চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গা শহরের দিগড়ী গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল কাদের। গাছ লাগানো ও পরিচর্যা করায় যার নেশা। নিজের বাড়ি তো বটেই এলাকার বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি খোলা জায়গায় গাছ লাগিয়ে বেড়ান তিনি। নিজের পকেটের টাকায় গাছ লাগানোই তার সব আনন্দ। সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে গাছ লাগিয়ে একটি সবুজ সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন বৃক্ষপ্রেমিক আব্দুল কাদের। এজন্যই স্থানীয়রা তাকে ‘গাছ কাদের’ নামেই চেনে।

নিজের জমি বলতে আছে মাত্র ১২ শতকের একটি টিনেরচালা বাড়ি। গাছ লাগানোর নেশা থেকেই আব্দুল কাদের নিজের বসত ভিটায় কামরাঙ্গা, মালটা, চালতা, তেঁতুল, আঙ্গুরসহ অসংখ্য প্রজাতির ফলজ গাছ লাগিয়েছেন কাদের। আছে শতাধিক প্রজাতির ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছের চারাও। দূর থেকে বাড়িটি দেখলে মনে হবে সবুজে ভরা একটি স্বপ্নের বাড়ি।

বৃক্ষপ্রেমী আব্দুল কাদের জানান, ১০ শতক জমির ওপর গড়ে তোলা বসতভিটা ছাড়া তার আর কোনো জমি নেই। ছোট্ট এই বসত বাড়িটাকেই তিনি সবুজে সবুজে ভরিয়ে তুলেছেন।

নিজের স্ত্রীর গহনা বিক্রি ‘করে মাত্র দুই হাজার টাকা পেয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে গাছ কেনা শুরু করেন আব্দুল কাদের। একে একে বাড়ির পুরো আঙ্গিনায় লাগিয়েছেন অসংখ্য গাছ।

আব্দুল কাদেরের স্বপ্নের বাড়ি দেখতে প্রায় প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ আসেন। এমনই এক দর্শনার্থী কামরুল হাসান জানান, চারিপাশে গাছ-গাছালিতে ভরা কাদেরের এই বসত বাড়ি দেখে তিনি বৃক্ষপ্রেমে নতুনভাবে উৎসাহিত হয়েছেন।
এতটুকু জায়গায় নিজের মাথা গোজার ঠাঁই করার পাশাপাশি যে এভাবে নানান ধরনের গাছ-গাছালি দিয়েও বাড়িটি সাজিয়ে তোলা যায়, এটা রীতিমত বিস্ময় লেগেছে কামরুল হাসান কাছে।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুল কাদের শুধু তার নিজ বসত বাড়িতেই গাছ রোপণ কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখেননি। গ্রামের এলাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, খেলার মাঠ, সড়কের দুই পাশে গাছ লাগিয়ে বেড়ান। এলাকার অনেকে এখন তাকে অনুসরণ করেন। দিনের বেশির ভাগ সময়ই তার কাটে নতুন নতুন গাছ লাগানো আর পরিচর্যার মধ্য দিয়ে।

আব্দুল কাদেরের বাড়ি দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেকেই তাদের নিজেদের বাড়িটিও ফুল-ফলের গাছে সমৃদ্ধ করে তুলছেন। তাদেরই একজন দিগড়ী গ্রামের রহিম মন্ডল। তিনি জানান, আব্দুল কাদের তাদের কাছে আইডল। কাদেরের দেখানো মতে তিনিসহ অনেকে নিজের বাড়ি সবুজে স্বপ্নময় করে তুলছেন।

আব্দুল কাদের জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই কর্মের মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান বলে জানান।

চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাশরুর জানান, আব্দুল কাদেরের এই কর্মযজ্ঞকে আরও এগিয়ে নিতে কৃষি বিভাগ তার পাশে রয়েছে। গাছ রোপন ও পরিচর্যার বিষয়ে তাকে প্রতিনিয়ত প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক গোপাল চন্দ্র জানান, মানুষের মুখে মুখে শুনে তিনি নিজেও বাড়িটি পরিদর্শন করেছেন। একটি বাড়ি যে এতটা সুন্দর ও মনোরম হতে পারে, তা আব্দুল কাদেরের বাড়ি না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। এমন একজন সাদা মনের মানুষকে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

বৃক্ষ রোপণ ও পরিচর্যার ওপর আব্দুল কাদের ২০১০ ও ২০১১ সালে রাজধানীর খামারবাড়ীতে আয়োজিত কৃষি প্রযুক্তি মেলায় একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন। এছাড়া ২০১৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ বিনির্মাণে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে আদর্শ কৃষক হিসেবে আব্দুল কাদেরকে সম্মাননা দেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী।

(টিটি/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০১৯)