখালি নীল কুঠিতে (৫১টি নীল কুঠির প্রধান) শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন জীবিকার্জনের লক্ষে ̈। গবেষকদের মতে, শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-নির্যাতনের প্রতিকারের চিন্তা থেকেই পরবর্তী সময়ে কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ‘গ্রামবার্ত্তা প্রকাশিকা’ সম্পাদনা করেন।
এ পত্রিকাতেই বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইজির’র গান প্রথম ছাপা হয়। গ্রামবার্ত্তা
প্রকাশিকা সে যুগে জমিদার, মহাজন, পুলিশ, ব্রিটিশ সরকার এমনকি জোড়াসাঁকোর বাবু জমিদারদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিল। এজন ̈ তাঁর উপর পধায়ই কোর্ট থেকে মানহানির সমন ও সতর্কতাপত্র আসতো এবং সরকারি নির্দেশে মাঝে মাঝে পত্রিকা বন্ধ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর হরিনাথকে শায়েস্তা করতে পাঞ্জাবি লাঠিয়াল বাহিনী পর্যন্ত পাঠিয়েছিলেন। এই খবর পেয়ে লালন শাহ’র শিষ্যরা একতারা ফেলে সরকি-বল্লম নিয়ে পাঞ্জাবি লাঠিয়ালদের কলকাতা হটিয়ে দিয়েছিলেন।

কাঙাল হরিনাথ ১৮৫৪ সালের ১৩ জানুয়ারি কুমারখালিতে একটি বাংলা স্কুল স্থাপন করেন এবং সেখানে অবৈতনিক শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। নারীশিক্ষা প্রসারের লক্ষে তাঁর উদ্দ্যোগে ১৮৬৩ সালে কুমারখালিতে একটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। বর্তমানে সেটি ‘কুমারখালি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়’ হিসেবে পরিচিত। ১৮৭৬ সালে কুমারখালিতে অক্ষয় কুমার মৈত্রের বাবা মথুরানাথ মৈত্রের নামে কাঙাল হরিনাথের নিজ কুুটিরে একটি মুদধণ যন্ত্র স্থাপন করা হয়, যার নাম দেয়া হয়, এমএন প্রেস। ছাপাখানাটি আজও আছে কুমারখালির কুন্ডুপাড়ায় কাঙাল কুটিরে। যে কুটিরে ফকির লালন সাঁই বহুবার এসে হরিনাথের সাথে সময় কাটিয়েছেন।
(কেকে/এএস/জুলাই ২০, ২০১৪)