সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : পরকীয়া প্রেমে বাধা দেওয়ায় এক বাক প্রতিবন্ধিকে পানিতে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার রাত ৯টার দিকে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের নাম হাফিজুর রহমান গাজী (৩০)। সে সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামের আনছার আলী গাজীর ছেলে।

নিহতের মা হাসিনা বেগম জানান, ১০ বছর আগে একই উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের জামালউদ্দিনের মেয়ে ঝর্ণা খাতুনের সঙ্গে তার ছেলে বাক প্রতিবন্ধি হাফিজুর রহমানে বিয়ে হয়। বর্তমানে ইমরান হোসেন নামে তাদের আট বছরের একটি ছেলে রয়েছে। সে বরেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।

একই গ্রামের জবেদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ আলী (৪৫) এক বছর আগে থেকে দিন মজুর হিসেবে তাদের বাড়িতে ইট কাটতে আসতো। এ আসা যাওয়ার সূত্র ধরে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে পুত্রবধু ঝর্ণা বেগমের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রসাদ সরকারের উপস্থিতিতে শালিসি বৈঠক হয়েছে। শালিসে মোহাম্মদ আলী কখনো হাফিজের বাড়িতে আসবে না বলে মুচলেকা দিয়েছে। এর জের ধরে মোহাম্মদ আলী তাদের দু’টি গরু বিষ দিয়ে মেরে ফেলে। এরপরও মোহাম্মদ আলী লুকিয়ে ঝর্ণা খাতুনের সঙ্গে দেখা করতো। এক পর্যায়ে ঝর্ণার বাপের বাড়িতে যেয়ে আরো একবার মুচলেকা দেয় মোহাম্মদ আলী।

তিনি আরো জানান, রবিবার রাত ৮টার দিকে ঘরের মধ্যে হাফিজ ও ঝর্ণা নামাজ পড়ছিল। মোহাম্মদ আলীর উপস্থিতি টের পেয়ে হাফিজ লাঠি নিয়ে বাইরে যায়। রাত ৯টার দিকে তিনি (হাসিনা) ও ছোট ছেলে হাবিবুর রহমান পুকুর ঘাটে নেট দিয়ে কাঁকড়া ধরার জন্য যান। এ সময় তারা টর্চের আলোতে পুকুর ঘাটের সিঁড়ির উপর হাফিজের পিঠের উপর চড়ে মোহাম্মদ আলীকে দেখতে পান। এ সময় হাফিজের মুখ পানিতে ডুবিয়ে রাখতে দেখেন তারা। চিৎকার করায় মোহাম্মদ আলী পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন হাফিজকে মৃত বলে পুলিশে খবর দেয়।

কালীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক বিশ্বাস মোজাফফর আহম্মেদ জানান, বাড়ি থেকে ৩০/৪০ হাত দূরে একটি কর্দমাক্তস্থানে হাফিজকে মারপিট করার সময় ধ্বস্তাাধ্বস্তি হয়। সেখানে হাফিজের গামছা পড়ে যায়। পরে হাফিজুরের মাথাসহ মুখমণ্ডল পানিতে কিছুক্ষণ ডুবিয়ে রাখা হয়। ফলে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। মৃতের বুক ও হাতসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পাশের একটি ধান খেত থেকে হাফিজের ব্যবহৃত জুতা পাওয়া গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সোমবার সাতক্ষীরা সদর হাসপতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের মা হাসিনা বেগম বাদী হয়ে সোমবার মোহাম্মদ আলীর নাম উল্লেখ করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

(আরকে/জেএ/জুলাই ২১, ২০১৪)