শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ‘দ্বিতীয় লাইফ লাইন’ মোংলা সমুদ্র বন্দরের পশুর চ্যানেলের আউটারবারে নাব্যতা সংকটের কারণে সোমবার থেকে বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি তেলবাহী একটি বিদেশি জাহাজ। ফলে ওই জাহাজটি ফেয়ারওয়েতে রেখে পণ্য খালাস করায় স্বাভাবিকের তুলনায় অনন্ত তিনগুন বেশি খরচ গুনতে হচ্ছে বন্দর ব্যবহারকারীদের।

এই অবস্থায় বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবী করছেন, মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের প্রবেশ মুখ ও আউটারবার এলাকায় দ্রুত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধির। তবেই অধিক ড্রাফটের বড় বড় জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে, দেশের আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্যের ‘দ্বিতীয় লাইফ লাইন’ মোংলা সমুদ্র বন্দর সচল রাখা সম্ভব হবে। বন্দর লাভবানের পাশপাশি বন্দরে জাহাজের আগমনও বৃদ্ধি পাবে।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ও ষ্টারপাত সি ট্রেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ব্রাজিল থেকে ৪০ হাজার মেট্টিক টন ভোজ্য তেল নিয়ে বিদেশি জাহাজ এম,টি এমআর পেগাসাস সোমবার বিকেলে মোংলা বন্দরের ফেয়ারওয়ে এলাকায় ভিড়েছে।

মঙ্গলবার দিনের প্রথম পূর্ন জোয়ারেও জাহাজটিকে আইটারবার দিয়ে বন্দরের পশুর চ্যানেলে প্রবেশ করানো যায়নি। চ্যানেলের আউটারবার এলাকায় নাব্যতা কম থাকায় ১০ মিটার ড্রাফটের (গভীরতা) এ জাহাজটি বন্দরের মুল পশুর চ্যানেলে প্রবেশ করতে পারেনি। বর্তমানে বন্দর চ্যানেলে সাড়ে ৭ মিটার গভীরতা থাকায় ১০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন ওই জাহাজটিকে বাধ্য হয়েই আউটারবারের বাইরে বঙ্গোপসাগরের ফেয়ারওয়ে রেখে পণ্য খালাস করতে হচ্ছে। এতে অন্তত ৩ গুন বেশি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশীয় বাজারে। জাহাজটি বন্দর চ্যানেলের আউটারবার হয়ে পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়া কিংবা চ্যানেলের অন্য কোন বয়াতে রাখা গেলে খরচ অনেক কম হতো।

প্রথমে মোংলা বন্দরে আসা এই জাহাজটি হতে ১১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন ভোজ্য তেল খালাসের পর বাকী তেল চট্ট্রগাম ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া বন্দরে খালাস হবে। দীর্ঘ ১০ বছরের অধিক সময় ধরে শিপিং এজেন্টসহ বন্দর ব্যবহারকরীরা আউটারবার এলাকায় ড্রেজিংয়ের দাবী জানিয়ে আসছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের আউটারবারের বছরের পর বছর ধরে ক্যাপিটাল ড্রেজিং না হওযায় নব্যতা সংকটের কারণে বড় বড় জাহাজগুলো ফেয়ারওয়েতে রেখেই পণ্য খালাস করতে হচ্ছে।

বন্দর চ্যানেলের আউটারবারের ফেয়ারওয়ে থেকে হিরণপয়েন্ট পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ নটিক্যাল মাইল নৌপথ খনন করা হলে এ সমস্যা সমাধান হতো। এতকরে অধিক ড্রাফটের বড় বড় জাহাজ এ বন্দরে ভিড়তে পারতো। বড় জাহাজ ভিড়তে না পারায় অনেকেই এ বন্দর ব্যবহারে অনিহা প্রকাশ করছেন বলেও জানান এই বন্দর ব্যবহারকারী।

এ বিষয়ে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাষ্টার কমান্ডার মোহাম্মদ দুরুল হুদা বলেন, বর্তমানে সাড়ে ৭ মিটারের গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারছে। আউটারবার এলাকায় দ্রুত ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ড্রেজিং শেষ হলে ১০ মিটারের জাহাজ বন্দরে অনায়াসে ভিড়তে পারবে।

(এসএকে/এসপি/জানুয়ারি ১৫, ২০১৯)