প্রবাস ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে কমমূল্যের সিগারেট এনে কানেকটিকাটে দ্বিগুন মূল্যে বিক্রি করেছে একটি বাংলাদেশি সংঘবদ্ধ চোরাকারবারীর দল।সাম্প্রতি ভ্যানভর্তি প্রচুর পরিমাণ সিগারেট আমদানিকালে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগের পুলিশবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন মশিউর রহমান ওরফে কামাল (৫৩)কে নামের এক বাংলাদেশি। 

জানা যায়, ভার্জিনিয়া কিংবা অন্য অঙ্গরাজ্য থেকে ডিলারশীপ লাইসেন্স ছাড়াই ভ্যানভর্তি কমমূল্যের অবৈধ সিগারেট ও তামাক জাতীয় দ্রব্য কানেকটিকাটে আনার সময় ম্যারিল্যান্ড-পেনসিলভানিয়া মহাসড়কে গত ২১ অক্টোবর ২০১৮ রাজস্ব বিভাগের পুলিশবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন মশিউর রহমান ওরফে কামাল। তিনি কানেকটিকাটের মেরিডেন শহরের বাসিন্দা এবং বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর সাবেক সভাপতি। ভ্যানভর্তি সিগারেটগুলো কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন গ্রোসারি ও গ্যাস ষ্টেশনে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে দ্বিগুন মূল্যে বিক্রির পরিকল্পনা ছিল তার। কানেকটিকাটে একটি সংঘবদ্ধ বাংলাদেশি চোরাকারবারীর দল ও অসৎ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সথ্যতা রয়েছে বলে স্থানীয় কয়েকটি সূত্রে জানা যায়।

উক্ত মহাসড়কে পুলিশ প্রথমে তার ভ্যান আটক করেন।পরে সিগারেট ও তামাক জাতীয় দ্রব্য বেচাকেনা ও পরিবহনের লাইসেন্স দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন।পরে তার বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ এনে তাকে আদালতে পাঠিয়ে দেন। মামলার ডকেট নম্বর: N07M-CR-0297938-S. সেকশন:12-330f(b), 12-286(e)(2) এবং 12-409. গ্রেফতারকৃত মশিউর রহমান ওরফে কামালকে ২৫ হাজার ডলার মূল্যের জামিননামা ধার্য্য করে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। আগামী ২৬ ফেব্রিয়ারি মেরিডেনের আদালত তার হাজিরা দেবার কথা রয়েছে।

অপর একটি সূত্র জানায়, মশিউর রহমান ওরফে কামাল বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর দুই মেয়াদে সভাপতির দায়িত্ব পালন ও স্থানীয় প্রবাসীদের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার এ মুখোশের আড়ালে অবৈধ ব্যবসায় জড়িত থাকার ঘটনা কানেকটিকাট প্রবাসীদের অজানা ছিল। এ ঘটনা জানাজানির পর প্রবাসীদের পার্টি ও আড্ডায় তাকে নিয়েই নানারকম খোশগল্প। অনেকেই মন্তব্য করেছেন কানেকটিকাটে মশিউর রহমান ওরফে কামালের কোন গ্যাস ষ্টেশন বা গ্রোসারির দোকান নেই, তাহলে ঐ ভ্যানভর্তি সিগারেটগুলো কোন ব্যবসায়ীর জন্য বহন করছিলেন তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তার ঘনিষ্ট বন্ধু ও সহযোগী নুরুল আলম নুরু’র বেশ কয়েকটি গ্যাস ষ্টেশন বা গ্রোসারির দোকান রয়েছে কানেকটিকাটে। উক্ত অবৈধ সিগারেটগুলো ঐসব দোকানে বিক্রি করা হত বলে অনেকেই ধারনা করছেন।

উল্লেখ্য, গত ২০১১ সালে কামালের বন্ধু নুরুল আলম নুরু তার দোকানে অবৈধভাবে নীলছবির ভিডিও ও ডিভিডি বিক্রির সময় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিলেন। নুরুল আলম নুরু দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি প্রবাসীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে আড়ালে অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কয়েক বছর আগে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)-এর বর্তমান সভাপতি ময়নুল চৌধুরী হেলালের সঙ্গে তার যৌথ আড়তদারি ব্যবসা ছিল। তামাক জাতীয় দ্রব্যের এ ব্যবসায় টাক্স ও অন্যান্য জটিলতা দেখা দিলে পরে তারা আলাদা হয়ে যান। তাদের ব্যবসার রেষারেষির ফলে বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব কানেকটিকাট (বাক)কে বিভক্ত করার লক্ষ্যে গত ২০১৭ সালে হেলাল-আজম ও কামাল-হুমায়ুন দু’টি প্যানেলে নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। ক্রুটিযুক্ত মনোনয়নপত্র জমা পরায় তৎকালীন নির্বাচনে কমিশনের চেয়ায়ম্যান একতরফা নির্বাচন করেন। পরে কামাল নুরুর সাথে হেলাল গ্রুপ্রের দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছে। ঘটনাটি এক পর্যায়ে আদালত পর্যন্ত গড়ায়। হেলাল-আজম পরিষদের অধিকাংশ সদস্য এবং কানেকটিকাটের প্রায় ৫ হাজার প্রবাসীর চোখে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে হেলাল তার নিজস্ব কিছু লোক নিয়ে রাতের অন্ধকারে নুরু-কামালের সঙ্গে একত্রিত হয়ে আবার বাক এর নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। গত বছর ২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর শুধু সভাপতি পদে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এ ঘটনা নিয়ে প্রবাসীদের ভেতরে রয়েছে বিরুপ প্রতিক্রিয়া।

(বিপি/এসপি/জানুয়ারি ০৯, ২০১৯)