রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মামলা তুলে না নেওয়ায় ধর্ষিতার বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এ সময় বসত ঘরের জানালা ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়েছে টাকা, সোনার গহনা ও মোবাইল সেট। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ভুয়া বিয়ের মাধ্যমে অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়া এক নারীকে ২০১৭সালের ১১ জুন শ্যামনগর উপজেলার যাদবপুর গ্রামের সুকুমার মণ্ডল ও দেবীপুর গ্রামের মাদ্রাসা শিক্ষক গোলাম রসুল বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ফুলবাড়ি গ্রামের আবু বক্কর ছিদ্দিকের খুলনার বাড়িতে আটক রাখে। সেখানে পাঁচদিন যাবৎ ছিদ্দিক, সুকুমার ও গোলাম রসুল পালাক্রমে ধর্ষণ করে ওই নারীকে।

১৬ জুন রাইসা ক্লিনিকে ওই নারীর গর্ভপাত ঘটানো হয়। পরে তাকে বিভিন্ন স্থানে রেখে ২৫ জুন ছিদ্দিকের বোন রোজিনার মাধ্যমে বাড়ির পাশে নিয়ে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। থানা মামলা না নেওয়ায় গত বছরের ২৬ জুলাই ওই নারী বাদি হয়ে সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ওই তিন জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে থানা মামলা নিলেও আসামীদের দারা প্রভাবিত হয়ে তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক লিটন মিঞা ওই বছরের ৬ ডিসেম্বর আদালতে সকল আসামীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।

মামলা তুলে নিতে রাজী না হওয়ায় ওই নারীর ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও অপহরণ মামলায় আসামী করা হয়।

মামলার বিবরণে আরো জানা যায়, পুলিশের চুড়ান্ত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ওই নারী সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে না- রাজির আবেদন করলে বিচারক তিন আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেন। এরপর থেকেই মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বাদি ও তার পরিবারের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। এরই অংশ হিসেবে ধর্ষিতার কলেজ পড়ুয়া ভাই এর বিরুদ্ধে আসামী ছিদ্দিকের মেয়েকে দিয়ে একটি পরিকল্পিত ধর্ষণের মামলা দেওয়া হয়।

সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলি জানান, আগামি ১০ জানুয়ারি গণধর্ষণের মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য আছে। এ রায়কে ঘিরে আসামীরা বেপরোয়া হয়ে ওঠে। বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সুকুমার মণ্ডল, গোলাম মোস্তফা, অঅবু বক্কর ছিদ্দিক, মাদক ব্যবসায়ি রজব আলীসহ কয়েকজন ধর্ষিতার বাড়ির জানালা ভাঙচুর করে মোবাইল সেট, একটি সোনার চেইন ও নগদ টাকা লুটপাট করে যাওয়ার আগে মামলা তুলে না নিলে হত্যার হুমকি দিয়ে চলে যায়।

শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক শঙ্কর কুমার ঘোষ যাদবপুর গ্রামের এক গণধর্ষিতার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। ঘটনার সত্যতা পেয়ে তাদেরকে অভিযোগ দিতে বলা হয়। ওই ধর্ষিতা বাদি হয়ে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন সিদ্দিক, সুকুমার, গোলাম রসুল ও রজব আলীর বিরুদ্ধে । থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যশোর থেকে ফিরে এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ০৩, ২০১৯)