রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন ভোটের মাধ্যমে হবে কি হবে না এই বিতর্কের জেরে টানা তিন ঘন্টা অবরুদ্ধ ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন নেতা।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদরে শনিবার অবরুদ্ধ অবস্থায় বারবার তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করা হয়। এ সময় তৃণমূলের নেতা কর্মীরা ভোটের পক্ষে বিপক্ষে উত্তেজনাকর স্লোগান দেন।

তবে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মেহেদি রাসেল বিকাল সাড়ে ৪ টায় জানান আলোচানায় সমঝোতা হওয়ায় কিছুক্ষণ আগে অবরোধকারীরা তাদের অবরোধ তুলে নিয়েছে। সাতক্ষীরা থেকে আসা জেলা পর্যায়ের নেতারা এখন স্স্থু ও স্বাভাবিক রয়েছেন। তারা নিরাপদে জেলা শহরে ফিরেও গেছেন। তিনি জানান রোববার বেলা ১১ টায় তালা শিল্পকলা একাডেমিতে প্রার্থী মনোনয়নে ভোটাভুটি হবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয়েছে।

প্রার্থী মনোনয়নের জন্য পূর্ব ঘোষনা অনুযায়ী শনিবার বেলা ১১ টায় তালা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে দলের প্রতিনিধি সম্মেলন বসে। ২৯১ জনের এই প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম। এতে প্রধান ও বিশেষ অতিথি হিসাবে যোগ দেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মুনসুর আহমেদ ও মো. নজরুল ইসলাম। প্রার্থী মনোনয়নে দলের গঠনতন্ত্র ও কেন্দ্রিয় নির্দেশনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এ সময় বলা হয় হয় একজন না হয় সর্বোচ্চ তিনজনের নাম কেন্দ্রে পাঠাতে হবে। সভাসূত্রে জানা গেছে চেয়ারম্যান পদে আগ্রহী প্রার্থীর সংখ্যা ১৫ জন। ফলে নেতাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এ সময় আওয়ামী লীগের একপক্ষ দাবি করে ভোটাভুটির। আরেকপক্ষের দাবি সমঝোতা ভিত্তিক নাম প্রেরণ। ভোটাভুটি প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে পড়েন দলের উপজেলা সভাপতি শেখ নুরুল ইসলাম ও সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার ও তাদের সমর্থকরা। তুমুল হট্টগোলের মধ্যে ভন্ডুল হয়ে যায় প্রতিনিধি সম্মেলন। উপস্থিত কর্মকর্তারা সাতক্ষীরা পৌঁছে কেন্দ্রের সাথে আলোচনা করে এ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দেবেন জানিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন।

দলীয় নেতাকর্মীরা জানান দুপুর ১ টার দিকে নেতারা তাদের গাড়ি নিয়ে বাইরে আসতেই শিল্পকলা একাডেমির সামনে অবরোধের মুখে পড়েন। রাস্তায় গাছের গুঁড়ি কাঠের খন্ড ও ইটপাটকেল জড়ো করে তাদের প্রতিরোধ করা হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সেখানে পৌঁছালেও তারা কোনো ভূমিকা নেওয়া থেকে বিরত থাকে। চারদিকে তখন মুহুর্মুহু স্লোগান উঠতে থাকে। এতে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ থেকে তারা গাড়ির মধ্য থেকে বাইরে যোগাযোগ রক্ষা করেন। কিন্তু কেউই তাদের উদ্ধারে তেমন কোনো আগ্রহ দেখাননি। পরে তারা রোববার ভোটাভুটি হবে এই সিদ্ধান্ত দিলে বিকাল ৪ টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

তালা উপজেলা চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার জানান চেয়ারম্যান পদে ১৫ টি, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯টি ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৬ টি আবেদন পড়েছে। নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে আমরা ভোটের দাবি করেছিলাম। এই দাবির প্রেক্ষিতে জেলা নেতারা অনাকাংখিত ঘটনার মুখে পড়েন। এখন এর শান্তিপূর্ন মীমাংসা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মদ জানান, রোববার সকাল ১১টায় ভোটাভুটির মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা হবে এমন আশ্বাসের ভিত্তিতে তারা ঘেরাও মুক্ত হয়েছেন।

(আরকে/এসপি/জানুয়ারি ২৬, ২০১৯)