স্পোর্টস ডেস্ক: চট্টগ্রাম পর্ব শেষে আবার বিপিএল ফিরেছে রাজধানী ঢাকায়। সাত প্রতিযোগী দল তাদের ক্রিকেটার, কোচ, বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, আয়োজক, ব্যবস্থাপক, প্রচার-সম্প্রচারের সঙ্গে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ ও মিডিয়া- সবাই বন্দর নগরী থেকে রাজধানী ঢাকায় এসে পড়েছেন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই।

গতকাল বিকেলে ও রাতে খেলা চার দল (ঢাকা ডায়নামাইটস, চিটাগং ভাইকিংস, সিলেট সিক্সার্স ও রাজশাহী কিংস) রাজধানীতে এসে পৌঁছেছে আজ সকালে। আর বাকি তিন দল (রংপুর রাইডার্স, খুলনা টাইটানস, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস) গতকাল বিকেলেই চট্টগ্রাম ছেড়েছিল। মোদ্দা কথা, দেশের ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট সবাই আবার রাজধানীমুখী।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই ক্রিকেট পাড়ায় হঠাৎ গুঞ্জন নিউজিল্যান্ড সফরে নাকি শেষমুহূর্তে দলভুক্ত হচ্ছেন ইমরুল কায়েস। কারো কারো দাবী বিসিবি বিগ বস নাজমুল হাসান পাপনই এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে বোর্ড সভাপতি সত্যিই ইমরুলের বিষয়ে উৎসাহী কি-না? বিপিএলে টিম বাংলাদেশের ওপেনারদের অনুজ্জ্বল পারফরম্যান্স দেখে বিকল্প চিন্তা করছেন কি-না এবং সে চিন্তায় ইমরুলের নাম আছে কি নেই?- তা জানতেই আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাগোনিউজের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বিসিবির ক্রিকেট অপারেশনস কমিটির চেয়ারম্যান এবং প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের সঙ্গে।

আকরাম খান অকপটে স্বীকার করেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। শুধু মিডিয়ার ফোন পাচ্ছি। পাপন ভাই সত্যিই ইমরুলকে দলে নিতে বলেছেন কি-না তা আমি জানি না।’

প্রায় একই সুর প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নুরও। চিটাগং ভাইকিংসের চিফ টেকনিক্যাল এডভাইজারের দায়িত্বে থাকা নান্নু রাজধানীতে ফিরেছেন আজ সকালেই। বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে ঘুম থেকে উঠে তিনিও মিডিয়ার ফোনে ব্যতিব্যস্ত।

জাগোনিউজের পক্ষ থেকে যখন প্রশ্ন করা হলো, ইমরুলকে নাকি ১৬তম সদস্য হিসেবে নিউজিল্যান্ডগামী স্কোয়াডে নেয়া হচ্ছে? নান্নুর জবাব, ‘না এরকম তো কিছু চূড়ান্ত হয়নি। বোর্ড সভাপতি হিসেবে পাপন ভাই চাইলে অবশ্য সেটা বিশেষ বিবেচনায় থাকে এবং তা বাস্তবায়িতও হয়। কাজেই পাপন ভাই যদি মনে করেন তাহলে ইমরুল কায়েস নিউজিল্যান্ডগামী দলে আসতেই পারে। তবে এই ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত পাপন ভাইয়ের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি।’

তাহলে কী ইমরুল কায়েসের ১৬ নম্বর সদস্য হিসেবে দলে আসার খবরটা ভিত্তিহীন? জাগোনিউজের এমন প্রশ্নের জবাবে তখন নান্নুর একটু অন্যরকম সুর। অনেক কথার ভীড়ে প্রধান নির্বাচক বোঝাতে চাইলেন, ‘শুধু ইমরুল নয়, দুটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এক, অনেকদিন পর (২০১৪ সালের পর) আমরা তিন ম্যাচের সিরিজ খেলতে নামবো নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। বিশ্বকাপের আগে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলা মানেই বাড়তি শারীরিক ধকল। কাজেই আমরা চেষ্টা করবো দলে বেশি করে পেস বোলার নিতে। যাতে খেলোয়াড় অদলবদল করে খেলানো যায়।’

‘স্কোয়াডে অন্তত পাঁচজন পেসার রাখার কথা ভাবা হচ্ছে বিশেষ করে। তাই নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট দলে একজন বাড়তি পেসারের কথা ভাবা হচ্ছে জোরেশোরে। তার পাশাপাশি টপঅর্ডারে বা ওপরের দিকে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান নেয়ার চিন্তাও রয়েছে। সেই জায়গায় ইমরুল কায়েসের নাম এক নম্বরে। কাজেই টেস্ট দলে ইমরুল কায়েস বাড়তি সংযোজনে থাকতেই পারে।’

কিন্তু বলা হচ্ছে ইমরুলকে ওয়ানডে দলেই ১৬ নম্বর সদস্য হিসেবে নেয়ার কথা। সে বিষয়ে কী বলবেন? এবার আরেকটু রক্ষণাত্মক প্রধান নির্বাচক। তার সংলাপ, ‘হেড কোচ স্টিভ রোডস কক্সবাজার থেকে ফিরুক, তারপর বলতে পারবো। তিনি যুব দলের সিরিজ দেখতে এখন কক্সবাজারে রয়েছেন।’

এদিকে একটি বিশ্বস্ত সুত্রের খবর তামিম ইকবাল ছাড়া লিটন, সৌম্য এবং জাতীয় দলে অন্যান্য ওপেনারদের বিপিএলে রান করতে না দেখে চিন্তায় পড়ে গেছেন কোচ স্টিভ রোডস এবং এটা তিনি তার ঘনিষ্ঠ মহলে আলাপও করেছেন। ভাবা হচ্ছে স্টিভ রোডসই ইমরুল কায়েসের ব্যাপারে বোর্ড প্রেসিডেন্টের কাছে কিছু বলে থাকতে পারেন।

শেষ কথা হলো, নিউজিল্যান্ড সফরে প্রথম ১৫ জনের দলে জায়গা না হলেও বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সম্ভাব্য তালিকায় নাম রয়েছে ইমরুল কায়েসের। জাগোনিউজের কাছে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তা অকপটে স্বীকার করেছেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু।

‘ইমরুল আমাদের বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় রয়েছে। তাই বিশ্বকাপের আগে তাকেও নিউজিল্যান্ডের সিমিং কন্ডিশনে পরখ করে নেয়া হতেই পারে’- শেষ কথা নান্নুর।

শুরুতে সরাসরি বা আনুষ্ঠানিকভাবে ইমরুলের অন্তর্ভুক্তির কথা স্বীকার না করলেও প্রধান নির্বাচকের ওপরের কথোপকথনে একটা সত্য কিন্তু বেরিয়ে এসেছে ইমরুল বিশেষ বিবেচনায় আছেন। সেটা লিটন, সৌম্যদের বিপিএলের অফফর্মের কারণে বিকল্প হিসেবেই হোক কিংবা ইংলিশ কন্ডিশনে তুলনামূলক ধীরস্থির ও পরিপাটি ব্যাটিংশৈলীর একজন বাড়তি ওপেনারের কথা ভেবেই হোক- বিশ্বকাপ বিবেচনায় আছেন ইমরুলও।

কাজেই শেষ পর্যন্ত যদি বাঁহাতি টপঅর্ডার ইমরুল যদি নিউজিল্যান্ড সফরের ওয়ানডে বা টেস্ট দলে ঢুকেও যান- তাতে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।

(ওএস/পিএস/জানুয়ারী ৩১, ২০১৮)