স্টাফ রিপোর্টার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ৩০ ডিসেম্বর। সারাদেশে বইছে নির্বাচনী আমেজ। সময় বেশি নেই, তাই ভোটারদের মন জয়ে মাঠে ব্যস্ত প্রার্থীরা। পিছিয়ে নেই রাজধানীর অন্যতম ঢাকা-৯ আসনও। এখানে প্রস্তুতি ও প্রচার-প্রচারণা সবদিক থেকে এগিয়ে রয়েছেন সাবের হোসেন চৌধুরী। অন্যদিকে নির্বাচনী লড়াইয়ে গোপনে সক্রিয় আছেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আফরোজা আব্বাস।

ঢাকা-৯ আসনটি রাজধানীর খিলগাঁও, সবুজবাগ ও মুগদা থানাধীন নাসিরাবাদ, দক্ষিণগাঁও ও মাণ্ডা ইউনিয়ন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। যেখানে নারী-পুরুষ মিলে ভোটার রয়েছে প্রায় চার লাখ ২৫ হাজার।

এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন বর্তমান এমপি এবং আওয়ামী লীগ মনোনিতপ্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তিনি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সহধর্মিণী।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকা-৯ আসনের প্রতিটি এলাকার রাস্তায় রাস্তায় নৌকার পোস্টার ঝুলছে। তবে কোথাও চোখে পড়েনি ধানের শীষের পোস্টার। এসব এলাকায় প্রতিদিনই নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নামছেন নৌকার প্রার্থী। করছেন গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ ও মতবিনিময় সভা। পাড়া-মহল্লা, অলি-গলিতে নৌকার মিছিল-মিটিং আর মাইকে বাজানো হচ্ছে নির্বাচনী গান।

অন্যদিকে, ধানের শীষের নেই কোনো প্রচারণা। চখে পড়েনি কোনো নির্বাচনী ক্যাম্পও। সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন, এলাকাছাড়া নেতাকর্মীরা। এ কারণে বিএনপির কোনো প্রচারণা নেই।

তারা বলছেন, রাজনৈতিক মামলা থাকায় গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপির বেশির ভাগ নেতাকর্মী এলাকাছাড়া। যারা এলাকায় রয়েছেন তারাও ভয়ে মাঠে নামছেন না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির প্রার্থী আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘নির্বাচনী প্রচারণায় নামলেই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালাচ্ছে। গায়েবি মামলাসহ একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। হামলার পর থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। তাহলে কীভাবে কর্মীরা কাজ করবে?’

‘হামলা হলেও মাঠ ছাড়বেন না’ উল্লেখ করে আফরোজা আব্বাস বলেন, ‘আমি ভয় পাই না। হামলা যতই হোক, আমি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাব। প্রতিদিনই প্রোগ্রাম করছি, আগামীতেও করব।’

নির্বাচনী প্রচারণার সিডিউল জানতে চাইলে বিএনপি প্রার্থী বলেন, ‘আমার নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চলবে। তবে কবে, কখন এবং কোথায় প্রোগ্রাম করব তা জানানো যাবে না। কারণ আগে জানালে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। আমি চাই না আমার নেতাকর্মীদের আর রক্ত ঝরুক। আমি মাঠে আছি, থাকব। ইনশাআল্লাহ জনগণ ভোট দেবে, জয় আমাদের হবেই।’

অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘টানা পাঁচবার এ আসন থেকে আমি নির্বাচন করছি। প্রতিটি মানুষ আমাকে চেনে। গত ১০ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। জনগণ এতে সন্তুষ্ট। তাই নারী-পুরুষ, যুবক-বৃদ্ধা সবাই একসঙ্গে আমার প্রচারণায় মাঠে নেমেছে। আমাদের ক্যাম্পেইন ভালো হচ্ছে। আমার প্রত্যাশা, আগামী ৩০ ডিসেম্বর সবাই নৌকায় ভোট দেবে। আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকা-৯ আসনটি উপহার দিতে পারব।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আফরোজা আব্বাস। আমি তাকে সম্মান করি। আমাদের বিরুদ্ধে বিএনপির প্রার্থী বেশকয়েকটি অভিযোগ করেছেন । আমি পাল্টা কোনো অভিযোগ করব না। তবে আমি বলতে চাই, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। হামলা হয়ে থাকলে থানায় অভিযোগ করুন। হামলাকারীদের চিহ্নিত করে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।’

সাবের হোসেন বলেন, “আমি সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি না, নির্বাচনে ‘ব্লেইম গেম’ খেলতে চাই না।” সহিংসতা হয়- প্রার্থীদের এমন কিছু করা ঠিক নয় বলেও জানান তিনি।

নাসির নামে বিএনপির এক কর্মী জানান, আওয়ামী লীগের লোকজন আমাদের প্রকাশ্যে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। তাই নির্বাচনী প্রচারের কৌশল পাল্টিয়েছি। আমরা এখন প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো এলাকায় নির্বাচনী প্রচারণায় নামছি। এ কারণে আগে থেকে কিছু জানানো হচ্ছে না। আগে জানালেই ঝামেলা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতা মোশারফ হোসেন জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিদিন নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। সাবের ভাই আমাদের এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। জনগণ আমাদের পক্ষে আছে। দেশের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে এবার নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন জনগণ। আশা করছি, ঢাকা-৯ আসনে নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৮)