শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী রামসাগর জাতীয় উদ্যানে পর্যটকদের প্রধান আকর্ষণ দূরন্ত ও চঞ্চল চিত্রা হরিণগুলো ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে। আগের মতো আর প্রাণচাঞ্চল্য নেই চিত্রা হরিণগুলো’র। যদিও রামসাগর জাতীয় উদ্যানের তত্ত্বাবধায়ক রোটারিয়ান আব্দুস সালাম তুহিন ব্যক্তি উদ্যোগে  হরিণগুলো’র খাবার পরিবেশন ও যত্ম অব্যাহত রেখেছেন। তারপরও অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভূগছে হরিণগুলো। রামসাগর দীঘিতে আগে যে শাপলা লতা জন্মাতো তা খেতে পছন্দ করতো হরিণগুলো। কিন্তু, সেই শাপলা আর জন্মায় না দীঘিতে। ইঞ্জিন চালিত নৌকার অবাধ বিচরণ ও মাছ শিকারে শাপলা গাছ বিনষ্ট হয়ে গেছে। তাই,বন কর্তৃপক্ষের অপ্রতুল খাবার খেয়ে  বেশকিছু হারিণ দুর্বল হয়ে কঙ্কালসার সাড় হয়ে পড়েছে। 

বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের দেখলেই দলবেধে খাঁচার ওপার থেকে ছুটে আসে হরিণগুলো। খাঁচার ফাঁক দিয়ে মুখ বাড়িয়ে করুণ দৃষ্টিতে খাবার চায়। দর্শনার্থীরা বাদাম-কলাসহ সামান্য যে খাবার মুখে তুলে দেয়, তাই, ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে খায় চিত্রা হরিণগুলো। ক্ষুধার জ্বালায় খাঁচার ভেতরে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে হরিণগুলো ছুঁটো-ছুঁটি করে অসহায়ের মতো। এসব অবলোকন করেই কেউ কেউ বিনোদন পাচ্ছে ! তবে, সচেতন দর্শণার্থীরা হরিণগুলো দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। বলছেন, হরিণগুলো’র পর্যাপ্ত খাবার পরিবেশন ও যত্ম নেয়া প্রয়োজন।

১৯৯১ সালে মাত্র ৬টি রিহ হরিণ নিয়ে দিনাজপুরের ঐতিহ্যবাহী রামসাগর জাতীয় উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানার যাত্রা শুরু হয়। এখানে বর্তমানে ৪৮টি চিত্র হরিণ রয়েছে। প্রায় শতাধিক হরিণের বংশবিস্তার হলেও এখানকার হরিণ রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।এছাড়াও রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’র শুভেচ্ছা স্বরূপ বেশ কিছু হরিণ পাঠানো হয়েছে দেশের বাইরেও। অত্যন্ত আকর্ষণীয় হরিণগুলো দেখছে,প্রতিদিন ভীড় জমাচ্ছে,হাজারো দর্শনার্থী।

৪৮টি হরিণের মধ্যে ১২টি’র বেশি মা হরিণ কিছুদিনের মধ্যেই বাচ্ছা প্রসব করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন,সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আগের মতো আর প্রাণচাঞ্চল্য নেই চিত্রা হরিণগুলো’র। হরিণগুলো অর্ধাহারে-অনাহারে পুষ্টিহীনতায় ভূগছে। দূরন্ত ও চঞ্চল চিত্রা হরিণগুলো ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ায় হতাশা প্রকাশ করছে প্রাণিবিদরা।

রামসাগর দীঘি-জাতীয় উদ্যানের শীতের প্রকোপ থেকে জানালেন, শুধু হরিণগুলো নয়, নীল গাই,অজগর,বানর,শকুন,বাজপাখিসহ মিনি চিড়িয়াখানায় রক্ষিত বন্যপ্রাণিগুলো’র জন্য খারারের বরাদ্দকৃত টাকা অত্যন্ত অপ্রতুল। এক বছরের জন্য সরকার যা বরাদ্দ দেয়, তা দিয়ে ৩ মাসেও খাবার হয়না বন্যপ্রাণিগুলো’র।গত বছর মাত্র ৬ লাখ টাকা খাবারের বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, রামসাগর দীঘিতে আগে যে শাপলা লতা জন্মাতো তা খেতে পছন্দ করতো হরিণগুলো। কিন্তু, সেই শাপলা আর জন্মায় না দীঘিতে। ইঞ্জিন চালিত নৌকার অবাধ বিচরণে শাপলা গাছগুলো বিনষ্ট হয়ে গেছে। রামসাগরের ৬৮ দশমিক ৫৪ একর পাড়ভূমি স্থলভাগ বন বিভাগের আওতায় এবং ৭৭ দশমি ৯০ একর জলভাগ দীঘি নিয়ন্ত্রন করছে জেলা প্রশাসন। দুই বিভাগের দৈত শাসনে এই জাতীয় উদ্যানের কাংখিত উন্নয়ন বাধাগ্রস্থ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রামসাগর জাতীয় উদ্যানের এর তত্ত্বাবধায়ক তুহিন। তার পরও ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি বন্য প্রাণিগুলোর প্রূেয়াজনীয় খাবার দেয়ার চেষ্টা করছেন। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচাতে হরিণের চিরিয়াখানায় ঘর গড়ে দিয়েছেন। যাতে হরিণগুলো আশ্রয় নেয়। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পায়।

চিত্রা হরিণের প্রিয় খাবার শাপলার পাতা ও লতা। বিগত বছরগুলোতে বরাদ্দ কম এলেও রামসাগর দীঘিতে শাপলা চাষ করায় খাদ্যের চাহিদা কিছুটা মেটানো সম্ভব হতো। কিন্ত, এখন দীঘিতে অবাধে ইঞ্জিন চালিত নৌকার বিচরণ ও জেলা প্রশাসন মাছ শিকারের কারণে শাপলা চাষ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে হরিণের খাদ্যসংকট হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক রোটারিয়ান আব্দুস সালাম তুহিন ব্যক্তি উদ্যোগ,লতা-পাতা, আর দর্শনার্থীদের দেওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে আছে প্রাণিগুলো।

বন্যপ্রাণি সুরক্ষায় রামসাগর জাতীয় উদ্যানের এই চিত্রা হরিণগুলো রক্ষণা-বেক্ষণ এবং বংশ বিস্তারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরো সু-দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন এমনটাই মনে করছেন প্রাণিবিদরা।

(এসএএস/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০১৯)