শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ২১টি নদী। খরস্রোতা এই নদীগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নদী থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, জীব-বৈচিত্র।  নদীর বুকে আবাদ হচ্ছে, বিভিন্ন ফসল। গড়ে উঠেছে, বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, হাট-বাজার, ক্লাব-সমিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। 

নদীর বুকে এখন আবাদ হচ্ছে, রবি শষ্য থেকে শুরু করে ইরি, বোরো, পাট, গম, ভুট্টা, বেগুন, মরিচসহ বিভিন্ন সবজি। নদীগুলোতে ধু-ধু বালু চর আর ফসলের ক্ষেত। হঠাৎ দেখে কেউ বুঝতে পারবেনা এটি নদী। এক সময় এই নদীগুলোতে সারা বছর স্রোত থাকায় নৌকায় করে জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতো। অনেক নদী দিয়ে পালতোলা নেীকা ও জাহাজ চলতো। কালের আবর্তে নদীগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট হয়ে এখন মরে গেছে। ফলে এই জেলার অনেক জেলে বেকার হয়ে বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করেছে।

এমনি কথা জানালেন, চিরিরবন্দর উপজেলার বিন্নাকুড়ি এলাকার জেলে মজিবুর। তিনি বলেন, ‘আগোত নদীত কুম ছিলো। এখন ডাঙ্গা হই গ্যাইছে। নদীত এখন আবাদ-সাবাদ হছে। বাড়ি-ঘর, দালান গড়ি উঠেছে। মাছ পামো কুনঠে !’

পূণর্ভবা, আত্রাই, ধলেস্বর, গর্ভেশ্বর, ইছামতি, ছোট যমুনা, তুলাই, কাঁকরা, ঢেপাসহ দিনাজপুরের মানচিত্রে প্রবাহমান ২১টি নদী।এক সময় এসব নদীর পানি সেচ দিয়েই খরা মৌসুমে নদীর আশপাশে হতো ফসলের চাষাবাদ। এখন সেচ নয়, নদীর বুকেই হয়েছে ফসলের ক্ষেত। খনন ও সংস্কার না হওয়ায় নদীগুলো তার ঐতিহ্য হারাচ্ছে।

অনেকের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের কতিপয় নেতা ভরাট নদী দখল করে আবাদি জমির ন্যায় সীমানা আইল দিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তির মতো চাষাবাদ করছে। কেউ বা গড়ে তুলেছে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, হাট-বাজার, ক্লাব-সমিতিসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী-মো. ফইজুর রহমান জানায়, দিনাজপুর জেলার সব নদীর হালনাগাদ তথ্য জেলা উধবর্তন কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে। তবে বাজেট স্বল্পতার কারণে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাচ্ছে না বলে তিনি জানিয়েছেন।

হারিয়ে যাওয়া নদীগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে কারো কোন আগ্রহ বা উৎসাহ না থাকলেও নদী দখলকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত ঘটছে অনেক দুর্ঘটনা। বর্ষাকালে নদীতে স্রোত থাকলেও খরা মৌসুমে তা ফসলের বিস্তর্ন মাঠ।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা-উদাসিনতা এবং ভূমিদস্যুদের কড়ালগ্রাসে দিনাজপুরের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব নদী। এতে জলজপ্রাণি জীব-বৈচিত্র এবং পরিবেশের ভারসাম্য হারাচ্ছে। এসব নদী রক্ষায় সরকারের যেমন দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন জনসচেতনতার। এমনটাই তাগিদ দিচ্ছেন পরিবেশবিদরা।

(এসএএস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০১৯)