এক জোড়া চটি জুতা

"ও জীবন জীবনরে তুই যে একটা ভাঙ্গা আয়না"


জীবন মানেই যুদ্ধ"জীবন মানেই জীবনের তাড়নায় ছুটে চলা"জীবন মানেই অন‍্য জীবনের জন্য পথ চেয়ে থাকা"আবার জীবন মানেই প্রিয় মানুষের ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে মৃত্যু পথযাত্রী হয়ে ফিরে এসে দেহের মাঝে নতুন রূপ ও প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়া।ভালোবাসার অসিম শক্তির কাছে সব কষ্ট যেনো নিমিষেই দূর হয়ে যায়।যার প্রমাণ খুঁজে পেলাম আমি আমার ৪২তম জন্মদিনে আমার একমাত্র বড় মেয়ের কাছ থেকেই।মেয়েটা আমার সত্যিই ঠিক যেনো বাবার রূপ পেয়েছে;তাই খুব সহজেই বাবার ভালো মন্দ বুঝতে পারে।এবার ক্লাস অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী ফারিয়া খানম লাবিবা।২৮শে ডিসেম্বর ছিল আমার ৪২তম জন্মদিন।কেউ আমার জন্মদিনের কথা তেমন ভাবে মনে রাখেনি কিন্তু মেয়েটা ঠিক তার ডাইরীর পুরনো কোনো পাতায় তার আপন জনের জন্মদিনগুলো লিখে রেখেছেন।আমি একটু সমস্যার মধ্যে বিগত একটি মাস কাটিয়ে আসছি সেই সমস্যার কথা আমার আদরের লক্ষী মেয়েটি অবলোকন করতে পেরেছে, তাই সে টিফিনের টাকা থেকে টাকা বাঁচিয়ে বাবার ৪২তম জন্মদিনের গিফট কিনেছেন মায়ের সঙ্গে মার্কেটে গিয়ে।হয়তোবা পাঠক আপনারা ভাববেন কি এমন গিফট!হ‍্যা অবশ্যই বলবো কেননা এই গিফট হলো আমার বিগত ৪১টি বছরের মধ্যে এই ৪২তম জন্মদিনের সবচাইতে বড় সুখের পাওয়া।

সত্যিই অদ্ভুত জগতে কতটা অসহায় আমি তা শুধুমাত্র আমার মেয়েটি বুঝতে পেরেছে;এইতো কিছুদিন আগেই আমি বাসায় বসে বলাবলি করতে ছিলাম যে ঠান্ডার জন্য ফ্লোরে হাটতে অসুবিধা হয় আমার কেননা আমি অনেক দিন থেকে "সাইনাস"ঠান্ডা জনিত রোগে ভুগছি তাই অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যায় আমার।সেই দিনের কথা মেয়েটি মনোযোগ সহকারে শুনেছিল এবং তার প্রতিফলন প্রকাশ করেছে বাবার ৪২তম জন্মদিনে একজোড়া "কাঙ্গারু"মডেলের দুই ফিতা যুক্ত চটি জুতা গিফট দিয়ে।লক্ষী মেয়েটি বাবাকে খুবই ভালোবাসে তাই এই গিফট আমার জীবনের সবচাইতে বড় গিফট তা কোনো মনি মুক্তার মাধ্যমে পূরণ করতে পারবেনা কেউ।মামুনী সত্যিই তুমি প্রমাণ করতে পেরেছো তুমিই যে বাবার একমাত্র জীবনের আলো যে আলোর মাধ্যমে বাবা অন্ধকার দূর করতে সক্ষম হবে এবং সকল বালা মসিবত থেকে মহান আল্লাহর রহমতে সহায়তা পাবেন।তুমি সুখী হবে মা তোমার জীবন সত্যি অনেক সুখের হবে।তুমি যে বাবার কষ্টে বাবার প্রতি তোমার কোমল হাতদুটো বাড়িয়ে দিলে সেই বাবা যে মহান আল্লাহর দরবারে সবসময় তোমার সুখী জীবন কামনা করে দোয়া চাইবে।

প্রিয় পাঠক সত্যিই আমি আজ গর্বিত বোধ করছি।আমার সন্তানের ভালোবাসা পেয়ে পৃথিবীর সব সুখ খুঁজে পেলাম এক জোড়া ১৫০= টাকা দামের জুতার মধ্যে।এই ভালোবাসা আমাকে নতুন করে জীবন সাজিয়ে নিতে প্রেরণা যোগাবে যা হয়তোবা আমি কোটি টাকার মধ্যে খুঁজে পেতাম না কখনও।এই ৪২তম জন্মদিন আমার জীবনের সবচাইতে পরম সুখের দিন।আমি শিক্ষা পেলাম আজ এই জন্মদিন উপলক্ষে।অথচ অনেক আপন মানুষ অনেক কাছের মানুষ জানেনা আমার জন্মদিনের কথা, অথচ আমার কলিজার টুকরো ফারিহা খানম(লাবিবা)তার বাবার জন্মদিন চির স্বরণীয় করে রাখতে নিজের টিফিনের টাকার অংশ থেকে বাবার কষ্ট দূর করতে চেষ্টা করেছেন।সত্যিই আমি যদি এখন মরেও যাই তাতে কষ্ট নেই বিন্দু পরিমাণ।কেননা মামুনী যে তার বাবার আর্দশ মেনে নিয়েছে বাবার মতোই মায়া মমতা ছড়িয়ে দিয়েছে পৃথিবীর সকল প্রান্তে।

আমি আমার জন্য কখনও মহান আল্লাহর কাছে কিছু চাইবোনা আমি শুধুমাত্র আমার একমাত্র মেয়ে ও একমাত্র ছেলের জন্য সবসময় মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবো যেনো তিনি আমার সন্তানদের প্রতি সবসময় সদয় হয়ে তাদের কষ্ট দূর করে দেন এবং পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে আছে ততদিন যেনো সকল বিপদ আপদের হাত থেকে রক্ষা করেন এছাড়াও নবী রাসূলের নিয়ামাবলী মেনে নিয়ে, ইসলামের কথামতো যেনো তাদের সুন্দর ও সুখের জীবন পরিচালনা করতে পারেন।আমি সকল বন্ধুদের ও সকল শুভাকাঙ্ক্ষী ভাই ও বোনদের কাছে তাদের সুখের জীবনের জন্য দোয়া কামনা করছি। আমার সামান্য লেখা কথামালা শেষ করবো দুটি কথার মধ্যে, এই পৃথিবীর সকল সন্তানেরা যেনো তাদের জন্মধারনী মা ও জন্মদাতা পিতার আর্দশ মেনে নিয়ে তাদের সুন্দর ও সুখের জীবন পরিচালনা করতে পারেন।মহান মাওলার পরেই যে পিতা মাতার স্থান সন্তানের কাছে।তাই কোনো পিতা মাতাকে যেনো কোনো ভাবেই আমরা কষ্টের মধ্যে ফেলে রেখে সুখের সন্ধান না করি,তাহলে যে আমরা কখনও সুখী হবোনা।মহান আল্লাহ তাআলা যে কখনও ক্ষমা করবেন না সেই সকল সন্তানদের।

আমার পরিবারের জন্য আমি সবসময় মহান আল্লাহর নিকট দোয়া চাইবো যেনো তিনি আমার পরিবারের প্রতি সহনশীল হয়ে তাদের সকল বিপদ আপদ দূর করে দিয়ে এই পৃথিবীতে এই সমাজের মধ্যে সামাজিক ভাবেই যেনো অন‍্য পাচ জন মানুষের মতো চলাফেরা করার তৌফিক দান করেন আমিন।