বরগুনা প্রতিনিধি : বরগুনাসহ দক্ষিণ উপকূলর নদ-নদীগুলোতে জোয়ারের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত সপ্তাহে পূর্ণিমার প্রভাবে বরগুনাসহ উপকূলের নদ-নদীতে প্রায় চার মিটার উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয়। আগে যেসব এলাকা উঁচু ও সুরক্ষিত ছিল সেসব এলাকা এবার জোয়ারের পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। অনেক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ উপচেও পানি ঢুকে পড়তে দেখা গেছে।

বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জোয়ার পরিমাপক (মিটারগেজ) শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০০৪ বরগুনার নদ-নদীতে সর্বোচ্চ জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৪৫ মিটার, ২০০৫ সালে ৩ দশমিক ৫১ মিটার, ২০০৬ সালে ২ দশমিক ৯৬ মিটার, ২০০৭ সালে সিডরে জোয়ারের এই উচ্চতা গিয়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ২২ মিটার আর ২০০৯ সালের ঘূর্ণিঝড় আইলায় জলোচ্ছ্বাস হয় ৩ দশমিক ৬৫ মিটার। গত বছরের ১৬ মের ঘূর্ণিঝড় মহাসেনে জোয়ারের তীব্রতা ছিল ৩ দশমিক ৩৬ মিটার। ১৫ জুলাই পূর্ণিমার প্রভাবে উপকূলে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৩ দশমিক ৬২ মিটার। পাউবোর প্রকৌশলীরা জানান, এই অঞ্চলে জোয়ারের স্বাভাবিক মাত্রা হচ্ছে ২ দশমিক ৮৫ মিটার।

পাউবোর বারিপাত শাখায় রক্ষিত উপাত্তে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রেও এমন অস্বাভাবিকতার তথ্য পাওয়া যায়। দেখা যায়, গত বছরের ১৬ মে ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টায় জেলায় বৃষ্টিপাত হয় ৩৩০ মিলিমিটার। এ ছাড়া ২০০৭ সালের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর চার মাসে বৃষ্টিপাত হয় এক হাজার ৮৩৬, ২০০৮ সালে এক হাজার ৯২১, ২০০৯ সালে তা কমে গিয়ে দাঁড়ায় এক হাজার ২৮০ মিলিমিটারে। আবার ২০১০ সালে তা আরও কমে দাঁড়ায় ৯১২ মিলিমিটারে। ২০১১ সালে কিছুটা বেড়ে হয় এক হাজার ৭১২ ও ২০১২ সালে আগের বছরের তুলনায় কমে গিয়ে হয় এক হাজার ৬৬ মিলিমিটার। ২০১৩ সালে তা বেড়ে তিন হাজার ১০ মিলিমিটার হয়।

২০০৭ সালের মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয় জুলাইতে ১৩৫ মিলিমিটার, ২০০৮ সালে সেপ্টেম্বরে ২২৫ মিলিমিটার, ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ২৫০ মিলিমিটার, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ১২৫, ২০১১ সালের আগস্টে ১৯২, ২০১২ সালে জুলাই ও সেপ্টেম্বরে ১২০ ও ২০১৩ সালে মে মাসে ৮৭৯ মিলিমিটার।

কলাপাড়া আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, বৃষ্টি মৌসুমে
বরিশাল অঞ্চলে মাসে অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হচ্ছে ৫১৯ মিলিমিটার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১১ জুলাই থেকে উপকূলে অস্বাভাবিক উচ্চতার জোয়ার হয়। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে দুই থেকে আড়াই মিটার পর্যন্ত উচ্চতার এই জোয়ারে এবার জেলার ১২টি স্থানে প্রায় দুই কিলোমিটার বাঁধ বিলীন হয়। ঘূর্ণিঝড় সিডর, আইলা ও মহাসেনে ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৪০০ কিলোমিটার বাঁধ এখনো মেরামত না হওয়ায় এসব বাঁধ দিয়ে প্রতিনিয়ত জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ছে লোকালয় ও ফসলি জমিতে।

(এমএইচ/জেএ/জুলাই ২১, ২০১৪)