স্টাফ রিপোর্টার : আর মাত্র দুই দিন। তারপর শুরু ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি। আর এ মাস মানেই বইমেলা। গোটা মাসজুড়ে বাংলা একাডেমি চত্বর ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে জমবে কবি-লেখক, বইপ্রেমী ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আনাগোনা। মেলায় শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির নানা বিষয়ে বিনিময় হবে ভাবের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে পর্দা উঠবে মাসব্যাপী এ মহাযজ্ঞের।

গতকাল সরেজমিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, বইমেলা নিয়ে বাংলা একাডেমির প্রস্তুতি প্রায় শেষ। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্যাভিলিয়ন ও স্টল নির্মাণের কাজ চলছে জোরেশোরে। একাডেমি প্রাঙ্গণ আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাঠ কাটা, জোড়া দেওয়া, রংতুলির আঁচড় আর পেরেক-হাতুড়ির টুংটাং আওয়াজ। আজ ও কাল বুধবারের মধ্যে শেষ করতে হবে অবকাঠামো নির্মাণ।

বাংলা একাডেমি বলছে, এবার মেলার আয়োজনে নতুনত্ব থাকছে। এবার পুরো গ্রন্থমেলাকে প্রথমবারের মতো গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় আনা হচ্ছে। অন্যবারের চেয়ে এবার প্রতিটা স্টলের মাঝখানে দূরত্বও বাড়ানো হয়েছে। এতে করে আগত ক্রেতা-দর্শনীর্থীরা অনায়াসে ঘোরাফেরা করতে পারবেন।

সব মিলিয়ে এবার একটি দারুণ গ্রন্থমেলা উপহার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এ প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এবার পুরো মেলা জিপিএসে আনা হচ্ছে। স্টলগুলো রাখা হচ্ছে নির্দিষ্ট দূরত্বে। মেলার দর্শনার্থীরা যেন বই কেনার পাশাপশি এখানে একটু স্বস্তিতে বসতে পারে, একটু ঘোরাফেরা করতে পারে সে ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।’

এদিকে মেলার পূর্বক্ষণে ব্যস্ত সময় যাচ্ছে প্রকাশকদের। বই মুদ্রণের পাশাপাশি স্টল নির্মাণ, কর্মী নিয়োগ, যথাসময়ে মেলায় বই আনতে চেষ্টা করছেন তারা। এবার সিরিয়াস সাহিত্যের পাশাপাশি শিশুতোষ বই ও রাজনৈতিক বই প্রাধান্য পাবে বলেও জানাচ্ছেন প্রকাশকরা।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণে কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হলেই ঝকঝকে বই শোভা পাবে এসব স্টলে। শিশুদের জন্য মেলায় থাকছে বিশেষ কর্নার।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক জালাল আহমেদ বলেন, ‘এবারের গ্রন্থমেলার বিশেষত্ব ও গুরুত্ব তুলে ধরতে লেখক পরিচয় মঞ্চ রাখা হচ্ছে। লেখকরা তাদের বই দর্শনার্থীদের মধ্যে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সুযোগ পাবেন এই মঞ্চে।’

‘এ ছাড়া দর্শণার্থীদের জন্য থাকবে প্রশ্নোত্তর পর্ব। পাঠকরা প্রকাশিত ভালো বইগুলো নিয়ে জানতে পারবেন। পরে কবি-লেখকদের সরাসরি প্রশ্ন করতে পারবেন।’

মেলায় আগত দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য এবার বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলেও জানান বাংলা একাডেমির এই কর্মকর্তা।

গত বছরের মতো এবারো বইমেলা বিকাল ৩টায় শুরু হবে। চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। রাত সাড়ে ৮টার পর মেলায় প্রবেশ করা যাবে না।

এবার মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে দুই ক্যাটাগরিতে প্যাভিলিয়ন থাকছে ২৩টি। আর শিশু কর্নারে শিশুবিষয়ক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ৭৫টি ইউনিট থাকছে।

এবারের বইমেলায় প্যাভিলিয়ন পাওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো আগামী, অবসর, অনুপম, ঐতিহ্য, শোভা প্রকাশ, কথা প্রকাশ, অনন্যা, অন্বেষা, পাঠক সমাবেশ, অন্য প্রকাশ, সময়, মাওলা ব্রাদার্স, কাকলী প্রকাশনী, বাংলা প্রকাশ, উৎস প্রকাশনী, অনিন্দ্য প্রকাশ, নালন্দা, জার্নিম্যান বুকস, প্রথমা, পার্ল পাবলিকেশন্স, ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ ও পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ মিলিয়ে মোট ৬৯০টি ইউনিট বরাদ্দ পেয়েছে ৪৫০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ১৯টি নতুন প্রতিষ্ঠান প্রথমবারের মতো মেলায় অংশ নিচ্ছে।

(ওএস/অ/জানুয়ারি ২৯,২০১৯)