স্টাফ রিপোর্টার : যৌন নিপীড়ন বন্ধে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে উল্লেখ করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, ‘অনেক নারী বাড়িতে, রাস্তাঘাটে, যানবাহনে ও হাটবাজারে নানাভাবে যৌন হয়রানির স্বীকার হলেও প্রতিবাদ করছেন না। অনেকে যৌন নিপীড়নের সংজ্ঞাও জানেন না। আইনে শুধু শাস্তি নয়, তুলে ধরা হবে নিপীড়নের সংজ্ঞাও। এটি বাস্তবায়নে সবার ভূমিকা পালন করতে হবে। এ আইনের খসড়া তৈরির পর বড় পরিসরে সেমিনারে তা তুলে ধরা হবে।’

রাজধানীর তোপখানা রোডে সিরডাপ মিলনায়তনে বুধবার ‘যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন কাজী রিয়াজুল হক। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা (ইউএনডিপি) এ সভা আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী কাজী রিয়াজুল হক আরও বলেন, ‘নারীদের বিচরণ অবাধ হলেও তারা বিভিন্ন স্থানে যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন। যৌন নিপীড়ন বন্ধে সরকারি নানাবিধ উদ্যোগ থাকলেও তা কার্যক্রর ভূমিকা রাখছে না। এ কারণে নতুন একটি আইন তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সবার সুনির্দিষ্ট মতামত প্রয়োজন রয়েছে। আপনাদের পরামর্শের ওপর ভিত্তি করে আইনে তা তুলে ধরা হবে।’

কোন কোন আচরণের মাধ্যমে নারীরা যৌন হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন নতুন আইনে তা তুলে ধরার সুপারিশ করেন আলোচকরা। পাশাপাশি যে সব স্থানে নারীদের বিচরণ সে সব স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করারও দাবি জানিয়েছেন তারা।

সভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘নারীদের যে সব স্থানে বিচরণ রয়েছে সেসব স্থান নিরাপদ থাকতে হবে। কিন্তু তারা কীভাবে নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছেন অনেক নারীর সে সর্ম্পকে ধারণা নেই। আইনে সে সব বিষয় তুলে ধরতে হবে। তবেই মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে।’

তিনি বলেন, ‘অনেক শিক্ষকের মধ্যে নারী নির্যাতনের প্রবণতা রয়েছে। আইন হলে তা ক্রমান্বয়ে বন্ধ হয়ে যাবে। এ আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য যে সব নির্দেশনা দেয়া হবে তা বাস্তবায়নে সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’

সভায় শ্রম ও কর্মস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান বলেন, ‘নারী শ্রমিকদের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেশি যৌন হয়রানির স্বীকার হয়ে থাকেন। যারা নারী শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা সবাই পুরুষ। ব্যবস্থাপনা পদগুলোতে নারীদের বসানো হয় না। নারীদের সে সব পদে সুযোগ দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘নারীরা নানাভাবে যৌন হয়রানি হলেও তারা কাউকে অভিযোগ না করে নীরব থাকে। কেউ যৌন হয়রানির শিকার হলে তা প্রমাণ করাটা আরও বেশি লজ্জাজনক, এ কারণে অনেকে অভিযোগ করতে চান না।’ তাই এ প্রক্রিয়া সম্মানজনক করার দাবি জানান তিনি।

আফরোজা খান আরও বলেন, ‘শুধু আইন তৈরি নয়, এটি বাস্তবায়নে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। কারা এটি মনিটরিং করবে সেসব বিষয় সুস্পষ্ট করতে হবে।’ পাশাপাশি পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের এ সর্ম্পকে ধারণা দেয়া প্রয়োজন বলেও তাগিদ দেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন- নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার, সরকারি বিভিন্ন দফতর-সংস্থার প্রতিনিধি, নারী উন্নয়নমূলক দেশি-বিদেশি বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধি, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, শিক্ষার্থী প্রমুখ।

(ওএস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯)