স্বপন কুার কুন্ডু, ঈশ্বরদী (পাবনা) : বৃটিশ আমলে নির্মিত পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বৃহত্তম ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংসন স্টেশন শত বছরেও আধুনিকায়নের ছোঁয়া লাগেনি। পুরাতন এই স্টেশনটি নানা সমস্যায় জর্জরিত। চারটি প্লাটফর্মের আশপাশে মলমূত্রের র্দূগন্ধে সবসময় অস্বস্তিকর পরিবেশ বিরাজমান। স্টেশনটিকে ঘিরে রয়েছে মাদক, পকেটমার ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম। যাত্রীদের অভিযোগ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা আমলে নেন না। 

সরেজমিন ঈশ্বরদী জংসন স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, প্লাটফর্মের নিচে রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মলমূত্র। যাত্রী বিশ্রামাগারে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। শৌচাগারের দূর্গন্ধে যাত্রীরা বিশ্রামাগার ছেড়ে বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। চারটি প্লাটফর্মে অস্থায়ীভাবে বসানো ছোট ছোট ১২টি দোকান রয়েছে। এছাড়া ফল, ঝালমুড়ি, বাদাম, পাউরুটিসহ বিভিন্ন পসড়া সাজিয়ে বসে আছে হকাররা। একারণে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে হাঁটাচলাও করতে পারে না। যাত্রীদের বসার গোলচত্বরগুলো হকারের মালসামাল ও যাত্রীদের ব্যবসায়ী যাত্রিদের মালাপত্র বোঝাই করে রাখা হয়। পথচারীদের জন্য ওভারব্রিজের বিভিন্ন স্ল্যাবে ফাটল ধরায় হাঁটাচলার সময় নড়বড়ে অবস্থা। প্লাটফর্মের ছাউনির (ছাদ) দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে ছোট-বড় অসংখ্য ছিদ্র ছিল। সামান্য বৃষ্টিতেই প্লাটফর্ম পানিতে ভেসে যায়। তবে অনেক লেখালেখির পর সম্প্রতি ছাউনি মেরামতের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

যাত্রী ও স্থানীয়রা জানান, বর্তমান সরকার রেলওয়ের উন্নয়নের জন্য অনেক পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় এই স্টেশনে সেবার মান না বেড়ে বরং সমস্যা বেড়েই চলছে। শতবছরের পুরাতন জংশন স্টেশনটির এ পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি।

শহরের পিয়ারাখালীর শফিকুল ইসলাম বলেন, তিনি ট্রেনের নিয়মিত যাত্রী। কিন্তু ঈশ্বরদীর পাকশীতে রেলের বিভাগীয় অফিস এখানে থাকা সত্ত্বেও ঈশ্বরদী স্টেশনের যাত্রীদের ভীষণ বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। সচেতন নাগরিক হিসেবে এসব সমস্যা নিয়ে তিনি একাধিকবার রেল কর্মকর্তাদের মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি।

স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী আনরুল হক বলেন, শৌচাগারের দুর্গন্ধে যাত্রী বিশ্রামাগারে বসা যায় না। তাই দুর্গন্ধ থেকে রক্ষার জন্য তাঁর মত অনেক যাত্রী বিশ্রামাগারে না বসে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি শফিকুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, রেলওযে থানা ও রেল নিরাপত্তা বাহিনী থাকা সত্বেও স্টেশনে পকেটমার ও মাদকসেবীদের দৌড়াত্ম রয়েছে। তিনি আরো বলেন,এই স্টেশন দিয়ে পর্শ্ববর্তি নাটোরের লালপুর, পাবনা, আটঘোরিয়াসহ বিভিন্ন দূর দুরান্তের যাত্রীরা চলাচল করেন। কিন্তু আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে বৃহত্তম এই স্টেশনে যাত্রীদের জন্য বরাদ্দকৃত টিকিটের সংখ্যা একবাইে নগণ্য। টিকিট বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী জানিয়ে তিনি বলেন, এই স্টেশনে কলকাতাগামী মৈত্রি এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রি বিরতি থাকলেও যাত্রী পরিবহনের সুযোগ নেই। মৈত্রি এক্সপ্রেসে যাত্রী পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টির জন্যও তিনি দাবী জানিয়েছেন।

রেল সুত্রে জানা যায়, ঈশ্বরদী জংসন স্টেশনের উপর দিয়ে গড়ে এখন প্রতিদিন ৪০টি ট্রেন যাতায়াত করে। এর মধ্যে ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা মৈত্রী এক্সপ্রেস, আন্ত:নগর, মেইল, লোকাল ও মালবাহী ট্রেন রয়েছে। উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল এবং রাজধানী ঢাকাগামী ট্রেনের অন্যতম প্রধান জংসন স্টেশন হিসেবে ঈশ্বরদীর গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

স্টেশন সুপারিন্টেডেন্ট আব্দুল করিম জানান, আগের চেয়ে বর্তমানে স্টেশন প্লাটফর্মের পরিবেশ অনেক ভালো। তবে, ট্রেন প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় নিষেধ থাকা সত্ত্বেও অনেক যাত্রী ট্রেনে মলমূত্র ত্যাগ করায় পরিবেশ বিনষ্ট হচ্ছে। এ কারণেই দুর্ভোগ। প্লাটফর্মে যাত্রী ছাউনি দিয়ে ‘অঝোরে’ বৃষ্টির পানি পড়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা চান্না মন্ডল বলেন, কম গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্টেশন এখন আধুনিক ভাবে নির্মত হচ্ছে। আধুনিকায়নের জন্য এখানে রেলের অনেক জয়াগা-জমিও আছে। অথচ বৃটিশ আমলে নির্মিত অতিগুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশন আধুনিকায়নের প্রয়োজনীতা ও দাবী থাকা সত্বেও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী (ডিএন-২) আরিফুল ইসলাম জানান, ঈশ্বরদী জংসন স্টেশন আধুনিকায়নের প্রস্তাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে প্লাটফর্মের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষার জন্য ছাউনি পুনঃনির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় এই আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ঈশ্বরদী জংশন স্টেশন রিমডেলিং এবং মৈত্রি এক্সপ্রেস ট্রেনে ঈশ্বরদী স্টেশনে যাত্রী উঠানামার সুযোগ সৃষ্টির কথা বারংবার বলেছেন।

(এসকেকে/এসপি/জানুয়ারি ০৮, ২০১৯)