নীলফামারী প্রতিনিধি : নীলফামারীর সৈয়দপুরে নিজের গবাদীপশুর খামারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী নজরুল ইসলাম (৫৫) ও তার স্ত্রী-সালমা বেগম (৪৫) খামারের কেয়ারটেকারের হাতে খুন হয়েছেন ।

মঙ্গলবার (৫ই ফেব্রুয়ারি) বিকেলের দিকে আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে খুনের কথা স্বীকার করেছেন খামারের কেয়ারটেকার আবদুর রাজ্জাক (৪০)।

পরে মঙ্গলবার রাতে সৈয়দপুর থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন নীলফামারীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অশোক কুমার পাল। এ সময় সৈয়দপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজাহান পাশা, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সৈয়দপুর থানার ওসি (তদন্ত) আতাউর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ‘ঘটনার পর থেকে আবদুর রাজ্জাক রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার সে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলে দুপুরের দিকে তাকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে খুনের কথা স্বীকার করেছে। বিকেলে আবদুর রাজ্জাককে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহণের জন্য নীলফামারী জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম জাহিদ হাসানের আদালতে হাজির করা হয়।গ্রেফতারকৃত আবদুর রাজ্জাক নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাবুরহাট গ্রামের খয়রাত হোসেনের ছেলে বলে পুলিশ পুলিশ সুত্রে জানা গেছে।

সৈয়দপুর থানার ওসি শাহজাহান পাশা জানান, গত ২৭শে জানুয়ারি ভোর রাতে সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়নের বালুবাড়ি গ্রামে নিজের খামার বাড়িতে খামার মালিক শেখ নজরুল ইসলাম ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগমকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ সময় আহত হন ওই খামারের কেয়ারটেকার আবদুর রাজ্জাক। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে দম্পতির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা মর্গে পাঠায়। এবং আহত কেয়ারটেকারকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে কেয়ারটেকার আবদুর রাজ্জাকসহ চারজনের নাম উল্লেখ করে ঘটনার পরের দিন সৈয়দপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত দম্পতির ছেলে বড় ছেলে সোহেল রানা।

এদিকে আদালতের কাছে কেয়ারটেকার তার জবাববন্দীতে বলনে, ভেড়া ও গরুর এই খামার প্রতিষ্ঠার পর হতে সে এই খামারে কর্মরত। খামারের মালিক ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং তাদরে ছেলেরা তার সঙ্গে কারনে-অকারনে খারাপ আচরন করতো। ঠিত মতো বেতন প্রদান করতো না। রোগে আক্রান্ত হয়ে খামাররে কোন পশু মারা গেলে তার দাম বেতনের অংশ থেকে কেটে নেয়া হতো। ছুটি চেয়ে বাড়ি যেতে চাইলে তারা ছুটিও দিতেনা না। ঘটনার দিন ২৬শে জানুয়ারি রাতে বাড়ি যাবার জন্য খামারের মালিক নজরুল ইসলামের কাছে ৭দিন ছুটি চাইলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী সালমা বেগম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে তাকে লাঠি দিয়ে আঘাত করলেও মুখ বুঝে সহ্য করেন রাজ্জাক ।

ওই রাতে খামারের একটি ভেড়া অসুস্থ হয়ে চিৎকার করতে থাকায় সে খামারের মালিকের ঘরে গিয়ে তাদের ডাক দেয়। এ সময় খামারের মালিকের স্ত্রী সালমা বেগম ঘুম থেকে উঠে এসে তাকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে লাঠি দিয়ে আঘাত করলে সে আর নিজেকে সংযত করতে না পেয়ে তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাকে আঘাত করেন। তার চিৎকারে ঘর হতে বের হয়ে ছুটে আসনে খামার মালিক নজরুল ইসলাম। তিনি নজরুল তার স্ত্রীকে রক্তাত্ব দেখতে পেয়ে তার হাতে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেয়ারটেকার রাজ্জাককে আঘাত করলে সে পাল্টা আঘাত করে তাকেও হত্যা করেন।

(এস/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৯)