চৌধুরী আ.হান্নান : বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টি আই বি) এর উপর চড়াও হয়েছে বেসরকরি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তারা। টি আই বি একটি স্বনামধন্য অলাভজনক প্রতিষ্ঠান এবং যথেষ্ট সুনামের অধিকারী। দুর্নীতির বিরুদ্ধে এ প্রতিষ্ঠানটি বিরামহীন কাজ করে চলেছে।

তাঁদের কল্যানে জনগণ সঠিক তথ্য জানতে পারছে। বিগত দিনে অনেক দুর্নীতির তথ্য অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে প্রকাশ করে ক্ষমতাবানদের রোষানলে পড়েছে তাঁরা। তবু দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ও দৃর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে টি আই বি এর যাত্রা থেমে নেই।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যেক্তাগন টি আই বি এর প্রতিবেদনে ক্ষুব্দ হবেন-এটা স্বাভাবিক। কারণ অপকর্মের কথা প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রতিবেদন তারা চ্যালেঞ্জ করেছেন। চ্যালেঞ্জ করলেই তো সত্যটা মিথ্যা হয়ে যাবে না। চ্যালেঞ্জ তো করতেই হবে-বড় গলা করে চেচাঁতে হবে। তা না করলে তো অপরাধ স্বীকার করা হয়ে যাবে। চোরের মার গলা যত বড়ই হোক প্রতিবেশীরা ঠিকই বুঝে গেছে চুরিটা আসলে তার ছেলেই করেছে।

টি আই বি এর প্রতিবেদনে উত্থাপিত তথ্য হয়ত শতভাগ সঠিক নয় কিন্তু কিছু তো সত্য। টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট বিক্রয়, পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্ন বলে দেয়া, বিভিন্ন স্তরে ঘুষ লেনদেন ইত্যাদি তো মানুষের মুখে মুখে। যারা দুর্নীতি করে প্রমান রেখে করে না। ঘুষের লেনদেন প্রমান করা যায় না।

বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো অলাভজনক প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় অনুমোদন পেলেও তা মুনাফা ভিত্তিক পরিচালনা করা হচ্ছে। তাতেও তেমন দোষের কিছু ছিল না কিন্তু তাই বলে সার্টিফিকেট বিক্রয়? উচ্চ শিক্ষাকে এইভাবে বানিজ্যে পরিনত করা? তবে সুবর্ন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ধনাঢ্য লোকের অলস, আরামপ্রিয়, শ্রমবিমুখ, অকর্মন্য গোছের সন্তানদের। তারা অনায়াসে ইচ্ছেমত টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট ক্রয় করে উচ্চ শিক্ষিত(?) সেজে বসতে পারে। এই জাতীয় উচ্চ শিক্ষিত(?) ব্যক্তি যখন কোন প্রতিষ্ঠানের নীতি নির্ধারক পদ বাগিয়ে নিবেন, তখন কী হবে? যা হবার তাই হবে। ভুগবে দেশ জনগণ।

দেশের উচ্চ শিক্ষা দেখ ভালের দায়িত্বে যে সরকারী প্রতিষ্ঠানের উপর অর্পিত, সেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরী কমিশনের বিপুল সংখ্যক কর্মকর্তারাই কোন উচ্চশিক্ষা নেই। এই মর্মে গত ৪ জুলাই এর দৈনিক সমকালে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ধারনা জন্মে যে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো নিয়ন্ত্রনে দক্ষ জনবল ইউ জি সি এর নেই। দেশের ৭৯ টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গুলোই দুর্নীতির সাথে জড়িত নয়। যে গুলো ব্যাপক দুর্নীতিগ্রস্ত তা নিয়ন্ত্রন করার সদিচ্ছা থাকলে কঠোরভাবে দমন করার জন্য শিক্ষামন্ত্রনালয়ই যথেষ্ট।

কিন্তু হায় একি ! কথাবার্তা শুনে মনে হয় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দুর্নীতিবাজদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তা না হলে তিনি কেমন করে বলেন- বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে টি আই বি এর প্রতিবেদন অপরিপক্ক, অসত্য ও অসম্পূর্ণ ? তাৎক্ষনিকভাবে তিনি এমন কথা কীভাবে বলতে পারলেন? তবে কী তিনি কোন পক্ষকে খুশি করতে চেয়েছেন? তিনি দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দিতে পারেন তা আমরা বিশ্বাস করি না । শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ একজন সজ্জন ও ক্লিন ইমেজের মানুষ। তাঁর সময়কালে শিক্ষাক্ষেত্রে প্রচুর সাফল্য রয়েছে।

অপকর্ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে মাননীয় মিক্ষামন্ত্রীর কিসের এত দ্বন্দ-ভয়? তিনি কেবল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জবাবদিহি করবেন। ভয় পাওয়ার কারন থাকলে শেখ হাসিনাকে পাবেন। কিন্তু শেখ হাসিনা কী কখনো তাকে দুর্নীতির পক্ষে কাজ করতে বলবেন? কখনোই না। শেখ হাসিনা সব হারানো একজন মানুষ। সম্পদের পাহাড় গড়ার লোভ তার নেই। তাঁর লক্ষ্য কেবল বাংলাদেশের কল্যান।

অপরদিকে বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেই। অতিদ্রুত ক্ষমতার যাওয়ার জন্য মরন চেষ্টার পর ব্যর্থ হয়ে দেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি এখন পথহারা-লক্ষ্যহীন। একচ্ছত্র ক্ষমতা নিয়ে ভাল কাজ করে এগিয়ে যাওয়ার সময় এখনই। বলতে গেলে এখন কোন প্রতিপক্ষ নেই। কল্যানমূলক কাজ করে-দুর্নীতি বিরোধী অবস্থান নিয়ে মানুষের মন জয় করার জন্য হাসিনা সরকারের সামনে অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এ সুযোগ গ্রহণ করতে না পারলে পরাজিত পক্ষের কথিত ‘অবৈধ’ সরকারকে একদিন দেশের মানুষ ব্যর্থ সরকার বলবে।

পরিশেষে টি আই বি এর প্রতিবেদন ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তাদের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কী ভ’মিকা পালন করেন তা দেখার অপেক্ষায় রইলাম।

লেখক : সাবেক ব্যাংকার