ছাদেকুল ইসলাম রুবেল, গাইবান্ধা : উৎপাদন এবং বাজার মূল্য কম থাকায় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা হলুদ চাষিরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে হলুদ চাষে। অনাবৃষ্টি ও পচন রোগের কারনে ভালো ফলন না হওয়ায় লোকসানে অন্যন্য চাষাবাদে ঝুঁকছেন চাষিরা। তবে ছোট ছোট আকারে জমি চাষ করলে লাভ হচ্ছে।

বেশী জমিতে শুধু মাত্র হলুদ চাষ করলে লাভ কম হওয়ায় হলুদের ক্ষেতে ঝাল, বেগুন, মিষ্টি আলু, ওল, কচুরমুখিসহ মিশ্র চাষ করলে কিছুটা লাভ হচ্ছে সবমিলিয়ে। সে ক্ষেত্রে হলুদের উৎপাদন কম হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর উপজেলায় ৫ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষাবাদ কম হয়েছে।

জানা গেছে, নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের মধ্যে হলুদ একটি অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য। হলুদ রান্নার কজে যেমন লাগে, তেমনি ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধক, রক্ত পরিস্কারক, হজমকারক, কৃমিনাশক এবং এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। কিন্তু নিত্য প্রয়োজনীয় এ দ্রব্যটির উৎপাদন ভাল না হওয়াই এবং বাজার মূল্য কম থাকায় চাষিরা দিন দিন হলুদ চাষ করতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এ বছর ২২০ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়েছে। গত বছর ২২৫ হেক্টর জমিতে হলুদের চাষ হয়। উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের সেনপুর গ্রামের কৃষক আয়তাল জানিয়েছেন, এ বছর ২ বিঘা জমিতে হলুদের চাষ করেছেন তিনি। হলুদের উৎপাদন অনেক কম।
এরপর আবার অনেক হলুদ পচে নষ্ঠ হয়ে গেছে। ২ বিঘা জমিতে আনুমানিক ৮০ মণ হলুদ হবে। যার বাজার মূল্য প্রায় ৬০ হাজার টাকা। কিন্তু হলুদের বীজ, জমির খাজনা এবং সারসহ আনুসঙ্গিক বিভিন্ন কাজে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে।

লোকসান প্রসঙ্গে আয়তাল বলেন, হলুদ চাষের পাশাপাশি একই জমিতে বেগুন, ঝাল, ওল, মেটে আলু, কচুরমুখিসহ মিশ্র চাষ করায় ফলে কিছু লাভ হতে পারে। শুধুমাত্র হলুদ চাষ করলে এখন আর লাভ হয় না। হলুদ চাষের জন্য এখন ভাল মানের বীজ পাওয়া যায় না। এছাড়া শ্রমিকের মূল্য, সার, কীটনাশকের মূল্য অনেক বেশী।

অপরদিকে বরিশাল ইউনিয়নের সাবদিন গ্রামের চাষী এলেম জানিয়েছেন, ছোট পরিসরে হলুদ চাষ করলে লাভ হয়। তার ৪ কাঠা জমিতে প্রায় ১০ মণ হলুদ হবে। এছাড়া বলরাম গ্রামের জসিম জানিয়েছেন, তিনি ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করে প্রায় ২৫ মণ হলুদ পাবেন বলে আশা করছেন। যার বাজার মূল্য প্রায় ২০ হাজার টাকা। ৯ কাঠা জমিতে হলুদ চাষ করতে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

সদর ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের চাষি মজিবার জানিয়েছেন, এক সময় তাদের অনেক জমিতে হলুদের চাষ হতো। কিন্তু উৎপাদন কম হওয়ায় এবং লাভ বেশী না হওয়ায় এখন আর হলুদের চাষ করেন না। তবে কৃষকরা আরো জানিয়েছেন, ছোট ছোট খন্ড করে হলুদ চাষ করলে লাভ হয়। কিন্তু বৃহৎ পরিসরে চাষাবাদ করলে লোকসান হয় অনেক বেশী।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আজিজুর রহমান জানিয়েছেন, চাহিদার তুলনায় হলুদ এখন অনেক কম উৎপাদন হচ্ছে। হলুদ চাষে পরিশ্রম বেশী, বীজের দাম বেশী। উপজেলায় গত বছর উচু জমিতে ধানের আবাদ বেশি হওয়ায় সেই সমস্ত জমিতে হলুদের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। লাভ কম হওয়ায় হলুদ চাষের জমি কমে যাচ্ছে।

(এসআইআর/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৯)