স্টাফ রিপোর্টার : বিদায়ী বছর ২০১৮ সাল শেষে দেশের অধিকাংশ বাণিজ্যিক ব্যাংকে বে‌ড়ে‌ছে পরিচালন মুনাফা। বিভি‌ন্ন ব্যাংক সূ‌ত্রে জানা গে‌ছে, এবার ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফার বড় অংশই এসেছে কমিশন, সার্ভিস চার্জ, বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার আয় থেকে।

ব্যাংকের আয়ের প্রধান খাত সুদ হলেও এবার এই খাত থেকে আদায় হয়েছে খুবই কম। যে কারণে মুনাফার অঙ্ক খুব বেশি বাড়েনি। অনেক ব্যাংক হিসাবে শুভঙ্করের ফাঁকির মাধ্যমে মুনাফা বাড়লে নিট মুনাফা কম হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এর মধ্যে বেশ কয়েকটি ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর ফলে এই পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকের ঋণ ও খেলাপী ঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া এবং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে লোকসান দেয়ায় এর বিপরীতে প্রভিশনের পরিমাণ আরও বাড়বে। ফলে ব্যাংকগুলোর নিট মুনাফা আরও কমবে।

এ ছাড়া ব্যাংকগুলোকে গত বছরের পরিচালন মুনাফা বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিতে হবে ও স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডারদের জানাতে হবে।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর বে‌শিরভাগই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। ব্যাংকগুলো কিছুদিন পরে তাদের এ মুনাফার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে পেশ করবে। এরপর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের জন্য এসব তথ্য অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হবে। এর আগে যেকোনো মাধ্যমে তা প্রকাশের ওপর বিএসইসির বিধি-নিষেধ রয়েছে। এ কারণে আপাতত ব্যাংকগুলো তাদের পরিচালন মুনাফার তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে না। তবে বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু ব্যাংকের পরিচালন মুনাফার তথ্য পাওয়া গেছে।

ব্যাংকগুলো থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ব্যাংকিং কার্যদিবস শেষে পূবালী ব্যাংকের মোট পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৯১৫ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ২ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৯০৬ কোটি টাকা। ইস্টার্ন ব্যাংক মুনাফা করেছে ৭৮০ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৭৫০ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়া মুনাফা করেছে ৮১১ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৬৭১ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৬৫৫ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ৫৩৫ কোটি টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, যেকোনো ব্যবসার প্রবৃদ্ধি খুবই স্বাভাবিক। ব্যাংকগুলোর পরিচালন মুনাফাতেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে মুনাফা খুব সাংঘাতিক বেড়ে যাবে তা নয়। এ ছাড়া ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা প্রকৃত মুনাফা নয়। বছর শেষে পরিচালন মুনাফা থেকে কর, প্রভিশনসহ অনেক কিছু বাদ দিয়ে নিট বা প্রকৃত মুনাফা হিসাব করা হয়ে থাকে। ফলে মুনাফা খুব বেশি বাড়বে বলে মনে হয় না।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৩৬০ কোটি টাকা। মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫১৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৪১৭ কোটি টাকা। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৪৭১ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৩৬৯ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৬৮ কোটি টাকা, যা আগের বছরে ছিল ৭১১ কোটি টাকা। বছরের ব্যাংকিং কার্যদিবস শেষে নতুন ব্যাংকগুলোর মধ্যে সাউথ বাংলাদে ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০৫ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ১৮২ কোটি টাকা।

একইভাবে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক মুনাফা করেছে ২০৩ কোটি টাকা। মধুমতি ব্যাংক মুনাফা করেছে ১৯৭ কোটি টাকা। গত বছর যা ছিল ১৫১ কোটি টাকা। এনআরবি ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯১ কোটি টাকা। যা আগের বছর ছিল ৮৫ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংক মুনাফা করেছে ৯৩ কোটি টাকা। গত বছর ছিল ১০২ কোটি টাকা। এ ছাড়া সরকারের বিশেষায়িত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড মুনাফা করেছে ১১৬ কোটি টাকা। গত বছর যা ছিল ১১৫ কোটি টাকা।

পরিচালন মুনাফা ব্যাংকের প্রকৃত মুনাফা নয়। নিট মুনাফাই ব্যাংকের প্রকৃত আয়। পরিচালন মুনাফা থেকে ব্যাংকগুলোকে আগে নিয়মিত ঋণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে প্রভিশন (নিরাপত্তা সঞ্চিতি) রাখতে হবে। নিয়মিত ঋণের বিপরীতে প্রভিশন ১ থেকে ২ শতাংশ, খেলাপির মধ্যে নিম্নমান ঋণে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক ঋণে ৫০ শতাংশ এবং মন্দ ঋণে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। এর পরে মূলধন বাড়াতে তহবিলের একটি অংশ নিতে হবে রিজার্ভ তহবিলে। পরিশোধ করতে হবে ৪০ শতাংশ আয়কর। এরপরে যা থাকবে তা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া যাবে।

ফলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীকে অপেক্ষা করতে হবে নিট বা প্রকৃত মুনাফার হিসাব পাওয়া পর্যন্ত। আবার অনেক ক্ষেত্রেই নিট মুনাফা হলেও তার সম্পূর্ণ অর্থ লভ্যাংশ আকারে বিতরণ করা হবে না।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০১, ২০১৯)