ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরে ৪৮ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমিতে এবারে বাম্পার আলুর ফলন হয়েছে। জেলার চাহিদা পূরণ করে অতিরিক্ত অর্জিত আলু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রেরণ করা হচ্ছে।

আলু চাষের মৌসুমের শুরু থেকে অনুকুল আবহাওয়া, কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শ, রাসায়নিক সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহ থাকায় এবারে জেলায় কৃষকেরা উচু-নিচু প্রায় সম্ভাব্য আলু চাষযোগ্য জমিতে চাষীরা আলু চাষ হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে গেলেনা, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, ষ্টারিজ, ক্যারেজ, লেডিরোসেডা, পেটনিস জাতের আলু কৃষকেরা বেশি করে চাষ করেছে। এসব জাতের আলুর অধিক ফলন হওয়ায় কৃষকদের আলুর বীজ বোপন করতে কৃষি বিভাগ উৎসাহ দিয়েছে।

জেলা কৃষি অধিদপ্তর জানান, চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ৪৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। উৎপাদনে ফলন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৮ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত ৫ হাজার ৭১৪ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়ে । অর্জিত আলু থেকে উৎপাদন হয়েছে ৯ লক্ষ ৭৮ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০২টি ইউনিয়ন এবং ৯টি পৌরসভায় বছরে আলুর চাহিদা প্রায় ৫ লক্ষ মেট্রিক টন। অতিরিক্ত উৎপাদিত ৪ লক্ষ ৭৮ হাজার মেট্রিক টন আলু জেলার বাহিরে সরবরাহ করা হচ্ছে।

আলু চষি জমি থেকে আলু তুলতে যে শ্রমীক খরচ বহন করতে হিমশিম খায়, তাছাড়া জেলার বাহিরের ব্যবসায়দের সাথে যোগাযোগ করতে না পারায় তারা স্থানীয় মধ্যভোগী আলু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করে ফলে তাদের চেয়ে বেশী লাভবান হচ্ছেন মধ্যভোগী আলু ব্যবসায়ীরা।

আলু চাষি মকবুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ আলুর বাজারে আলুর দাম কম হওয়ায় তেমন বেশি লাভ হবেনা, গত কয়েকদিন আগে আলু বাজার ছিলো ২৯ শত টাকা বস্তা এখন আলু বিক্রয় হচ্ছে ২৬শত টাকা বস্তা।

আলু চাষি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ দিযেছি এখনও এখনো আলু তোলা হয় নাই, সম্পূর্ণ আলু তোলার পর বুঝা যাবে লাভ না ক্ষতি। অনেক আলু চাষি তাদের জমি থেকে সরাসরি মধ্যভোগী আলু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রয় করার কারণে তারা বেশি একটা লাভ করতে পাচ্ছেনা ।

আলু চাষি রশিদুল আলম বলেন, এক বিঘা জমিতে আলু চাষ করলে ২০ বস্তা আলু হয়। ২০ বস্তা আলূ বিক্রয় করলে ৪০ হাজার টাকা বিক্রয় হবে সব খরচ বাদ দিলেও বিঘায় ৩০ হাজার টাকা লাভ টিকে।

মধ্যভোগী আলু ব্যবসায়ী মামুন আলী বলেন, আমরা কৃষকের জমি থেকে কম দামে আলু কিনে জমি থেকে ভ্যানে করে নদীতে নিয়ে এসে ধুয়ে বস্তা করি এখান থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রয় করি। এখানে শ্রমীক খরচ দিয়ে মোটমুটি ভালোই লাভ হয়।

কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতি বিঘা জমিতে এস্টারিজ, রোসাগোল বীজ দিয়ে ৯০ থেকে ১০০ মণ ফলন হয়। মণ প্রতি প্রায় ৩৬০-৪০০ টাকা উৎপাদন খরচ পড়লেও বর্তমানে আলুর বাজার দর মণ প্রতি ২৪০-২৬০ টাকা পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে চরম লোকসানের মুখে পড়েছেন আলু চাষিরা। খেত থেকে আলু উত্তোলনের খরচ মেটাতে অনেক কৃষক কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে আলুর উৎপাদন খরচ উঠাতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের তৈয়ব আলী জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রায় ১১ বিঘা জমিতে আলুর আবাদ করেছেন। গত বছরের চেয়ে এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। ভাল দাম না থাকায় লোকসান গুনতে হচ্ছে। প্রতি বিঘা আলুর জমিতে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় আলুর ফলন কমপক্ষে ৮০ উপরে ১২০ মণ পর্যন্ত আসে। তিনি আরও জানান, সরকার যদি আলু বিদেশে রপ্তানি করার সুযোগ করে দেয় তাহলে আলু চাষিরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে পারে।

বাহনপড়ি গ্রামের কৃষক তপন কুমার রায়, ঈসা মিয়া, মূসা আলী, আলম মিয়া জানান, আমরা অনেক পরিশ্রম করে আলুর আবাদ করেছি। তাই এ বছর ফলনও ভালই হয়েছে। কিন্তু আলুর দাম না থাকায় এবছর কৃষকের লোকসান গুনতে হবে। যে সব কৃষকের নিজস্ব জমি নেই তারা অন্যের জমি বর্গা নিয়ে আলু চাষ করেছে। যদি আলুর দাম না বাড়ে তাহলেজেলার সব কৃষকের কপালে দুঃখ আছে।

তারা আরও জানান, আমাদের একমাত্র ভরসা সরকার। যদি সরকার আলুর বাজার মূল্য নির্ধারণ করে দেয় তাহলে আমাদের মত কৃষকের লোকসান গুনতে হবে না। তাদের দাবি এ উপজেলায় আলু সংরক্ষণের জন্য অন্তত একটি হিমাগার ও প্রতি বছের থেকে সরকার কুড়িগ্রামের কৃষকদের কাছ থেকে আলু সংগ্রহ করে এবং তার বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুবুর রশিদ জানান, এ বছর উপজেলায় প্রায় এক হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আলুর চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনকূলে থাকায় আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। আলু চাষে কৃষি বিভাগ সব সময় মাঠে গিয়ে কৃষকদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করেছে। তবে আলুর দাম না কৃষকরা দুঃচিন্তায় পড়েছেন। যদি সরকার আলু বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করে তাহলে হয়তো ন্যায্য মূল্য পেয়ে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং পরবর্তীতে আলরু চাষ অব্যাহত রাখবে।"

(এইচ/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০১৯)