মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : কলাপাড়ায় থেকে এখন অনার্সে পড়তে পারছি যা আমরা কখনও চিন্তাও করিণি। এবার যে প্রার্থী আমাদের কলাপাড়ায় থেকে মাষ্টার্সে পড়ার ব্যবস্থা করবে তাকেই এবার ভোট দেব। কিন্তু কোন প্রার্থীই শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না এ আক্ষেপ অনার্স দ্বিতীয় বছর ছাত্রী শারমিন আক্তারের। এ বছর পটুয়াখালী-৪ আসনে প্রথম ভোট দিবেন শারমিনের মতো ২৯ হাজার ৭৬১ জন নতুন ভোটার। যাদের অধিকাংশই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী।

সাগর ঘেষা উপকূলীয় উপজেলা কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী নিয়ে গঠিত পটুয়াখালী-৪ আসনে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে চারটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালুসহ কলেজটি সরকারিকরণ হয়েছে। অনার্স কোর্স চালু হওয়ায় দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের এখন উচ্চ শিক্ষার জন্য পটুয়াখালী,বরিশাল কিংবা ঢাকায় যেতে হচ্ছে না। সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে নারী শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া কলাপাড়া পৌর শহরে খেপুপাড়া মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ ছাড়াও দূর্গম চরাঞ্চল বেষ্টিত রাঙ্গাবালী উপজেলায় রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজ ও মৌডুবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ হওয়ায় উপকূলীয় এলাকায় শিক্ষার হার ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়া রাঙ্গাবালীতে একটি মহিলা কলেজসহ দুটি কলেজ ও একটি কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, গোটা উপজেলায় ডিগ্রি কিংবা অনার্স কলেজ নেই। এইচএসসি পাশ করে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন এলাকায় উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে হচ্ছে। ছেলেরা বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হলেও অর্ধেকেরও বেশি নারী শিক্ষার্থীকে এইচএসসি পাশ করেই লেখাপড়া শেষ করতে হচ্ছে। তাই আগামী নির্বাচনে যে প্রার্থী তাঁদের উচ্চ শিক্ষার নিশ্চয়তা দেবেন তার পক্ষে থাকবে শিক্ষার্থীরা।

এখনও বিদ্যুতের খুঁটি বসেনি রাঙ্গাবালী উপজেলা সদরসহ পাঁচটি ইউনিয়নে। জেলাসদর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় যাতায়তের জন্য এখানকার মানুষের ভরসা লঞ্চ কিংবা ট্রলার। বর্ষা মেীসুমে নদী উত্তাল থাকায় এক ইউনিয়ন থেকে অন্য অন্য ইউনিয়ন ও কলেজে-স্কুলে যেতে হয় চরম ঝুঁকি নিয়ে। তারপরও শিক্ষায় আগ্রহী হচ্ছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এ কথা বলেন রাঙ্গাবালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মো. তারিকুল হাসান।

তিঁনি বলেন, তার কলেজে এইচএসসি প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে প্রায় ৭৫০ শিক্ষার্থী রয়েছে। এ শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পাশ করে অণ্যত্র ভর্তির জন্য যেতে হবে। রাঙ্গাবালীতে যদি ডিগ্রি ও অনার্স কোর্স চালু হতো তাহলে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষায় আগ্রহী হতো। ১৯৯৮ সালে কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে চরাঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার হার ক্রমশ বাড়ছে।

সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের সুস্মিতা জানায়, আগামী বছর ডিগ্রি পাশ করে তাকে মাষ্টার্সে ভর্তির জন্য পটুয়াখালী কিংবা বরিশালে যেতে হবে। পরিবার না চাইলে তাকে হয়তো ডিগ্রি পাশ করেই লেখাপড়া শেষ করতে হবে। কলাপাড়ায় যদি মাষ্টার্স ও এলএলবি কোর্স চালু হতো তাহলে উচ্চ শিক্ষার নিশ্চয়তা থাকতো। তাই প্রার্থীদের কাছে এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের সাথে শিক্ষার উন্নয়নে মাষ্টার্স ও এলএলবি কোর্স চালু করার প্রতিশ্রুতি চান। তার মতো একই দাবি নতুন ভোটার কলেজ ছাত্রী ঈশিতা, স্বর্না, তাহমিনা, আরিফুল, জাহিদুল ইসলাম ও মেীটুসির।

কলাপাড়া উপজেলায় ছয়টি কলেজের মধ্যে সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজে অনার্স কোর্সে প্রায় ১৩’শ, ডিগ্রি কোঠায় প্রায় পাঁচশ এবং উম্মুক্ত কোঠায় প্রায় সাড়ে চারশ শিক্ষার্থী রয়েছে। এছাড়া আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ, মহিলা ডিগ্রি কলেজ, খানাবাদ ডিগ্রি কলেজ, মুক্তিযোদ্ধা মেমোরিয়াল কলেজ, ধানখালী ডিগ্রি কলেজ ছাড়াও দুটি ফাজিল মাদরাসায় প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। কলাপাড়ায় মাষ্টার্স ও এলএলবি কোর্স চালু হলে এই শিক্ষার্থীরা নিজ এলাকায় উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে। এ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪০ ভাগ নারী যাদের অধিকাংশই উচ্চ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজের অধ্যক্ষ দেলওয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার শিক্ষার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করছে। তাই পটুয়াখালী-৪ নির্বাচনী এলাকায় দুটি কলেজ ও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণ করেছে। এই কলেজে যেহেতু অনার্স চালু হয়েছে সরকারের মাষ্টার্স কোর্স চালু করার বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এখানে মাষ্টার্স কোর্স চালু হলে উপকূলে নারী শিক্ষার হার যেমনি বাড়বে তেমনি ডিগ্রি ও অনার্স পাশ করে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার কমবে।

এ বিষয়ে পটুয়াখালী-৪ আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী ও আলহাজ্ব জালাল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. মহিব্বুর রহমান বলেন, এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন ও শিক্ষার প্রসারে তিঁনি ও তার পরিবার দীর্ঘ বছর ধরে কলাপাড়ায় কাজ করছে। পিতার নামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছেন। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা বৃত্তি দিয়ে সহায়তা করছেন। তিঁনি বিজয়ী হলে কলাপাড়ার শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার বাঁধা দূর করবেন বলে জানান।

বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম ম্শোাররফ হোসেন বলেন, সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হওয়ার এখন কোন পরিবেশই নেই, সেখানে নতুন ভোটাররা কীভাবে ভোট প্রদান করবে। শিক্ষার উন্নয়নে তিঁনি কাজ করবেন বলে জানান।

(এমকেআর/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৮)