শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : আমদানি-রপ্তানিকারসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবির প্রেক্ষিতে কয়েক বছর আগেই মোংলা কাস্টম হাউস খুলনা থেকে মোংলা বন্দর এলাকায় পূর্ণাঙ্গ স্থানান্তরের সরকারি সিদ্ধান্ত অবশেষে বাস্তবায়িত হতে চলেছে । 

আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে মোংলা বন্দরে কাস্টম হাউজের নতুন এই দুটি রপ্তানি শুল্কায়ন ও আমদানি শুল্কায়ন গ্রুপ-২ এবং গ্রুপ- ৪ এর শুল্কায়নসহ সকল কার্যক্রম চালু হচ্ছে। এরমধ্য দিয়ে বিগত ২০১১ সালে নৌ পরিবহন মন্ত্রী খুলনার খালিশপুর থেকে মোংলা কাস্টম হাউস মোংলা বন্দরে স্থানান্তরের নির্দেশনা দেয়াসহ সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৫ আগষ্ট মোংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভায় নৌ পরিবহণ মন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়িত হবে। মোংলা কাস্টম কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মোংলা কাস্টম কাস্টম কর্তৃপক্ষ ও বন্দর সূত্র জানায়, ১৯৫০ সালের ১ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক ভাবে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামুদ্রিক বন্দর মোংলা বন্দরে কার্যক্রম শুরু হয়। তখন থেকেই মোংলা কাস্টম হাউস খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত হওয়ায় ব্যবসায়ীদের অনেক সময়ক্ষেপণের পাশাপাশি নানাবিধ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ব্যবসায়ীরা আমদানী-রপ্তানীর স্বার্থে মোংলা কাস্টম হাউস মোংলা বন্দরে রাখার দাবী জানিয়ে আসছিলেন।

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্সেও সভাপতি শেখ লেয়াকত হোসের বলেন, মোংলা বন্দর হতে সড়ক পথে খুলনার খালিশপুর পর্যন্ত দূরত্ব প্রায় ৫৮ কিলোমিটার। মোংলা কাস্টম হাউস খুলনাতে হওয়ায় একজন ব্যবসায়ীকে শুল্কায়নসহ পণ্য খালাসের কাজ কর্মে দুই থেকে তিন দফায় খুলনা-মোংলা যাতায়াত করতে হয়। এতে সময় নষ্টের পাশাপাশি ভোগান্তিতে পড়তে হতো ব্যাবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের এ ভোগান্তী দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে চলে আসলেও দাবি থাকা সত্বেও এখন পর্যন্ত মোংলা কাস্টমের কার্যক্রম মোংলা বন্দরে স্থানান্তর হয়নি। ফলে নিরুপায় হয়ে ভোগান্তীর মধ্যদিয়েই ব্যবসায়ীদের এ বন্দর ব্যবহার করতে হচ্ছে। মোংলা বন্দর থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হলেও যথাস্থানে কাস্টম হাউসের মুল অফিস না থাকায় ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বন্দরের কাজ শেষ করে কাস্টম ক্লিয়ারেন্সের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে খুলনায় যেতে হয়। পরে ওই কাগজ নিয়ে আবার বন্দরে ফিরে এসে সংশ্লিষ্ট অফিসে জমা দিতে হয়।

মোংলা বন্দর সিএন্ডএফ (ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং) এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুলতান আহম্মেদ বলেন, শুধু কার্যালয় মোংলায় আসলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না। শুল্কায়ন কার্যক্রমের সাথে বেশ কিছু কার্যক্রম জড়িত। ব্যাংকিং সেবা, ক্লিয়ারিং এন্ড ফরোয়ার্ডিং (সিএন্ডএফ), শিপিং এজেন্সির কার্যক্রমসহ বেশ কিছু কার্যালয়ও শুল্ক কার্যালয়ের সাথে সাথে মোংলায় স্থানান্তর করতে হবে।

মোংলা কাস্টম হাউসের কমিশনার সুরেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে মোংলা বন্দরের আমদানী ও রপ্তানী পণ্যের কাস্টম সংশ্লিষ্ট যাবতীয কার্যক্রম খুলনা ও মোংলা এ দুইস্থানে সম্পন্ন হয়ে আসছে। পণ্য পরীক্ষা, রামেজ (ঘোষণার অতিরিক্ত কোন পণ্য জাহাজে আছে কিনা তা পরীক্ষা), ইপিজেড পণ্য পরীক্ষা ও শুল্কায়ন, পণ্য খালাস, প্রিভেন্টিভসহ (নিবারকমূলক কার্যক্রম) আনুষঙ্গিক কার্যক্রম মোংলা কাস্টমস হাউসের বন্দর ইউনিট অর্থাৎ মোংলা বন্দরে সম্পন্ন হচ্ছে।

অন্যদিকে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রমের পাশাপাশি আইজিএম (জাহাজে আমদানিকৃত পণ্যের ঘোষণা) দাখিল, আমদানী ও রপ্তানীকৃত পণ্যের শুল্কায়ন, ব্যাংকিং কার্যক্রম ও রাসায়নিক পরীক্ষা সংশিষ্ট কার্যক্রম খুলনার খালিশপুরে অবস্থিত মূল কার্যালয়ে সম্পন্ন হয়ে আসছে। তবে সর্বশেষ মোংলা বন্দর উপদেষ্টা কমিটির ১৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ২০ জানুয়ারী থেকে মোংলা ইউনিট থেকে সকল কর্যক্রম পরিচালিত হবে। এজন্য ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট একাধিক দপ্তরে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর এ কে এম ফারুক হাসান বলেন, আমরা চাই যে কোন মূল্যেই মোংলা বন্দরের সাথেই কাস্টম কার্যালয় স্থানান্তরিত হোক। আপাতত সমস্যার সমাধানের জন্যে আমাদের ট্রাফিক বিভাগের কিছু কক্ষ মোংলা কাস্টমস হাউসের জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তাতেও তাদের পুরো কার্যক্রম সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। মোংলা কাস্টমস হাউসের ভবন সমস্যা সমাধানে যত দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেটি মোংলা বন্দরের জন্যেই মঙ্গল হবে।

(এসএকে/এসপি/জানুয়ারি ০৫, ২০১৯)