অমল তালুকদার, বরগুনা : সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রল হরিণ হারিয়ে যাচ্ছে। একশ্রেণির চোরাই শিকারীদের দৌরাত্যে বছরের পর বছর চলছে এই মহোৎসব!

বিশ্বের ঐতিয্য বাংলাদেশের ম্যানগ্রোফ সুন্দরবন। এই বনের দৃষ্টিনন্দন চিত্রল হরিণ দেখার জন্যে এই মৌসুমে দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিয়াসীরা ছুটে আসে সুন্দরবনের সুপতি,কটকা দুবলারচর সহ নানা পর্যটনজোনে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে যার জন্য মানুষ শীতের এই মৌসুমে ছুটে আসে; সেই মায়াবী হরিণ-ই হচ্ছে এখানে হরিলুট! বছরের বিষেশ সময়গুলোকে টার্গেট করে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার পেশাদার চোরাশিকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা উপজেলার বগি, তাফালবাড়িয়া,রায়েন্দা এবং বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার জ্ঞানপাড়া, দক্ষিণ চরদুয়ানী, খলিফারহাট, কাঠালতলী এলাকার চিহ্নিত চোরাই শিকারীরা এখন সক্রিয়।

সুন্দরবন থেকে রাতের আধারে শিকার করা হরিণ বনেই জবাই করা হয়। মাংস মাছের ঝুড়ি আর চিংড়িপোনার হাড়িতে পাচার হয়ে যায় আশেপাশের অঞ্চলে। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নৌপথে এবং সড়কপথে বরফজাত মাংস রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন শহর-বন্দরে পৌছে যাচ্ছে নির্বিঘ্নে! কখনও কখনও জ্যন্ত হরিণও ট্রলারের পাটাতনের নীচে বহন করে তিরে আনা হয়। বর্তমান মৌসুমে বরফও প্রয়োজন হয় কম। এসব কারণে পাচারকারীদের এই মৌসুমটি হচ্ছে মোক্ষম সময়।

অভিযোগ রয়েছে সুন্দরবন সন্নিহিত এলাকার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার কারা কারা অপরাধ জগতের সাথে জড়িত, কে কোথায় কি করছে;বনের মূল্যবান সম্পদ পাচার, মাদকের চালান নিয়ে কোথায় কিভাবে লেনাদেনা হচ্ছে; তার সংবাদ বেমালুম তারা যেনো যানেন-ই না।

একটি সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে, সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চলের পুলিশ, বনবিভাগ এবং কোষ্টগাডেরর্ কতিপয় অসাদু কর্মকর্তা সোর্স নিয়োগ দিয়ে এই অপকর্ম দেদারছে চালিয়ে আসছে। সোর্সের মাধ্যমে নিয়মিত মাসশেষে ’মাসোয়ারা’পাচ্ছে ওই দুর্নীতিবাজ প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। কখনও কখনও ধরা পরলেও পাচারকারীরা কৌশলে পালিয়ে যায় বলে দাবি কোষ্টগার্ড সহ আইনের রক্ষকদের। এলাকার অভিজ্ঞমহলের প্রশ্ন হরিণের মাংস রেখে পালিয়ে যাওয়া পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনছে না কেনো? তাদের খুজে বের করা কি খুব অসম্ভব? কিন্তু প্রশাসনের এই ব্যর্থতার কারনে বার বার হরিণের গলায় জুটছে ধারালো ছুরি। আর ইচ্ছে করেই ওই রক্তের অভিশাপ ভাগাভাগি করে গায়ে মেখে নিচ্ছে সরকারের নিয়োগ দেয়া কতিপয় আইনের রক্ষক নামের দুর্বৃত্ত!

সম্প্রতি পাথরঘাটা সংলগ্ন বলেশ্বর নদীর রুহিতা এলাকা থেকে ১টি নৌকা সহ ৩০ কেজি জবাইকৃত হরিণের মাংস উদ্ধার করে কোষ্টগার্ড। ্এঘটনায়ও এক-ই উপায়ে পাচারকারীরা পালিয়ে যায় বলে কোষ্টগার্ড জানায়।

(এটি/এসপি/ডিসেম্বর ২১, ২০১৮)