নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর সুবর্ণচরে ভোটের দিন রাতে গণধর্ষনের ঘটনার মূল ইন্ধন দাতা সাবেক ইউপি সদস্য ও আওয়ামীলীগ নেতা রুহুল আমিন সহ সকল অপরাধীদের দ্রুত বিচার এবং বাকি অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে সর্বচ্চ শাস্থী মুত্যুদ- কার্যকর করতে সুবর্ণচরে পৃথক পৃথক মানববন্ধন করেছে সুবর্ণ ব্লাড ফাউন্ডেশন ও সুবর্ণচরের সচেতন জনতা।

রবিবার (৬ জানুয়ারি)বেলা ১১ টায় সুবর্ণচর উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয় এতে বক্তব্য রাখেন, সুবর্ণ ব্লাড ফাউন্ডেশনের আহবায়ক এমদাদুল হক ইয়াছিন, সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম, সিনিয়র সদস্য হারুনুর রশিদ, এডভোকেট মোরশেদ আলম মোবারক হোসেন, আজহার উদ্দিন প্রমুখ।

২ ঘন্টা ধরে চলা মানববন্ধনে বক্তারা বলেন ধর্ষক কোন দলের নয়, সে যে দলের হোক তাকে সর্বচ্চ শাস্থী দিতে হবে, রাজনৈইতিক ধন্ধ-বন্ধ করতে হবে, কোন ততবিরে যেন অপরাধীরা পার পেয়ে না যায় সে বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হতেও নির্দেশ করেন তারা।

সুবর্ণচরের সচেতন জনতা ব্যানারে বক্তব্য রাখেন, এনএসটিইউ’র মইনুল ইসলাম, আশরাফ, কবি ফিরোজ শাহ, ইব্রাহিম খলিল, সামসুউদ্দিন মাওলা মাসুদ প্রমূখ । পরে সুবর্ণ ব্লাড ফাউ-েশন চরজব্বর ডিগ্রী কলেজ ও হারিছ চৌধুরী বাজারে মানববন্ধন করে এতে বক্তব্য রাখেন, রিনা খান, মো: নোমান ছিদ্দিকি ও কামরুল ইসলাম জুয়েল ।

এনিয়ে এই মামলায় এজাহারভ’ক্ত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। মানববন্ধনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সামাজিক সংগঠনের প্রধানরা।

ঘটনার মূলহোতা রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলার চর জুবলী ইউনিয়নের মধ্যম বাগ্যা গ্রামের মৃত খুরশিদ আলমের ছেলে। তিনি সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক এবং চর জুবলী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ছিলেন । তাকে সদর উপজেলার ওয়াপদা বাজারে একটি মুরগির খামার থেকে গ্রেফতার করা হয় । এঘটনার বিচারের দাবীতে উত্তাল নোয়াখালী, দোষীদের উপযুক্ত বিচারের দাবীতে প্রতিদিন নোয়াখালী সহ সারাদেশে মানববন্ধন করছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সহ সামাজিক সংগঠনগুলো ।

উল্লেখ্য যে, স্বামী-সন্তানদের বেঁধে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের চরবাগ্যা গ্রামে ৪ সন্তানের জননী এক গৃহবধূকে (৩২) গণধর্ষণের ঘটনায় মামলা হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামী গত সোমবার রাতে বাদী হয়ে ৯ জনের বিরুদ্ধে চরজব্বার থানায় মামলা করেন। পুলিশ রাতেই মামলাটি নথিভুক্ত করে এবং বিভিন্ন যায়গায় অভিযান চালিয়ে ৭জনকে গ্রেফতার করে ।

ওই গৃহবধূ জানান, ভোটের দিন রাতে রোববার রাত ১২টার দিকে স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ও সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক মো. রুহুল আমিনের নেতৃত্বে স্থানীয় সন্ত্রাসী সোহেল, চৌধুরী, সোহেল, বেচু, হেঞ্জু, সোহগসহ ১০ জন তাদের ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তার স্বামীকে মারধর ও ছেলেমেয়েদের বেঁধে রেখে তাকে উঠানে নিয়ে যায়। পরে তারা কাপড় দিয়ে গৃহবধূর মুখ বেঁধে সবাই পালাক্রমে ওই নারীর ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।

মামলার বাদী ওই নারীর স্বামী অভিযোগ করেন, রবিবার দুপুরের দিকে তার স্ত্রী স্থানীয় ভোটকেন্দ্র চরজুবলীর ১৪ নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিতে যান। ধানের শীষে ভোট দিয়ে ফেরার পথে স্থানীয় রুহুল আমিন নামে এক ব্যক্তি তাকে অনুসরণ ও উত্ত্যক্ত করে। তার স্ত্রী এর প্রতিবাদ জানিয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসেন। এ অবস্থায় রুহুল আমিন ও তার লোকজন স্ত্রীর ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। রোববার গভীর রাতে রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ১২-১৫ জনের একদল সন্ত্রাসী দরজা ভেঙে ঘরে ঢুকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে চলে যায়। এতে তার স্ত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার পর পরিবারের অন্য সদস্যদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন। এ সময় স্থানীয় এক গ্রাম্য চিকিৎসককে ডেকে এনে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু গৃহবধূর রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

তবে রুহুল আমিনকে কেন মামলায় আসামি করা হয়নি- সে বিষয়ে বাদী বলেন, 'আমি অশিক্ষিত মানুষ; থানায় গিয়ে ঘটনা খুলে বলেছি। পুলিশকে বলেছি সব লিখে নিতে। তারা কেন রুহুল আমিনের নাম লেখে নাই, বলতে পারি না।'

গণধর্ষষের ঘটনা তদন্তে বুধবার দুপুরে মানবাধিকার কমিশনের তিন সদস্যের একটি কমিটি নোয়াখালী আসে। তারা হাসপাতালে ওই নারীর স্বাক্ষ গ্রহণ করে। কমিটির প্রধান মানবাধিকার কমিশনের পরিচারক আল- মাহমুদ ফয়জুল কবীর জানান, ভুক্তভোগীর স্বাক্ষ ও ডাক্তারি পরীক্ষার প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর তাদের তদন্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দেবেন। রুহুল আমিনকে আসামি না করার বিষয়ে চরজব্বার থানার ওসি মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, 'বাদী যার যার নাম উল্লেখ করেছে, তাদেরই আসামি করা হয়েছে। এখানে পুলিশের কিছুই করার নেই।'

(আইইউএস/এসপি/জানুয়ারি ০৬, ২০১৯)