জবি প্রতিনিধি : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) অর্থনীতি বিভাগে বিভিন্ন আর্থিক ব্যায়ের ক্ষেত্রে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীরা দাবি করেন, জবির অর্থনীতি বিভাগের কো-অর্ডিনেটর ও চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন শিক্ষক মিলে বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন।

তথ্য অনুযায়ী, গত ০৯/০৭/২০১৭ইং তারিখে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট এর ৭৪ তম সভায় অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো.হাবিবুর রহমান এক বছর লিয়েন ছুটি নিয়ে কানাডা গমন করে অননুমোদিতভাবে অতিরিক্ত ১ বছর ১মাস ১০দিন(২৭/০১/২০১৬ হতে ০৬/০৩/২০১৭) তারিখ পর্যন্ত অবস্থান করেন। জবির লিয়েন ছুটি নীতিমালার ধারা -৬ অনুসারে লিয়েন ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদান করতে হবে। তবে লিয়েন ছুটি শেষ হওয়ায় এক মাসের মধ্যে কর্মস্থলে যোগদান করতে ব্যর্থ হলে লিয়েন ছুটি প্রাপ্তির তারিখ থেকে তার চাকরি বাতিল বলে গন্য হবে।

এ ছাড়া ও কর্মস্থলে তার এ রুপ অনুপস্থিতি সরকারী কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপীল) বিধিমালা ,১৯৮৫-এর বিধি-২(ডি),ও ৩(সি)অনুসারে ডিজারশনের সামীল এবং বিধি-২(এফ) ও ৩(বি) অনুসারে অসদাচরনের সামীল এবং যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান এর ০৭/০৩/২০১৭ইং তারিখের পূর্বে তার কর্মস্থলে যোগদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায় যে, সিন্ডিকেটের সম্মানিত সদস্য শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিবসহ বেশ কয়েকজন শাস্তি বিধানের প্রস্তাব করেছিল।

একই সিন্ডিকেটে অনিয়মের জন্য জবির প্রত্যেক শিক্ষকের ২০০৫ ও সরকারী কর্মচারী (শৃ্খংলা ও আপিল) বিধিমালা,১৯৮৫ অনুযায়ী চাকুরীচ্যুতিসহ বিভিন্ন শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। অথচ অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান এর গুরুতর অপরাধের জন্য কোন কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়নি এমনকি কোন শাস্তি দেওয়া হয়নি। একই সিন্ডিকেটের এমন ভিন্ন আচরন কেন?

এরই ধারাবাহিকতায় বিভাগে অস্বাভাবিক আচরন করেই যাচ্ছে তারা। সাথে যুক্ত হয়েছে কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোষাধ্যক্ষ পদ থেকে পদচ্যুত সুবিধাবাদী স্বভাবের অধ্যাপক আইনুল ইসলাম। অর্থনীতি বিভাগের ৯ম ব্যাচ (২০১৩-১৪) ২য় বর্ষ ২য় সেমিষ্টারের ২৬/০৯/২০১৬ইং তারিখ অনুষ্ঠিত ইকোনোমেট্রিস-১ কোর্সে ও প্রশ্নপত্র ১ম ও ২য় পরীক্ষকের পান্ডুলিপি (সমীক্ষনকৃত) হারানো যায়। বিশেষ স্বার্থে যথারীতি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি করে বিভাগে রেখে দেওয়া হয়। যদি ও একাডেমিক সভায় ভিসি সঠিক তদন্তের জন্য রেজিষ্টার এবং ভিসি দপ্তরে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

এ বিষয়ে বিভাগীয় চেয়ারম্যান দুইজন জুনিয়র সহকর্মীকে ভিত্তিহীনভাবে দায়ী করেন এবং তাদের চাকরী চলে যাবে ইত্যাদি ভয়ভীতি দেখিয়ে নিজের স্বার্থে নিজ বলয়ে রাখার চেষ্টা করেন। অধ্যাপক ড.হাবিবুর রহমান ও অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম মিলে বিভাগের সান্ধ্যকালীন কোর্সে অরাজকতা ও অনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে।

বিভাগের শিক্ষকদের প্রাধান্য না দিয়ে বিভাগের বাহিরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত নয় এমন ব্যক্তিদের, নিজেদের পরিচিত, বিএনপি সমর্থিত শিক্ষকদের কোর্স বন্টন করে। বিভাগীয় সান্ধ্যকালীন কোর্স কমিটি কিংবা বিভাগীয় একাডেমিক কমিটির অনুমতি ছাড়াই অনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করে যা জবির নীতিমালার পরিপন্থী। উদাহরণস্বরুপ, অর্থনীতি বিভাগে থিসিস গ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের সুপারভাইজার লটারীর মাধ্যমে নির্ধারিত হওয়ার একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত থাকা স্বত্বে ও বিভাগীয় সভাপতি চরম মিথ্যাচার করে বিভাগীয় ছাত্রদের নিজেদের ২/৩ জনের মধ্যে বন্টন করে নেয়। যদি ও বিভাগের শ্রেষ্টতম শিক্ষক, প্রাক্তন ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি রয়েছেন। বাকী সুপারভাইজার হলেন বিভাগীয় অধ্যাপক আজম খান। যিনি ২১ বছরে একটি ও আর্টিকেল লিখতে পারেননি।

বরং নিজের ছাত্রের প্রবন্ধ চুরি করে নিজের নামে দেন বিভাগীয় পরিকল্পনা কমিটিতে। তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করায় তাকে শেষবারের মতো চাকরীর স্বার্থে ক্ষমা করা হয়। বিষয়টি সঠিক ভাবে তদন্ত করলে আসল তথ্য বের হয়ে আসবে। পরবর্তীতে এক বছরে কিভাবে দশটি আর্টিকেল জমা হয় সেটাই সকলের প্রশ্ন? এসব অনিয়ম বিভাগের স্বাভাবিক কর্মকান্ডে ব্যঘাত ঘটাচ্ছে। উল্লেখিত তিন ব্যাক্তি তাদের অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য তাদের স্বেচ্ছাচারিতা দিন দিন বেড়েই চলচ্ছে।

বিভাগীয় শিক্ষকদের মধ্যে অনেকের ধারনা অজানা কারনে সিন্ডিকেট থেকে দায়মুক্তি পাওয়া তাদের বেপরোয়া আচরণ বেড়েই চলছে। চরম সুবিধাবাদি ও মিথ্যাচারের কারনে অনেকের ধারনা ভিসি সঠিক তথ্য পাচ্ছেন না। এ ব্যাপারে সিন্ডিকেট কর্র্তৃক জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং তদন্ত চলাকালীন অনিয়মের কারনে বিভাগীয় কর্মকান্ড স্থগিত রাখা উচিত বলে সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করেন।

(এবি/এসপি/জানুয়ারি ২৩, ২০১৯)