স্টাফ রিপোর্টার : মৌলভীবাজারে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া জোরপূর্বক স্কুল ভবন ও খেলার মাঠের উপর দিয়ে মূল সড়ক এড়িয়ে স্কুলের ডিপোজিট লাইন থেকে বিদ্যুৎের নতুন সংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে জাহিদ নামে স্থানীয়এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। 

জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার ১২নং গিয়াসনগর ইউনিয়নের কদুপুর গ্রামে অবস্থিত হাফিজাভানু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের উপর দিয়ে ডিপোজিট লাইন থেকে স্থানীয় জাহিদ মিয়ার বসত বাড়িতে পল্লিবিদ্যুৎের নতুন সংযোগ লাইন নিতে স্কুল পরিচালনা কমিটির অনুমতি ছাড়া এলাকাবাসীর প্রবল আপত্তি সত্তেও স্থানীয় এক ব্যাক্তি ও পল্লি বিদ্যুৎের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে কাউকে না জানিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু করলে গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) স্কুল কর্তৃপক্ষ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পল্লিবিদ্যুৎের জোনাল কার্যালয়ের ডিজিএম বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়। এঘটনার পর পল্লি বিদ্যুৎের কর্মকর্তারা সরেজমিনে গিয়ে পরিদর্শন করেন। জানা যায় পল্লি বিদ্যুৎের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে আসার কিছুক্ষণ পরই অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে নতুন করে লাইনে সংযোগ দেওয়ার অভিযোগ উঠে।

বিষয়টি নিয়ে স্কুল পরিচালনা কমিটি ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান পল্লি বিদ্যুৎের কর্তাব্যক্তিদের সাথে পূণরায় যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানালে পরে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়।

সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্কুল ভবনের সামনের মাঠে ছুটির সময়ে শিক্ষার্থীরা যে জায়গায় খেলাদোলা করে সেই মাঠের উপর দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় স্কুল ভবনের সাথে অবস্থিত বিদ্যুৎের একটি পুরাতন খুটির ডিপোজিট লাইন থেকে স্থানীয় জাহিদ মিয়ার বসত বাড়িতে নতুন সংযোগ লাইনটি টানানো হলে স্কুলের শিক্ষক ,শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়।

স্কুলের অভিবাবক সৈয়দ ময়নু জানান, স্থানীয় পঞ্চায়েত ও স্কুল পরিচালনা কমিটির অনুমতি না নিয়ে এভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় অভিবাবকরা ক্ষোব্ধ। এই সংযোগের ফলে যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।

স্কুলের অভিবাবক আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, পঞ্চায়েত কমিটি নিষেধ করা সত্বেও আমাদের গ্রামের লুদু মিয়া নামের এক ব্যক্তির পশ্রয়ে এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে জোরপূর্বক জাহিদ মিয়া তার বসত বাড়িতে মোট অংকের টাকার বিনিময়ে বিদ্যুৎ সংযোগ করিয়েছে। তিনি বলেন এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ এবিষয়ে পূনরায় আপত্তি জানালে পরবর্তিতে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়। তিনি বলেন পল্লিবিদ্যুৎের যে অসাধু কর্মকর্তারা এবিষয়ে জড়িত আমি অনুরোধ করব তাদের বিরুদ্ধে যেন পল্লিবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেন।

এ-বিষয়ে হাফিজাভানু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিমা রাণী দে বলেন, গত শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে স্কুল বন্ধ থাকায় বিশ্বস্থসূত্রে খবর পেলাম আমার স্কুলের পাশের বাড়ির জাহিদ মিয়া স্কুল কর্তৃপক্ষের সাথে কোন প্রকার আলাপ আলোচনা না করে স্কুলের নিজস্ব বৈদ্যতিক খুটির ডিপোজিট লাইন থেকে স্কুলের উপর দিয়ে নতুন করে লাইন টানছে। বিষয়টি জানার পরপরই আমি স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে যোগাযোগ করে তাদেরকে অবহিত করলে তারা ঐদিন বিকালের দিকে জাহিদ মিয়াকে স্কুল মাঠের মধ্যে দিয়ে লাইন না টেনে মূল রাস্থা দিয়ে লাইন টানার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, এসময় জাহিদকে নতুন করে বিদ্যুৎ লাইন সংযোগে বৈদ্যতিক খুটি,অর্থসহ সব রকমের সহায়তার আশ্বাস দিলে সে রাজি হলেও পরবর্তিতে স্থানীয় কয়েকজনকে ম্যানেজ করে লাইন টানার কার্যক্রম অত্যান্ত গোপনে সম্পন্ন করে।

এ বিষয়ে মৌলভীবাজার পল্লিবিদ্যুৎের জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জাকির হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন পল্লি বিদ্যুৎের কয়েকজন কর্মকর্তার যুগসাযোশে আমাকে না জানিয়ে লাইন টেনে বিদ্যুৎের সংযোগ দেয়া হয়েছিল, বিষয়টি জানার পরপরই নতুন সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিনি বলেন স্কুলের উপর দিয়ে বিদ্যুৎের নতুন সংযোগের জন্য যে লাইন টানা হয়েছিল সেটিও বাতিল করা হবে।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ২৩, ২০১৮)