স্টাফ রিপোর্টার : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের প্রার্থী করা ‘ভুল’ ছিল- জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের এমন মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক নেতা।

গত শনিবার গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকের পর দলটির পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের একটি লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়। তাতে বলা হয়, ‘তাড়াতাড়ি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃত যেসব ভুলত্রুটি সংঘটিত হয়েছে, তা সংশোধন করে ভবিষ্যতের জন্য সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।’

ওই বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা অতীতে জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতির চিন্তাও করিনি। ভবিষ্যতেও পরিষ্কার যে, জামায়াতকে নিয়ে রাজনীতি করব না।’

বিএনপিকে জামায়াত ছাড়তে বলবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটি বলা যেতে পারে। তারা যে ধানের শীষে জামায়াতের ২২ জনকে মনোনয়ন দেবে, সেটি আমরা জানতাম না।’

‘৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে জামায়াতে ইসলামী বিএনপির টিকিট পাবে জানলে ঐক্যফ্রন্টের অংশ হতাম না।’ গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, ‘আমি যদি আগে জানতাম (জামায়াত নেতারা বিএনপির টিকিট পাবে), তবে আমি এর অংশ হতাম না। কিন্তু যদি ওই ব্যক্তিগুলো ভবিষ্যতের সরকারে কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করে, আমি একদিনও থাকব না।’

জামায়াত নিয়ে ড. কামাল হোসেনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে তো ড. কামাল সাহেবের কোনো কানেকশন নাই। জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করার ইচ্ছা নাই- উনি (ড. কামাল) যে কথাটা বলেছেন, উনি কি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন? উনি তো জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করেননি। যেখানে উনি জামায়াতের সঙ্গে রাজনীতি করেন না সেখানে ওনার ওই বক্তব্যটা কতটুকু যুক্তিযুক্ত?’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা সাংবাদিক, একটা কথা লেখার ক্ষমতা নেই। গভর্নমেন্ট আওয়াজ করলে সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ান। আর ড. কামালের একটা সাধারণ কথা, এটার জন্য আপনি আমাকে টেলিফোন করেছেন। আই উইশ ইউ গুড লাক।’

অন্যদিকে জামায়াতের ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, ‘ড. কামাল হোসেনের বক্তব্য স্ব-বিরোধী। উনি নির্বাচনকালীন সময় বাংলাদেশে ছিলেন। মূলত নির্বাচনী মাঠে জামায়াতের কোনো প্রার্থী ছিল না। যারাই প্রার্থী ছিলেন সবাই বিএনপির। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। তারা অনিবন্ধিত দল হিসেবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আছে। আরপিও অনুযায়ী নির্বাচন করতে পারে না জামায়াত। জামায়াত নির্বাচন করেনি। যে সমস্ত ব্যক্তি নির্বাচন করেছে তারা বিএনপির সদস্য হিসেবে নির্বাচন করেছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছে।’

‘ড. কামাল হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত। তার ওই বক্তব্য আমি মনে করি স্ব-বিরোধী। আজকের নির্বাচনের ফলাফল যা হয়েছে এটা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ। একটা রাষ্ট্রীয় চক্রান্তের মাধ্যমে আমাদের হারানো হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আজ যে সমস্ত কারণ নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, আমি মনে করি না এগুলো মূল কারণ। কেন না, আমরা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। আমি মনে করি, এটা পাতানো নির্বাচন, ষড়যন্ত্রের নির্বাচন। এটার বিরুদ্ধে যথাযথ কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মাঠে নামা দরকার।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০১৯)