আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : কথিত চিকিৎসককে দিয়ে একর পর এক ভুল চিকিৎসার পর আবারও আগৈলঝাড়ার দুঃস্থ মানবতার হাসপাতালে এক প্রসূতির রক্তের গ্রুপ ভুল নির্নয়সহ অন্যান্য ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ভুল চিকিৎসা প্রদানের অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনেরা। অভিভাবকদের সচেতনতায় নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেচে গেছেন ওই প্রসূতি।

উজিরপু উপজেলার কুড়ুলিয়া গ্রামের হানিফ খলিফার স্ত্রী শারমিন বেগম (২৫) প্রসব বেদনা নিয়ে ৫ জানুয়ারি আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের বাইপাস মোড়ের ফুল্লশ্রী এলাকায় দুঃস্থ মানবতার প্রাইভেট হাসপাতালে আসেন। হাসপাতালের কথিত চিকিৎসক মো. আশ্রাফুল ইসলাম শাওন (ডিএমএফ) তাকে ১০৫/১০৫নং আইডিতে ভর্তি করিয়ে ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশনের জন্য রোগীর স্বজনদের বলেন।

রোগীর স্বজনদের সাথে সিজারিয়ান অপারেশন করতে হাসপাতালের ১১হাজার টাকার মৌখিক চুক্তি হয়। ওই রাতেই সিজারিয়ান অপারেশশনের মাধ্যমে শারমিন দ্বিতীয় পুত্র সন্তানের মা হন। সিজার শেষে তাকে দেয়া হয় ৬নং বেডে। ৮ জানুয়ারি রোগীর রক্তের প্রয়োজনে রক্তের গ্রুপ নির্নয় করা হয় ওই হাসপাতালের প্যাথলজিতে। ওই হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট নয়ন হালদার রোগীর রক্তের গ্রপ নির্নয় করে এ(+) বলে রিপোর্ট দেয়। ওই একই রিপোর্টের সাথে রোগীর কোন পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়াই ওই টেকনোলজিষ্ট এইচআইভি রিপোর্ট (নেগেটিভ)সহ একাধিক রিপোর্টের ফলাফল দেখিয়ে হাতিয়ে নেয় অতিরিক্ত অর্থ।

পরদিন ৯ জানুয়ারি রোগির স্বজনেরা শারমিনের রক্তের গ্রুপ নির্নয় ও রক্তের ক্রস ম্যাচিংয়ের জন্য গৌরনদীর সিকদার ক্লিনিক এ্যান্ড ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারে যান। ওই ডায়াগনিষ্টিক সেন্টারের টেকনোলজিষ্ট বিশ্বজিত গাইন রোগী শারমিনের রক্তের গ্রুপ বি (+) বলে রিপোর্ট দেয়। রোগীর স্বজনেরা তাকে বি(+) গ্রুপের রক্ত প্রদান করে। এরই মধ্যে দুঃস্থ মানবতার হাসপাতাল কর্র্তৃপক্ষের সাথে রোগীর স্বজনদের ঘটনা নিয়ে বাক বিতন্ডা হয়ে যায়। ওই প্রাইভেট হাসপাতালের বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক ভুয়া চিকিৎসককে রেজিষ্ট্রার চিকিৎসক সাজিয়ে রোগীদের অপচিকিৎসা দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, রোগীকে জরিমানা দেয়া ও সংশ্লিষ্ঠ প্রশাসনকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করার একাধিক ঘটনা রয়েছে। ওই হাসপাতালের অনেক ভুয়া চিকিৎসক পুলিশ-সাংবাদিক দেখে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যাবার ঘটনাও ঘটেছে।

এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক উপ-পরিচালক ও দুঃস্থ মানবাতা হাসপাতালের পরিচালক ডা. হিরন্ময় হালদার (অবঃ) ফোনে জানান, ঘটনা নিয়ে রোগী ও তার স্বজনদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কথিত চিকিৎসক আশ্রাফুল কোন রোগী ভর্তি করতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তিনি পারেন না। এজন্য তাকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। ওই হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষা হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন এখানে এই টেষ্ট হয় না। তবে কিভাবে এইচআইভি টেষ্ট রিপোর্ট দেয়া হয়েছে; জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।

হাসপাতালের সার্বিক দ্বায়িত্বে থাকা সুমন ফকির বিষয়টি ভুল দাবি করে পরে খোজ নিয়ে এ প্রতিনিধিকে জানানোর কথা বলে আর কথা বলেন নি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মানোয়ার হোসেন জানান, রোগীর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে অবশ্যই তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন। তার পরেও এভাবে ভুল রিপোর্ট প্রদান ও ভুল চিকিৎসার কারণে আর কোন রোগীর ক্ষতি না হয় এজন্য তিনি ওই হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন। পরিদর্শনে লাইসেন্স নেয়ার সময়ে দেখানো জনবল কাঠামো দেখানো হয়েছে তা না পেলে প্রয়োজনে হাসপাতালটি সীলগালা করে দেয়ার কথাও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ১০, ২০১৯)