মানিক বৈরাগী


জয়নাল আবেদিন হাজারি। ন্যায় সঙ্গত মুজিববাদী বারুদের নাম।ফেনি জেলা শহরের উপকন্ঠে অকৃতদ্বার এই বীর মুক্তিযোদ্ধার এখন নিবৃত বসবাস।

৭০ এর উত্তাল দিনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের মুজিব রণাঙ্গনের বিপ্লবি ভ্যানগার্ড়,বীর মুক্তিযোদ্ধা।মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের হাজারো কর্মী নিয়ে গড়েতুলেছিলেন বিএলফ কমান্ড।

দেশ স্বাধিন হওয়ার পর দেশমাতার টানে পিতা মুজিবের নির্দেশে অস্ত্র সমপর্ণ করেছিলেন।বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দ্বিধা বিভক্তি হয়, বৈজ্ঞানিক আর মুজিববাদী ছাত্রলীগে।বৈজ্ঞানিকের হটকারি রসজনীতিতে কৌশল গত সম্পর্ক রাখতেন স্থানিয় আআওয়ামীলীগ নেতারা।এর মধ্যে খাজা আব্বাস, কোরবান আলী।প্রকাশ্যে বিরোধীতা করতেন, রব, রতন, ভিপি জয়নাল। আব্বাস তাঁকে জেলে পাঠিয়ে ছিলেন। জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পর পিতা মুজিবের সাথে দেখা করতে গেলেন"পিতা মুজিব বললেন তুই অনেক শুকিয়ে গেছিস"উত্তরে বললেন আপনার লোক যদি আমাকে জেলে পাঠায় না সুখিয়ে মোটা তাজা হই কি করে?পিতা হেসে বললেন কারা তুকে সয্য করতে পারেনা জানি, আমিও তুকে নিজের সন্তানের মতো জানি।"

পিতা মুজিব পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে মুষ্টিতে যা উঠেছে বা আছে তা বের করলেন। আর হাতের মুষ্টি টি গুজিয়ে দিলেন হাজারি নানু। "আর বললেন যা কিছু ফল মুল কিনে খাস,দেহ ঠিক রাখতে হবে,দেহ ঠিক রাখতে না পারলে দেশের জন্য কাজ করবি কেমনে।"হাজারি নানু পা ছুঁয়ে সালাম করে ফেনি ফিরলেন পিতা মুজিবের দোয়া নিয়ে। সেই থেকে পিতা মুজিবের আদেশ রক্ষায় বিয়েটিও করলেন না।

৭৫এর পর সারা দেশে গোলাম রব্বান,মহিউদ্দিন চৌধুরি মিলে আর একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, নিজদলের এজিদদের কারনে পারেন নি। জিয়া ক্ষমতায় আসলেন, পরিবার ও নিজের উপর নেমে আসে ঘোর অমানিশ।

১৯৮১ সালে নেত্রী দেশে এলেন, প্রথম হরতালের ডাক দিলেন, শুধু নোয়াখালী, ফেনী, কক্সবাজারের ডুলাহাজারা ছাড়া, আর কোথাও হরতাল পালন হয়নি।

এরশাদ ক্ষমতায় এলেন, জাফর ইমাম হাজারি ঠেকাও কর্মসুচি নিলেন, পারলেন না। অত্যাচারের স্টিম রোলার চালালেন। এরশাদের পতন হলো খালেদা এলেন, ভিপি জয়নাল জাসদ রব ছেড়ে বিএনপি হলেন, হাজারি ঠেকালেন। ভিপি জয়নালের সাথে আরো কত তেলা পোকার পাখা গজালো।

৯৬ সালে ২১ বছর পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলেন, জলিল সাহেব নিয়ে এলেন এক ধনাড্য ব্যাংকার, হাজারি নানু কে ঠেঙ্গায় দিলেন। এলো "সালসা" বাহিনি, ডিসি সুলেমান, সাবেক চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আল শামস, আলবদর এর যুদ্ধাপরাধি সাবেক ইসলামি ছাত্র সংঘ নেতা (বর্তমান শিবির) সে এক রাতেই হাজারি নিধন যজ্ঞে নামলেন। এর পর খালেদা নিজামি জোট সরকার। অবিচল ছিলেন শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ রক্ষা সংগ্রামে।

ওয়ান ইলাবেনের পর আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এলো,অচ্যুত হলো হাজারি নানু। এখনো সেই হাজারি নানু অবহেলিত, বঞ্চিত। অথচ ড.কামাল হোসেন,বঙ্গকীট কাদের সিদ্দিকী, অধ্যাপক আবু সাইদ, সুলতান মুহাম্মদ মনসুরেরা সব সুবিধা পাওয়ার পরও পল্টি মারল। আর হাজারি এখনো অবিচল।
ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে নানু, অশ্রু সংবরণ করা যাচ্ছে না। আর কোন বাক্যের জন্য, কি বোর্ডে আঙ্গুল কাজ করছে না।

আপনাদের ঋণ কখনো আওয়ামীলীগ শোধ করতে পারবে কি না জানিনা।তবুও বলছি পিতা মুজিবের মানস পুত্র হিসাবে নেত্রীর অনুমতি সাপেক্ষে সক্রিয় হোন, শামিম ওসমান এর পাশে দাঁড়ান। খন্দকারি সুশীল, ঘসেটি বেগম দের প্রতিরোধ করুন। চুতিয়াশীল গোয়েবলসিয় মিড়ায়া কোন কালেই হাজারি নানুর পক্ষে ছিল না, ছিল না পিতা মুজিবের পক্ষে।

আরো একটি কথা লিখতে চাই, এই আওয়ামীলীগ এর জন্য যে সব আওয়ামীলীগ পরিবার নিঃস্ব হলো মুক্তিযুদ্ধে, বিভিন্ন সামরিক, স্বৈরাচার, স্বৈরিণী র সময়ে তাদের মুল্যায়নের উপযুক্ত সময় বয়ে যায়। এই সুদিনের বন্যায় যদি আওয়ামীলীগ নিপীড়িত নির্যাতিত নেতা নেত্রী কর্মীদের মুল্যায়ন না হয় তবে আওয়ামীলীগের প্রতিও আর কোন কর্মী ঝুকি নিবেনা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে। দুর্দিনে ভেসে আসবে এ সব উদাহরণ। যেমন পূর্ণিমা, ছাত্রলীগ নেত্রী স্মৃতি কণা, গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীর পরিবারের উমা মুহুরি সহ আরো কত আছে। নিজের কথা নাইবা বললাম। আওয়ামীলীগ, পিতা মুজিব, দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে প্রাণের অধিক ভালোবাসি বলেই আজ এ লেখা।

লেখক :সাবেক ছাত্রনেতা, কবি।